বনধে লাভ হয়নি, স্বীকার ‘ধর্মচ্যুত’ সিপিএমের
বৃহস্পতিবার ১২ ঘণ্টার বনধে রাজ্যকে অচল করে রেখে তাঁরা যে তেমন লাভবান হননি, প্রকারান্তরে তা স্বীকার করছেন সিপিএম নেতারা। প্রশ্ন উঠেছে, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সমর্থন তুলে নেওয়ার পরে যে বনধ ডেকে তাঁদের বিশেষ লাভ হবে না, তা বুঝেও আলিমুদ্দিন কেন সেই পথে হাঁটল? সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব কেন ‘স্বধর্ম’ থেকে বিচ্যুত হলেন?
কী সেই ‘স্বধর্ম’? তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই আলিমুদ্দিনের প্রধান প্রতিপক্ষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুতরাং মমতা-বিরোধিতাই সিপিএমের স্বাভাবিক ধর্ম। কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পরে মমতা রাজনৈতিক ভাবে কিছুটা হীনবল। এই পরিস্থিতিতে মমতার বিরুদ্ধে আক্রমণের তীব্রতা বাড়ানোই সিপিএমের পক্ষে স্বাভাবিক কাজ। তা না করে সিপিএমের মতো কার্যত আঞ্চলিক দল কেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বিরোধিতায় রাজ্যকে অচল করে রাখল? প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। কেবল তাই নয়, যে ভাবে প্রতিবাদ করতে গিয়ে দিল্লিতে পলিটব্যুরোর সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি কার্যত ‘গলাগলি’ করেছেন বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীর (সেখানে ছিলেন মুরলী মনোহর জোশীও) সঙ্গে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন রাজ্যের মানুষ।
আলিমুদ্দিনের শীর্ষ নেতারা অবশ্য মানতে নারাজ যে, তাঁরা স্বধর্মচ্যুত হয়েছেন। বরং তাঁদের দাবি, কমিউনিস্ট পার্টি হিসেবে তাঁরা যে সব সময়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেন, বনধ ডেকে সেটাই প্রমাণ করা গেল। কিন্তু বনধের ফলে কতটা রাজনৈতিক লাভ হল? জবাবে নীতির কথা তুলে সাফাই গেয়েছেন দলের একাধিক নেতা। পলিটব্যুরোর সদস্য নিরুপম সেন বলেন, লাভ-ক্ষতির হিসেব না কষে নীতিগত অবস্থান নিয়ে চলাই সিপিএমের ধর্ম। রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, “এই বনধে সাময়িক ভাবে হয়তো তেমন লাভ হল না। কিন্তু আমরা যে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াই করছি, তা প্রচারের সুযোগ পাওয়া গেল।”
কিন্তু কংগ্রেস তো সিপিএমের প্রধান প্রতিপক্ষ নয়। কেন্দ্রে ক্ষমতা দখলের স্বপ্নও নিশ্চয়ই দেখছে না কার্যত আঞ্চলিক দল সিপিএম। অহেতুক কংগ্রেস-বিরোধিতায় মনোনিবেশ করে তৃণমূলকে চেপে ধরার সুযোগ কি তারা হেলায় হারাল না? কংগ্রেসের একটি অংশই বলছে, বনধ থেকে সরে এসে মমতার বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলে আক্রমণ শানালে পরিস্থিতির সঠিক ব্যবহার করা যেত। বিমানবাবুর অবশ্য বক্তব্য, “ধর্মঘট নিয়ে প্রচার করতে গিয়ে মমতার দ্বিচারিতার কথাও তুলে ধরা হয়েছে।” কিন্তু একই সঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের রাজনীতি ব্যক্তি মমতার বিরুদ্ধে নয়। নীতির বিরুদ্ধে।”
সিপিএম বরাবরই ‘নীতিবাগীশ’। ক’দিন আগেই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতায় মিছিল নামিয়ে কলকাতা অচল করে দিয়েছিল তারা। চার বছর আগে প্রথম ইউপিএ সরকারের উপর থেকে সমর্থন তোলার পিছনেও ছিল মার্কিন-বিরোধী নীতি। যা সমর্থন করে নিরুপমবাবু এ দিনও বলেন, “সমর্থন প্রত্যাহার করে রাজনৈতিক ভাবে লাভবান হইনি। কিন্তু স্বধর্ম পালন করেছি।” কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নীলোৎপল বসুও মনে করেন, “নীতিগত অবস্থান থেকেই মনমোহন সিংহের বিরোধিতা করে ধর্মঘটের পথে গিয়েছে সিপিএম। সেটাই নিজ ধর্ম।”
মনমোহনের নীতির প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিজেপি-র সঙ্গে ‘গলাগলি’ করার জন্য দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে একহাত নিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। তাঁর মন্তব্য, “জিনিসটা মোটেও ঠিক হয়নি! কোনও অনুষ্ঠানে গিয়ে কারও সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে অন্য কথা। কিন্তু বিজেপি নেতাদের সঙ্গে আমাদের নেতাদের হাত ধরাধরি, গলাগলির দরকার ছিল না! এতে রাজ্যের মুসলিমদের কাছে ভুল বার্তা যাবে।” আর্থিক নীতিতে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের যে ফারাক নেই, তা উল্লেখ করে রেজ্জাক বলেন, “বিজেপি সাম্প্রদায়িক দল। খুচরো ব্যবসায় এফডিআই-এর বিরোধিতা করতে গিয়ে তাদের সঙ্গে হাত মেলাতে হবে কেন?” তাঁর আশঙ্কা, অতীতের জ্যোতি বসু-অটলবিহারী বাজপেয়ীর মতোই তৃণমূল ইয়েচুরি-গডকড়ীর ছবি নিয়ে প্রচার করে ফায়দা তুলতে পারে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.