স্নাতকোত্তর কোর্সে ভর্তি সংক্রান্ত নির্দেশিকা বাতিলের দাবিতে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অচিন্ত্য বিশ্বাস ও ‘অ্যাডমিশন কমিটি’র সদস্যদের ৮ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখাল ছাত্র পরিষদ। শুক্রবার সকাল ১১টায় উপাচার্যের অফিসে ঘটনার সূত্রপাত হয়। ওই সময়ে উপাচার্য স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন। তখনই ছাত্র পরিষদের মালদহ জেলা সভাপতি প্রসেনজিৎ দাসের নেতৃত্বে ঘেরাও-বিক্ষোভ শুরু হয়। পুলিশ যায়। কিন্তু, ভাঙচুর কিংবা গোলমালের কোনও অভিযোগ না-থাকায় পুলিশ আন্দোলনকারীদের সরাতে চাপ দেয়নি। ছাত্রছাত্রীদের দাবির বিষয়টি নিয়ে উপাচার্য শিক্ষা দফতরের যুগ্ম সচিবের সঙ্গে কথাও বলেন। সন্ধ্যা সওয়া ৭টা নাগাদ উপাচার্য আশ্বাস দেন শীঘ্রই তিনি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে দেখা করে সমস্যার বিষয়টি জানাবেন। এর পর নাগাদ ঘেরাও ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রার মাধব অধিকারী বলেন, “ফর্ম বিলি চললেও সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত মেধা তালিকা প্রকাশ করা হবে না। ৮ অক্টোবর মেধা তালিকা প্রকাশের নির্ধারিত দিন। আশা করছি তার আগেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।” যে নির্দেশের বিরোধিতায় আন্দোলন, সেটি ২১ জুন শিক্ষা দফতরের যুগ্ম সচিবের তরফে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পাঠানো হয়। ওই নির্দেশ অনুযায়ী, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় থাকা কলেজগুলির ৬০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী মেধার ভিত্তিতে ভর্তি হতে পারবে। বাকি ৪০ শতাংশ আসন বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের জন্য রাখতে হবে এবং পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁদের ভর্তি নিতে হবে। |
সেই মতো রাজ্যের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে। ব্যতিক্রম শুধু গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। চলতি বছরে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের ফল সবচেয়ে দেরিতে প্রকাশ হয়। যদিও ২৪ অগস্ট গৌড়বঙ্গের স্নাতক স্তরের ফল প্রকাশ হয়েছিল। কিন্তু, ফলে নানা অসঙ্গতি ও ভুল থাকায় তা প্রত্যাহার করে নেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ১২ সেপ্টেম্বর সংশোধিত ফল প্রকাশিত হয়েছে। এর পরেই নয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী ভর্তির জন্য আবেদনপত্র বিলির বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পযর্ন্ত ফর্ম বিলি করা হবে জানান কর্তৃপক্ষ। তা নিয়ে আপত্তি তোলে এসএফআই, ছাত্র পরিষদ সব সবকটি সংগঠন। এই ব্যাপারে উপাচার্য বলেন, “আমার কিছুই করার নেই। কয়েকদিন আগে ছাত্র সংগঠনের আন্দোলনের জেরে স্নাতকোত্তর কোর্সের ফর্ম বিলি করা যায়নি। সে জন্য ব্যাঙ্কের মাধ্যেমে স্নাতকোত্তর কোর্সের ভর্তির ফর্ম বিলি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।” ছাত্র সংগঠনগুলি জানিয়েছে, চলতি বছরে মালদহ-সহ দুই দিনাজপুরের ২১টি কলেজে স্নাতক কোর্সে তৃতীয় বর্ষে ৪৭৯৬ জন পরীক্ষা দেন। পাশ করেছেন ৩৭০০ জন। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি বিভাগে স্নাতকোত্তর কোর্সের মোট আসন প্রায় ৯০০। তার মধ্যে ৬০ শতাংশ গৌড়বঙ্গের আওতায় থাকা কলেজের পড়ুয়াদের জন্য নির্দিষ্ট রয়েছে। ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতির বক্তব্য, “আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজের পড়ুয়াদের জন্য ৯৫ শতাংশকে ভর্তি নেওয়া হতো। সেটাই নিয়ম ছিল। এখন বলা হচ্ছে ৬০ শতাংশ আসন আমাদের জন্য রয়েছে। আমরা ৯৫ শতাংশ আসন চাইছি। পাশাপাশি, আসন সংখ্যাও বাড়াতে হবে। না হলে অনেক ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।” এসএফআই-এর মালদহ জেলা সভাপতি অনিমেষ সিংহ জানান, ফল যথাসময়ে প্রকাশ হলে হয়তো পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারত। তিনি বলেন, “সময়ে ফল প্রকাশ করলে ছাত্রছাত্রীরা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের সুযোগ পেতেন। এবার তা সম্ভব হল না। তাই ফর্ম বিলি করতে দিইনি। ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ফর্ম বিলি করলেও পুরানো নিয়ম অনুযায়ী ভর্তিতে অগ্রাধিকার চাই। না হলে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করতে দেব না।” |