রবিবাসরীয় প্রবন্ধ ১...
মাদার পশ্চিমবঙ্গ
তাহলে আমার কী করা উচিত ছিল, ধম্মাবতার? মেয়ে-জামাইকে কোলে বসিয়ে নাড়ু খাওয়ানো উচিত ছিল? যে মেয়ে আমাদের পছন্দের তোয়াক্কা করল না, তার পছন্দকে মাথায় তুলে ধেইধেই নাচা উচিত ছিল? এই যে আমার দিকে আদালত ভর্তি লোক এমন করে তাকাচ্ছে যেন আমি একটা শয়তান মা, একটা হারামি জননী, এরা বুকে হাত দিয়ে বলুক তো, এরা মুসলমানের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেবে? বা যদি নিজে মুসলমান হয়, হিন্দু ছোকরার হাতে মেয়েকে তুলে দেবে? মেয়ে বিকেলবেলা দৌড়ে দৌড়ে এসে বিনুনি দুলিয়ে বলবে, বাবা বাবা, আমি না, একটা না, ভালবাসাবাসি করেছি, আর ছেলেটা না, বেজাতের। আর বাপ-মা অমনি লাফিয়ে উঠে হাততালি দিয়ে খাজা কাঁটালের কোয়া সাজিয়ে হবু কুটুমের বাড়ি তত্ত্ব নিয়ে মাজা দুলিয়ে রওনা হবে? হ্যাঁ, সব সময় হিন্দু-মুসলমান বেজাত হতে হবে তার মানে নেই। ভদ্দরলোক আর ছোটলোক কি আলাদা জাত নয়? যে পাকা ছাদের নীচে শোয় আর যে ঝুপড়িতে শোয়, তারা আলাদা জাত নয়? আলবাত আলাদা জাত। গরিব হচ্ছে সবচেয়ে নোংরা জাত। আর তার চেয়েও নোংরা হচ্ছে সেই ছোকরা বা ছুকরি, যে বাপ-মা-কাকা-জেঠার কথা না শুনে নিজের মতে বিয়ে করতে লাফায়। শুধু শরীরের নোংরা চাহিদাগুলোর কথা শুনে, শুধু গন্ধওলা জায়গাগুলোয় গরমি চেগেছে বলে, কাউকে না কাউকে জাপটে গলায় ঝুলে পড়ে। ধম্মাবতার, জিজ্ঞেস করুন এই লোকগুলোকে, এই মেয়েছেলেদের, যারা চোখ গোল গোল করে মুখে হাত চাপছে যেন এ-সব শুনে পেট থেকে ফুলশয্যের ককানি উঠে আসবে কত বার এরা নিজেদের মেয়েকে বলেছে, খবদ্দার প্রেম করবে না? কত বার এরা মেয়ের কাছে কলেজের ছেলেবন্ধু দেখা করতে এলে পর্দা সরিয়ে সরিয়ে এই চিরুনি নিতে ওই বালিশ নিতে সেই সন্ধে দেওয়ার নাম করে সেই ঘরে সেঁধিয়েছে? কত বার এরা মেয়েকে কোচিঙে ইস্কুলে গানের মাস্টারের বাড়িতে মিলিটারি গার্ড দিয়ে নিয়ে গেছে? কত বার মেয়ের বাংলা বইয়ের ফাঁকে চিরকুট পেলে তাকে ঠ্যাঙার বাড়ি মারতে মারতে কালশিটেয় চান করিয়েছে? কত বার মেয়ের মাসতুতো দাদার সঙ্গেও সন্ধেবেলা ছাদে একলা থাকতে দেয়নি? কত বার এরা বাপ আর মেয়েকে অবধি এক ঘরে শুতে দেয়নি? হাজার বার। কোটি বার। এবং এরা ঠিক করেছে। ঠিইইক করেছে। কারণ এটা বাংলা। এটা ভারত। এই দেশ সভ্য দেশ। ভদ্দো দেশ। আমরা আমেরিকার মতো ছোট জামাকাপড় পরিয়ে মেয়েকে বেশ্যা বানাই না। আমরা টিভি-তে করিনা কাপুর-কে বুক দুলিয়ে পাছা দুলিয়ে যা করতে দেখি, নিজের মেয়েকে তা করতে দিই না। মেয়েকে কেউ সিনেমায় নামাতে এলে আমরা, যারা ঠিক ঠিক ভদ্দরলোক, সেই দালালকে