বাঁকুড়া কোর্টে সাজা ২৪ জনের
১৬ বছর পর খুনের দিনেই যাবজ্জীবন
খেতের ধান খেয়ে ফেলেছিল মোষ। তারই প্রতিবাদ করেছিলেন খেত-মালিক। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৯৯৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পরিবারের সদস্যদের চোখের সামনেই খুন হতে হয়েছিল বৃদ্ধ খেত-মালিক দেবু ঘোষকে (৬৫)।
ঠিক ১৬ বছর পরে সেই ২১ সেপ্টেম্বরই ওই খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ২৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা শোনাল আদালত। শুক্রবার বাঁকুড়া জেলা আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক (১) নবনীতা রায় এই রায় দিয়েছেন। ঘটনাটি বড়জোড়ার বেলেডাঙা গ্রামের। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত বৃদ্ধ ছিলেন কংগ্রেস কর্মী। সাজাপ্রাপ্তেরা সিপিএম সমর্থক। তবে, এই খুনের ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক কোনও কারণ ছিল না বলেই পুলিশ জানিয়েছে। নিছকই গ্রাম্য বিবাদের পরিণতিতে ওই ঘটনা।
সরকার পক্ষের আইনজীবী লক্ষীনারায়ণ গোস্বামী জানান, মূলত ২৫ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ ছিল। বিচার চলাকালীন নেপাল মণ্ডল নামে এক অভিযুক্তের মৃত্যু হয়। তবে সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে নেপালবাবুর চার ছেলে বিশ্বজিৎ, আদিত্য, মহাদেব ও সুভাষ রয়েছেন। নেপালবাবুর পরিবার ছাড়াও একই পরিবারের আরও বেশ কিছু সদস্য সাজাপ্রাপ্তদের তালিকায় আছেন। যেমন ভগীরথ মণ্ডলের সঙ্গেই তাঁর ছেলে স্বদেশ, রঞ্জিত ও পরেশ, আবার মগারাম মণ্ডলের পাশাপাশি তাঁর ভাই মনসারাম ও ছেলে অচিনও সাজা পেয়েছেন। এ ছাড়াও অনেকে রয়েছেন, যাঁরা সম্পর্কে দুই ভাই। সাজাপ্রাপ্তদের অধিকাংশই বেলেডাঙা গ্রামের বাসিন্দা। একমাত্র চণ্ডী ঘোষের বাড়ি বড়জোড়ার ঘুটগোড়িয়া গ্রামে।
নিহত দেবু ঘোষের পরিবারের দাবি, অভিযুক্ত চণ্ডী ঘোষের বাড়ির কাছাকাছি তাঁদের ধান জমি রয়েছে। ১৬ বছর আগে ২০ সেপ্টেম্বর দেবুবাবুর ধান জমিতে চণ্ডীবাবুর মোষ নেমে ধান খেয়ে ফেলে। ওই ঘটনার পর দিন (২১ তারিখ) চণ্ডীবাবুর পিসেমশাই তথা দেবুবাবুর প্রতিবেশী ষষ্ঠী মণ্ডলের কাছে গিয়ে প্রতিবাদ করেন দেবুবাবু। তখনই বচসা বাধে। অভিযোগ, লাঠি, রড, টাঙি নিয়ে দেবুবাবুকে মারতে থাকেন জনা ২৫ ব্যক্তি। সেই সময় দেবুবাবুর ছোট ছেলে সুদর্শন ঘোষ বাবাকে ছাড়াতে গিয়ে মার খান। দেবুবাবুর বড় ছেলে প্রতীপও বাবাকে বাঁচাতে এসে মার খেয়ে জখম হন। দেবুবাবুর পরিবারের সকলে ঘটনাস্থলে এসে তাঁকে বাঁচাতে গেলে প্রত্যেককেই মারধর করা হয়।
প্রতীপবাবু এ দিন বলেন, “ওরা বাবাকে রড, লাঠি, টাঙি দিয়ে খুন করল আমাদের সবার চোখের সামনে। আমরা কেউ বাঁচাতে পারলাম না।” তিনি জানান, আততায়ীরা পালিয়ে যাওয়ার পরে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা তাঁদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই দেবুবাবুর মৃত্যু হয়। পরিবারের বাকি আট সদস্যদের মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযুক্তদের মধ্যে তিন জনকে ঘটনার দু’দিনের মাথায় গ্রেফতার করা হয়। চণ্ডীবাবু ছাড়া বাকি অভিযুক্তেরা ১৯৯৭ সালের ১০ জানুয়ারি আত্মসমর্পণ করেন। চণ্ডীবাবুর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। সরকারি আইনজীবী জানান, পুলিশ ১৯৯৮-র ১০ এপ্রিল অভিযুক্ত ২৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। খুনের অভিযোগ পুরোপুরি ‘সাজানো’ ও ‘মিথ্যা’ বলে দাবি সাজাপ্রাপ্ত মাগারাম মণ্ডলের নাতি উজ্বলের। তিনি বলেন, “আমাদের পরিবারের কেউ এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়।” আর নিহতের ছেলে প্রতীপবাবুর প্রতিক্রিয়া, “১৬ বছর আগে যে দিন বাবা খুন হয়েছিলেন, সে দিনই দোষীদের সাজা হল। তবে আমরা আরও কঠোর সাজা আশা করেছিলাম।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.