পঞ্চায়েত ভোটের আগে এ রাজ্যের ‘মতুয়া মহল’কে ফের ‘চাঙ্গা’ করে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মতুয়াদের ধর্মগুরু প্রমথরঞ্জন ঠাকুরের নামাঙ্কিত একটি কলেজের শিলান্যাস উপলক্ষে শুক্রবার মতুয়া মহাসঙ্ঘের পীঠস্থান গাইঘাটার ঠাকুরনগরে যান মুখ্যমন্ত্রী। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের আগেও ঠাকুরনগর হাইস্কুলের এই মাঠেই তৃণমূলের সংখ্যালঘু ও তফসিলি সেলের সভায় হাজির ছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা। সেখানে মতুয়াদের একটা বড় অংশ হাজির ছিলেন। মমতাও মতুয়াদের জন্য নানা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। এ দিন মঞ্চে উঠেই মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপাণিদেবীর (বড়মা) পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম সেরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রেলমন্ত্রী থাকাকালীন উনি (বড়মা) যা বলেছিলেন, সবই করেছি। বেঁচে থাকতে-থাকতে এই কলেজের উদ্বোধন দেখে যেতে চান বলে ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন বড়মা। সে জন্য অনেক বড় বড় কাজ শেষ না করেই এখানে এসেছি। বড়মার জন্য এটুকু আমি করতেই পারি। ওঁকে আমি সম্মান করি।” বীণাপাণিদেবী বলেন, “ঠাকুরের কাছে ওঁর (মমতা) দীর্ঘ জীবন কামনা করি। মঙ্গল কামনা করি। উনি অনেক ভাল কাজ করেছেন। আরও অনেক ভাল কাজ যেন করতে পারেন, তা-ই চাই।” |
বস্তুত, মতুয়াদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সখ্য’ ২০০৮ সাল থেকেই। রেলমন্ত্রী থাকাকালীনও নানা সময়ে ঠাকুরবাড়িতে ছুটে গিয়েছেন মমতা। নিজে মতুয়া মহাসঙ্ঘের সদস্যপদ নিয়েছেন। রাজ্যে বিরোধী থাকাকালীনও সাংসদ-বিধায়ক কোটার টাকা ঠাকুরবাড়ির নানা উন্নয়নে ব্যয় করেছেন। রেলমন্ত্রী হিসাবেও ঠাকুরবাড়ির উন্নয়নে ‘মুক্তহস্ত’ ছিলেন মমতা। বিধানসভা ভোটে রাজ্যে প্রথম যে আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল তৃণমূল, সেটি হল গাইঘাটা। সেখানে বড়মার ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরকে প্রার্থী ঘোষণা করেন মমতা। পরে মঞ্জুলকে মন্ত্রীও করেছেন।
গত বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামে একটি কলেজের শিলান্যাস হয়েছিল গাইঘাটারই চাঁদপাড়ায়। করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কলেজটি তৈরি হওয়ার কথা ছিল চাঁদপাড়ায়, সরকারি কৃষি খামারের জমিতে। কিন্তু মতুয়াদের একটি অংশের তা নিয়ে আপত্তি ছিল। বীণাপাণিদেবীও চেয়েছিলেন, কলেজ তৈরি হোক ঠাকুরনগরে।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “উনি (বড়মা) চেয়েছিলেন, পিআর ঠাকুর যেখানে থাকতেন, সেখানেই তাঁর নামে কলেজ হোক।” স্বভাবতই বড়মার সেই ‘ইচ্ছে’কেই ‘সম্মান’ দিয়েছেন মমতা। ঠাকুরনগরেই ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের একটি জমি খুঁজে বের করেছে বর্তমান সরকার। এক লপ্তে (কলেজ তৈরির জন্য ন্যূনতম প্রয়োজন ৫ একর) জমি পেতে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল প্রথম দিকে। পরে অবশ্য সেই সমস্যাও মেটে। সেই প্রকল্পেরই শিলান্যাস হল এ দিন।
এ রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলার প্রায় ৭২টি বিধানসভা আসনে মতুয়া ‘ভোট-ব্যাঙ্ক’ বেশ শক্তিশালী বলে মনে করা হয়। পঞ্চায়েত ভোটও দূরে নয়। সেই প্রেক্ষিত মাথায় রেখেই কি মতুয়াদের ‘কাছে টানা’র চেষ্টা?
মমতার মন্ত্রিসভায় খাদ্যমন্ত্রী তথা হাবরার বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অবশ্য বলেন, “ভোটের দিকে তাকিয়ে আমরা মতুয়াদের উন্নয়ন করি না। আমরা আগেও ওঁদের পাশে ছিলাম। ভবিষ্যতেও থাকব।” |