লাথি মেরে তাড়াই। মেয়ে ছোট প্যান্ট পরলে, খাটো জামা পরে আঁটো বুক লকলকালে, বঁটি নিয়ে তেড়ে যাই। কারণ, আমাদের সবার ওপরে আছে নিজেদের সন্মান। সঅন্মাআন। ধম্মাবতার, এই দেশে আমরা এই আদোশ্শে মানুষ হই, সের’ম হলে না খেয়ে মরবে, দেওয়ালের চুনে ঠোঁট ঘষটাবে, ফলিডল গিলবে, তবু সন্মান খোয়াবে না। এটা আমার বংশের আমদানি আচাভুয়া মূল্যবোধ নয় ধম্মাবতার, এই বাংলার সমস্ত মা-বাপের এটা মত। সমস্ত। যে আমাদের মতো অজ গাঁয়ে থাকে, তারও। যে নিজের উঁচু ফেলাটে ডেলি লাল-নীল কিলিপ এঁটে ফুল-ফুল পাজামা শুকোতে দেয়, তারও।
ছবি: সুমন চৌধুরী
ধম্মাবতার, কালকে লক-আপে সারা রাত আমার ডুকরে কান্না শুনে অন্যরা নালিশ করেছিল। হ্যাঁ, মেয়েটার ঝুলে থাকা গলাটার কথা মনে পড়ে আমার বুকটা পোড়াচ্ছিল। ছোট্ট বাঁদরিটা, জানেন, খেলতে গিয়ে ফিরতে দেরি করলে আমি আকুলি-বিকুলি পুকুরে জাল ফেলাতাম, ভাবতাম বুঝি ডুবে মোলো। যাগ্গে, চোখের জলে ওর বদমাইশি ধুয়ে যায় না। আরে, মেয়েকে দুধ খাইয়েছি আমি, মাসের চার দিন যখন শরীল খারাপ হয়েছে পোথম রহস্য বুঝিয়েছি আমি, নিজে না খেয়ে তার ভাত তুলে রেখেছি আমি, আর সে আমার তাঁবে থাকবে না? কখনও হয়? বিয়ে নিশ্চয়ই হবে, সে বিয়ে আমি দেব, আমি তার সোয়ামি পছন্দ করব। আমি যাকে জামাই বলে মানতে পারব না, আমার মেয়ে তাকে সব্বস্ব বলে মানবে কেন? আমি বলছি লোকটা খারাপ, আর সে তড়পাচ্ছে আমি এরই মুখ শুঁকব? এত আস্পদ্দা হয় কোত্থেকে? জীবনটা পোসেনজিতের বই নয়। ও সব গল্পেই হয়, গরিব-বড়লোকে, বন্ধুতে-শত্তুরে, বাম্মনে-চাঁড়ালে ভাব-ভালবাসা হল, আর বাপ-মা পোথমে ত্যান্ডাই-ম্যান্ডাই করলেও শেষে ভেড়ুয়া বনে গিয়ে নিকিরির ছেলের নোংরা চেটোয় আদরের মেয়ের হাত তুলে দিল। শেষবেশ কি শোওয়ার ঘরে সিনেমাকে ঢোকাব? বিয়ে কি যে-সে জিনিস? বিয়ে মানে রাত্তিরবেলা জুড়ে দুজনের লদ্কালদ্কি নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে দুটো, শুধু দুটো কেন, অনেকগুনো পরিবারের রুচি, বিচার। পুজো, আচ্চা। চলন। বলন। বিয়ে হয় বর আর কনের নয়, ফ্যামেলির সঙ্গে ফ্যামেলির। উলটে, বেয়াই আর বেয়ানকে বুকে টানতে গিয়ে যদি তাদের গন্ধে আমার গা গুলিয়ে ওঠে, কী করে মানব, আমার মেয়ে বছর পোয়ালে এদের বাড়ির পো পেটে ধরবে? সাধে তো আমাদের দেশে সম্বন্ধ করে বিয়ের পোথা চালু হয়নি। আমরা তো ন্যাংটা সায়েব নই। আমাদের দেশ সমস্ত শুভকাজে মা-বাপ-দাদু-ঠাকমা’র মত নিয়ে, আশিব্বাদ নিয়ে তবে চলে। কেন? কারণ গুরুজনদের পাকা চুলের দাম আছে, তাঁদের ভাল-চাওয়ার দাম আছে। সেই সমস্কারের, যুগ যুগ চলতি রীতি-নীতির কোনও মানেমুন্ডু নেই?
