মাওবাদীরা এখন খাস কলকাতার কিছু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও সদস্য নিয়োগ করছে বলে পুলিশের দাবি। কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা-কর্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি ধৃত ‘মাওবাদী কলকাতা সিটি কমিটি’র সম্পাদক অভিষেক মুখোপাধ্যায় তথা অরণ্যকে জেরা করে তাঁরা এ ব্যাপারে ‘নিশ্চিত’ তথ্য পেয়েছেন। মহানগরের কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়াদের মধ্যে মাওবাদী আদর্শ প্রচার করা হচ্ছে, সেখান থেকে ‘অ্যাকশন স্কোয়াড সদস্য’-ও তারা জোগাড় করছে বলে গোয়েন্দা-সূত্রের খবর।
মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, মাওবাদীরা পরিচয় লুকিয়ে, ভুইফোড় এক-একটা ছাত্র সংগঠনের নামে শহরের কিছু কলেজে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। অভিষেকের বয়ানেও তার প্রমাণ মিলেছে বলে গোয়েন্দামহলের দাবি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই প্রাক্তন ছাত্রকে গত ১১ সেপ্টেম্বর রাতে টালায় গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর সঙ্গে ধরা পড়েন সিটি কমিটির সদস্য সুনীল মণ্ডল ওরফে নীল, শহরের ছাত্রসমাজে প্রভাব বিস্তারের কাজে গত তিন বছর যাবৎ যার ‘ভূমিকা’র কথা পুলিশের আদৌ জানা ছিল না।
এই দু’জনের কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, বিভিন্ন অতি-বাম বা সদ্য গজিয়ে ওঠা সংগঠনের মাধ্যমে ছাত্রদের মধ্যে মাওবাদী মতাদর্শ প্রচারের কথা স্বীকার করেছেন দু’জনেই। এবং মাওবাদীদের ‘সদস্য নিয়োগক্ষেত্র’ হিসেবে অভিষেক মূলত শহরের পাঁচটি কলেজের কথা বলেছেন, যার দু’টো সম্পর্কে পুলিশ পুরোপুরি অন্ধকারে ছিল। দু’টোই বেহালার কলেজ। স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের এক অফিসারের কথায়, “বেহালায় এক দশক ধরে মাওবাদীরা তলেতলে ভিত বানিয়েছে। তেলুগু দীপকের মতো বড় মাওবাদী নেতাও তাই ওখানে দু’বছর ঘর ভাড়া নিয়ে নির্বিঘ্নে থাকতে পেরেছিলেন।”
পুলিশের দাবি, অভিষেক উল্লিখিত পাঁচটি কলেজ ছাড়াও কলকাতার আরও একটা কলেজ ও দু’টো সমর্থনের ভিত বাড়াতে এখন তাদের কৌশল হল, প্রথমে সমাজ ও পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে ছাত্রদের সচেতন করা, পত্রপত্রিকা প্রকাশে উৎসাহ দেওয়া। পরের ধাপে বিভিন্ন রাজনৈতিক দাবিকে সামনে আনা। গোয়েন্দাদের বক্তব্য: দু’বছর আগে এক কলেজে যথেষ্ট প্রভাব বাড়াতে পেরেছিল মাওবাদীরা। পরে বাম ছাত্র সংগঠনের বাধায় তখনকার মতো রণে ভঙ্গ দেয়।
কী বলছে ছাত্র সংগঠনগুলো?
এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক শতরূপ ঘোষ বলেন, “আমরা শহরের আসন্ন বিপদটা বেশ বুঝতে পারছি। কিন্তু সতর্ক থাকা ছাড়া কী-ই বা করার আছে? অন্যদেরও, বিশেষত তৃণমূল ছাত্র পরিষদকেও এটা বুঝতে হবে।” তৃণমূল নেতা সৌরভ চক্রবর্তীর মন্তব্য, “আমরাও শহরের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাওবাদী প্রভাবের আঁচ পাচ্ছি। দেখতে হবে, ওদের রাজনৈতিক দর্শনের প্রতি কিছু ছাত্রছাত্রী আকৃষ্ট হচ্ছে কেন।”
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ইনটেলিজেন্স) পার্থসারথি ঘোষ বলেন, “মাওবাদীদের প্রভাব বিস্তারের ব্যাপারটা মাথায় রেখে কলকাতার কয়েকটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশের উপরে এখন আমরা নিয়মিত নজরদারি চালাচ্ছি।” |