কলকাতার শনিবারের সকালটাও শুরু হল ছিনতাইয়ের খবরে। শুক্রবারের মতোই। ফারাক এই যে শুক্রবার একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছিল যাদবপুরে। আর শনিবার জোড়া ছিনতাই ঢাকুরিয়া ও সন্তোষপুরে। এ দিনও দুষ্কৃতীরা মোটরবাইক ছুটিয়ে এসে ছিনতাই করে এবং ঢাকুরিয়ায় বাধা পেয়ে পাঁচ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। চবিবশ ঘণ্টার মধ্যে একই কায়দায় পর পর এ ভাবে ছিনতাইয়ের ঘটনা শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে ফের প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
পুলিশ জানায়, শনিবার সকাল পৌনে সাতটা নাগাদ ঢাকুরিয়া বাবুবাগানে শেফালি দে নামে এক দুধের ডিপোর কর্মীর গলা থেকে হার ছিনিয়ে নিয়ে পালায় মোটরবাইক-আরোহী তিন দুষ্কৃতী। বাধা দিতে গেলে ওই মহিলা এবং আরও এক ব্যক্তিকে লক্ষ করে গুলি চালায় ছিনতাইবাজেরা। তবে তা কারও গায়ে লাগেনি। এর পর মোটরবাইকে চেপে সেলিমপুরের দিকে পালিয়ে যায় তারা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ছিনতাইবাজদের কারও মুখ ঢাকা ছিল না। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি ফাঁকা গুলির খোল উদ্ধার করেছে পুলিশ। |
শেফালিদেবী জানান, তিনি প্রায় পাঁচ বছর ধরে ওই হরিণঘাটা দুধের ডিপোয় কাজ করেন। তিনি ছাড়া জয়া ভাণ্ডারী এবং আব্দুল নামে দুই কর্মীও সেখানে কাজ করেন। এ দিন সকালে পৌনে সাতটা নাগাদ আব্দুল জল আনতে গিয়েছিলেন। সে সময় একটি মোটরবাইক এসে থামে। একটি ছেলে নেমে দুধের দাম জানতে চায়। শেফালিদেবী দাম বলার আগেই হঠাৎ তাঁর গলার হার ছিনিয়ে নিয়ে পালাতে যায় ছেলেটি। ওই মহিলা বলেন, “আমি ছেলেটির জামা ধরে ফেললে সে মেঝের দিকে তাক করে গুলি চালায়। ভয়ে আমি তাকে ছেড়ে দিই।” এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাদল দে নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা। তিনি বলেন, “গুলির শব্দ শুনেই বেরিয়ে আসি। দেখি, তিন জন পালাচ্ছে। আমি ধাওয়া করলে ফের গুলি চালায় তারা।” মোট পাঁচ রাউন্ড গুলি ছিনতাইবাজেরা চালিয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
বাবুবাগানের ঘটনার মিনিট পনেরো পরেই যাদবপুর-সন্তোষপুরে মিডল রোডে আরও এক গৃহবধূর হার ছিনতাই হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই ঘটনাতেও তিন যুবক একটি মোটরসাইকেলে চেপে গিয়েছিল। ওই এলাকার দীপালি মজুমদার নামে এক মহিলা বাড়ির সামনে জল নিতে গিয়েছিলেন। সে সময় দুই যুবক গিয়ে তাঁর হার ছিনিয়ে নেয়। দীপালিদেবী বলেন, “ছেলে দু’টি এসে বিভাস নামে এক ট্যাক্সিচালকের নাম জিজ্ঞাসা করে। আমি ‘চিনি না’ বলতেই আচমকা হার ছিনিয়ে পালায়। হ্যাঁচকা টানে আমার গলা কেটে
যায়। ” তিনি আরও জানান, মোটরবাইক নিয়ে এক যুবক দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। ছিনতাইবাজেরা পালানোর চেষ্টা করলে দীপালিদেবী ওই যুবককে দুষ্কৃতীদের পাকড়াও করতে বলেন। কিন্তু ওই যুবকের মোটরবাইকেই ছিনতাইবাজেরা পালায় বলে তিনি জানান।
শুক্রবার সকাল আটটা নাগাদ যাদবপুর দেশবন্ধু পার্কে ফুল কিনতে আসা নন্দা কুণ্ডু নামে এক বৃদ্ধার হার ছিনিয়ে নিয়ে পালায় ছিনতাইবাজেরা। তাদের আটকাতে গেলে এক ফুলবিক্রেতাকে লক্ষ করে গুলি চালায় ওই দুষ্কৃতীরা। সে ঘটনায় এ দিন রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এমনকী, কারা কারা এই ঘটনাগুলির সঙ্গে যুক্ত, তা-ও এখনও পরিষ্কার নয় গোয়েন্দাদের কাছে। তবে পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সম্প্রতি সোনারপুর-বারুইপুর এলাকায় মোটরবাইকে চেপে একই কায়দায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। তারাই কলকাতায় হানা দিচ্ছে কি না,, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
দক্ষিণ কলকাতা এবং শহরতলিতে পরের পর দুষ্কৃতীদের এই দৌরাত্ম্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে। শুধু সার্ভে পার্ক থানা এলাকাতেই গত এক মাসে চারটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার রাতে কসবায় ভারতী লাল নামে এক মহিলার হার ছিনতাই হয়। সেই ঘটনাতেও এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ দিন সার্ভে পার্কের বাসিন্দা মালবিকা ঘোষ বলেন, “বাড়ির সামনে থেকেই ছিনতাই হচ্ছে। ক’দিন পরে তো বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়বে দুষ্কৃতীরা।” একই কথার সুর মিলেছে ওই এলাকার অন্য বাসিন্দাদের গলাতেও। বাবুবাগানের বাসিন্দা শর্মিলা ভৌমিক বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় রয়েছি। সাতসকালে এমন গুলি চালিয়ে ছিনতাইয়ের কথা শুনিনি!”
প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, ঢাকুরিয়া এবং সন্তোষপুর, দু’টি ক্ষেত্রেই একই রকম দেখতে কালো রঙের মোটরবাইক ছিল। দুষ্কৃতীদের সংখ্যাও ছিল সমান। বাবুবাগান থেকে মোটরবাইকে চেপে মিনিট পনেরোর মধ্যেই মিডল রোডে পৌঁছনো সম্ভব। তা থেকে তদন্তকারীদের অনুমান, দু’টি ঘটনার সঙ্গে একই ছিনতাইচক্র জড়িত।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “কয়েকটি সূত্র মিলেছে। সেগুলির ভিত্তিতেই তদন্ত করা হচ্ছে।” |