কী? ভুল বলছি কোনও? কোনও একটাও কথা বলছি যা বাংলার শয়ে শয়ে মানুষ মনে করে না? আপনার আদালত কী শেখায়, ধম্মাবতার? শেখায়, সবার ওপরে সমাজ। তুমি তোমার ইচ্ছে মতো যা খুশি করে বেড়াতে পারো না, তোমায় সমাজের কথা মাথায় রেখে চলতে হবে। ঠিক তো? একটু জল খাব ধম্মাবতার। না, কাচের গেলাসে নয়, বেইমান পাগলিটার এই এক উদ্ভুট্টি বায়না ছিল, কাচের গেলাস ছাড়া জল খাবে না। একবার ভেঙে ফেলেছিল বলে ক’ঘা দিলাম, তাপ্পর সারা দিন এক ফোঁট্টা জল খেল না, ঘাড় শক্ত করে রইল। ও গেলাস আর মুখে তুলতে পারব না। যাগ্গে, সমাজ না থাকলে তো আমরা নেড়ি কুত্তা, ভাদ্দোর মাসের গিঁট লাগালাম আর যে দিকে সাধ ছুটে পালালাম। সেই সমাজের কাছে পরিবারের, বংশের মাথা ধুলোয় লুটিয়ে দেয় যে কাজ, তা কক্ষনও ভাল হতে পারে? জীবন তো একার পুঁটলি নয়, এর সুতোয় সুতোয় গাঁ-গুষ্টি জড়িয়ে। সেখানে আমার স্বাথ্থোপ্পর মেয়ে শুধু নিজের সুখ দেখল। শুধ্ধু নিজের লোভ। যারা বুকে করে মানুষ করল, তাদের জীবন নরক করে, অকৃতজ্ঞ নষ্ট মাগি গিয়ে একটা কোথাকার ওঁচা ছেলেকে আপন বলে ফাল পাড়তে লাগল। তা হলে কে নিষ্ঠুর পিশাচির মতো ব্যাভারটা করল, ধম্মাবতার? এই কি আমার মেয়ের মনুষ্যত্ব? যে, বাপ-মা লজ্জায় মাথা হেঁট করে সারা জীবন চোরের মতো ঘুরে বেড়াবে, আর সে পালঙে শুয়ে আমোদ মারাবে? আমার শ্বশুর পছন্দ করতেন না বলে আমি জীবনে নাইটি পরিনি। শাশুড়ি মারা যাওয়ার আগে যখন গলা ঘড়ঘড় হচ্ছে, আমি হাত পেতে বলেছি এখানে গয়ের ফেলুন। এই ভাবে আমরা গুরুজনকে সেবা করতে, মান্য করতে, শিখেছি, শিখিয়েছি। সে শিক্ষা কি তা হলে ভুল? তবে কি যারা বাড়ির গুরুজনদের অপমান করে, সমাজ-সংসারকে অপমান করে, নিজের দেশের ধারাকে অপমান করে, তারা সব ভাল ভাল লোক? আর আমরা খারাপ?
নারগিস-এর বই আছে ধম্মাবতার, যেখানে, নারগিস নিজের হাতে তার ডাকাত ছেলেকে মেরে ফেলেছিল। কেন? কারণ সেই ছেলে গাঁয়ে এসে নষ্টামি করছিল। খুন করেছিল। তাতে নারগিসের সন্মান নষ্ট হচ্ছিল। তার দেওয়া শিক্ষার অপমান হচ্ছিল। তখন সে নিজের ছেলেকে গুলি করল। সেই বই দেখে আমরা চোখের জল ফেলেছিলাম। মায়ের মতন মা, আমার শাশুড়ি বলেছিল। যে, নিজের ছেলেকে মেরে ফ্যালে, তবু তাকে নোংরা কাজ করতে দেয় না। বা, বুক দিয়ে ভালবেসেও যে উচিত-শাস্তি দিতে এক বারের জন্যেও থমকায় না। এইটাই কি ঠিক শাসন নয়, ধম্মাবতার? দেশের সঙ্গে যে বেইমানি করে, সে নিজের ভাই হলেও সাচ্চা দেশপ্রেমী তাকে মেরে ফেলবে এই তো আমরা শিখেছি? মিরজাফরের ভাই যদি মিরজাফরকে কুপিয়ে কাটত, আজ ইতিহাসে আমরা তাকে পোনাম করতাম কি না? যে জজসাহেব নিজের ছেলেকেও ফাঁসির অর্ডার দিতে পারেন, তিনিই সবচেয়ে সৎ বিচারক এই তো আমরা মেনেছি? আমি কী করেছি ধম্মাবতার, যা এর চেয়ে আলাদা? আর, আমি তো সেধে করিনি, আমাকে তো মাগিটা বাধ্য করল। কেন তুই শয়তানিটা এমন করলি রে, কেন এত মারধর বোঝানো-সোঝানোর পর এই পাপকাজ করলি মা? আমার হাতে তো আর চারা ছিল না! এক দানে তো মুন্ডুটা আলাদা হয়নি, বড্ড লাগছিল কি মা? যাগ্গে, না না, ধরতে হবে না, সামলে নেব, আবার ভাববেন না আফশোস করছি। শুনেছি ভারতেই কত জায়গায় বাপ-মা ইলোপ-করা মেয়েকে ধরে খুন করে। পুঁতে দেয়। গোটা গ্রাম নাকি তাদের সাপোট করে। আমি তাদের সেলাম করি। এই হচ্ছে সত্যিকারের ন্যায়-কে ভালবাসা। উচিত-কে ভালবাসা। যদি বলি, চোরকে শূলে দেওয়া উচিত, আমার নিজের ছেলের বেলায়ও তা-ই বলব। যদি বলি ঢলানি মেয়েছেলের কুঁচকিতে খুন্তির ছ্যাঁকা দেওয়া উচিত, নিজের মেয়ের বেলাতেও বলব, ভাল করে পোড়া। তখন নিজের স্বাথ্থে উলটো গাইব না। আপনি আমায় ফাঁসি দিন, কিন্তু লিখে রাখুন, এক দিন আমাদের গ্রামে আমার নামে রাস্তা হবে, আমার নামে পরব হবে, যেমন সতীমায়ের নামে হয়। যে, এই মা ছিল এমন মা, যে চোখের জল চোখে রেখে ন্যায়ধম্ম পালন করেছিল। এই আদালতে যারা আমায় ড্যাবা ড্যাবা করে দেখতে এয়েচে, আমি বাজি ফেলছি, ছুপে ছুপে এরা সব্বাই আমার হ্যাঁ-য়ে হ্যাঁ দিচ্ছে, আমার সব কথা তাদেরও বুকের কথা। হ্যাঁ, আমি দাঁড়িয়ে বলতে পেরেছি, কোপাও, মারো, মেরে ফ্যালো, তা হয়তো তারা পারবে না। কারণ, তাদের মুরোদ নেই। জেলের ভয় পায়। কিংবা এমনিই মেনিমুখো। এরা বিয়ের সময় মেয়ের মুখোদশ্শন করব না বলে বাড়ি বসে থাকে, কিন্তু দু’বচ্ছর পর নাতি হলে তাকে কোলে নিয়ে ছুংকুমুনু বলে নাচায়, অপমানের গা-জ্বালা ভুলে মারে। আমি এদের চেয়ে মেরুদাঁড়া খাড়া করা মানুষ। যা ঠিক বুঝেছি, তা করে দেখানোর ধক আমার আছে। এই কি আমার অপরাধ?

অথবা, জজসায়েবের সঙ্গে দেখা করে ব্যক্তিগত বয়ান, বুধবার, ৯.৪৫
ধরুন, আপনারা যা চাইছেন, তা-ই যদি হত, যদি আমি কিচ্ছু না বলতাম, যদি আমার মেয়ে আমাদের চোখের সামনে ড্যাং ড্যাং করতে করতে আমাদের মাথা মুড়িয়ে দিয়ে একটা জানোয়ারের সঙ্গে সংসার করত, তা হলে আমি কী করে আমার লোকটার সঙ্গে ঘর করতাম ধম্মাবতার? ভেবে দেখেছেন? যে লোকটা আমার ওপর ভরসা করে তার সন্তানদের মানুষ করতে দিল, যে লোকটা আমার ওপর নিভ্ভর করল যাতে আমি তার মেয়ে দুটোকে ঠিক শিক্ষা দিই, সভ্য ভদ্দো করে বড় করে তুলি, আমি তার চোখে কী করে চোখ রাখতাম? সন্তান যাতে খেতে-পরতে পায়, তা দেখার দায়িত্ব তার বাপের। আর সন্তান যাতে পরিবারের সব আচার-বিচার মেনে বড় হয়ে ওঠে, রীতিনীতিগুলো সাপটে নেয়, তা দেখার দায়িত্ব কার? মায়ের। মা’রই তো কাজ মেয়ের মধ্যে লজ্জা-হায়া ঢুকিয়ে দেওয়া? মেয়ে হঠাৎ ছেলেদের দলের সামনে পড়লে বুকে বইখাতা চেপে মাথা নিচু করে হনহন করে মোড়টা পেরিয়ে যাবে, এ কথা মা না বললে কে বলবে? কে শেখাবে, দুপদুপ করে চলবে না, নরম আর নিচু হয়ে থাকবে, বার বার আঁচল ঠিক করবে, জানবে, যে মাগি নিল্লজ্জ বেহায়া, তার বাঁচা আর না-বাঁচা সমান? যে এই সব শিক্ষা দেবে, সে তো আমি। মা। আমি তো সেই কাজে একদম ফেল হয়ে গেলাম ধম্মাবতার। একেবারে চুড়োন্ত হেরে গেলাম। আমি কী করে সে ভার মাথায় নিয়ে বাঁচতাম? আমায় তো উঠতে-বসতে লোকটা পোড়া কয়লা ছুড়ত, শুধু তোমার জন্যে আমাদের বাড়িতে আজ এত বড় কলঙ্ক লেগে গেল? শুধু তুমি একটা বাজে মা বলে আমার মেয়েটা এমন করে আমাদের পাঁকে চোবাল? শুধু তুমি শিক্ষা দিতে পারলে না বলে আমি আর হাটে-বাজারে মুখ দেখাতে পারি না? শুধু তুমি একটা খারাপ বউ বলে, অপদাত্থ বলে, এই গোটা বংশকে নিয়ে আজ সবাই হাসাহাসি করছে? সবাই বলত। আমার দেওর, ননদ, জ্ঞাতি-গুষ্টি, আমার বড় মেয়ে। তখন আমি কী করতাম? আমার তো তখন হেঁটে কাঁটা ওপরে কাঁটা হয়ে যেত? আমার তো যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েই যেত জজবাবু? আপনি আর নতুন কী করবেন? আমার কত্তা আমায় আর সহ্য করতে পারত না। বলত, দূর হয়ে যা মাগি। রাতেদিনে ওই ঘরটায় ওই দাওয়াটায় ওই জানলাটায় ওই দরজাটায় আমি শুধু কাটারির কোপ খেয়ে খেয়ে ঘুরে বেড়াতাম, কোপের পর কোপ, ফের কোপ। হাজার কাঁদলেও, চব্বিশ ঘণ্টা বুক চাপড়ালেও, ক্ষমা পেতাম না। মুক্তি পেতাম না। তার চেয়ে, এই যে কোপ মারতে বলেছি, মেয়েটাকে শেষ করে দিতে বলেছি, আমার টুঁটিটা হয়তো ফাঁসির দড়িতে যাবে, কিন্তু আমার মায়ের কত্তব্যটায় কোনও দাগ পড়বে না। তা হলে আমি সেই নারগিসের মতো হলাম না, জজসাহেব? সবচেয়ে ভাল মা? পশ্চিম বাংলার সবচেয়ে মহান, সাহসী, ইজ্জতওয়ালা মা? হলাম না?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.