মহারানি স্বর্ণময়ী সম্পর্কে আমার লেখা ১ সেপ্টেম্বরের চিঠির বিষয়ে সুভাষ ঘোষ হাজরা কিছু প্রশ্ন তুলেছেন গত ৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত তাঁর লেখা চিঠিতে। সবিনয়ে জানাই, ভুলবশতঃ রাজা কৃষ্ণনাথ ‘অপুত্রক’ স্থলে লিখেছি ‘নিঃসন্তান’। হ্যাঁ, রাজা কৃষ্ণনাথের দুই মেয়ে লক্ষ্মী ও সরস্বতী। রাজা বেঁচে থাকতেই বড়মেয়ে লক্ষ্মী মারা যায়। ছোটমেয়ে সরস্বতীর সঙ্গে বহরমপুরের বাসিন্দা ব্রজনাথ দের বিবাহ হয়। সরস্বতীর দুই মেয়ে তারাও অল্প বয়সে মারা যায়। ভারতের গভর্নর হেস্টিংসের ভালবাসার ছায়ায় লালিত কৃষ্ণকান্তবাবুর রাজবংশের শেষ পদচিহ্নটুকুও এই ভাবে নিশ্চিহ্ন হয়। পরে অবশ্য বিপত্নীক ব্রজনাথবাবু বিয়ে করেন। তারপর মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দীর ভাগ্নে যোগেশচন্দ্রের সঙ্গে ব্রজনাথবাবুর বড় ছেলে গোপীকামোহনের বৈবাহিক সম্পর্ক হয়। সে ভিন্ন প্রসঙ্গ। বর্ধমান জেলার আটাকুল গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের সারদাসুন্দরী ভাবীকালের পূণ্যশ্লোকা দানশীল মহারানি স্বর্ণময়ী। তাঁর জীবদ্দশায় দানের পরিমান প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা। মহারানির দান ও সুকীর্তির সীমা পরিসীমা ছিল না বলেই ঐতিহাসিক নিখিলনাথ রায় লিখেছেন, “মহারানি মহোদয়ার সুকীর্তির বিবরণ লিখিতে হইলে একখানি বৃহদায়ন পুস্তক হইয়া উঠে।” ১৮৭৪ সালে বাংলায় সর্বগ্রাসী দুর্ভিক্ষ হয়। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন মহারানি। ইংরেজ সরকারের তহবিলে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা দান করেন। কৃতজ্ঞ সরকার বাহাদুর ১৮৭৫ সালে ঘাষণা করেন, মহারানির উত্তরাধিকারীরা মহারাজা উপাধিতে ভূষিত হবেন। মিস্টার পিকক লেফটেনন্ট গভর্নর ছিলেন। মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্রের জীবনীকার সাবিত্রীপ্রসন্ন চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, “ইংরাজী ১৮৭৮ সালের ১৪ অগস্ট লেফটেনান্ট গভর্নর মিস্টার পিকক কাশিমবাজারে দরবার করিয়া মহারানির জনহিতকর সৎকার্য দানের সম্মান স্বরূপ তাঁহাকে Imperial order of the crown এর নিদর্শন ও বিশেষ অধিকার ভোগের সনদ (Royal letters patent) দান করিতে আসেন।” মহারানি বহরমপুরে জলের কল প্রতিষ্ঠার জন্য এক লক্ষ টাকাই দান করেন। অথচ সুভাষবাবু লিখেছেন দেড় লক্ষ টাকা।
সুদীপ আচার্য, বহরমপুর
|
সালটা সম্ভবত ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮-এর মধ্যে। বহরমপুর রেপার্টারি থিয়েটার নাটকের দল তখন সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের অন্যতম বিখ্যাত উপন্যাস ‘মায়ামৃদঙ্গ’-এর নাট্যরূপ ‘মায়া’ নাটকের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। নাট্যরূপ এবং পরিচালনার দায়িত্ব ছিলেন জেলার অন্যতম নাট্যব্যক্তিত্ব প্রদীপ ভট্টাচার্য। ওই নাটকে অভিনয় করার সুবাদে এবং আরও বিভিন্ন কাজের জন্য ওই নাটক দলের সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম। উপন্যাসের মূল বিষয় মুর্শিদাবাদের লোকশিল্প ‘আলকাপ’ এবং ওই নাটকে অভিনয়ের জন্য তিনিই প্রথম বাঁশি ও হারমোনিয়ামের প্রয়োগ করেছিলেন। লেখক নিজেও ভাল বাঁশি বাজাতে পারতেন। লেখক যখন ওস্তাদ হয়ে ওঠেন, তখন তাঁর আলকাপ দলে ‘ছোকরা’ ছিলেন সুধীর দাস। ওই সুধীর দাসকে মায়া নাটকে গান গাইতে ও হারমোনিয়াম বাজানোর জন্য নিয়ে আসা হয়। মহলাকক্ষে আমরা মুগ্ধ হয়ে সুধীরবাবুর গান ও হারমোনিয়াম বাজানো শুনতাম। তাঁর মুখেই শুনি শেক্সপিয়ারের ‘মার্চেন্ট অফ ভেনিস’-কে আলকাপের মাধ্যমে সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ তুলে ধরেছিলেন। |
এর পরে বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে মায়া নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। সে দিন সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ স্বয়ং হাজির হয়েছিলেন এবং গোটা নাটকটি দর্শকাসনে বসে দেখলেন। দীর্ঘ দিন পরে তাঁর ওস্তাদের সঙ্গে দেখা করতে নাটক শেষে সুধীর দাস মঞ্চ থেকে নেমে আসেন। এক সময়ের ওস্তাদ সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ তাঁর হাত ধরে বললেন, “ভাল আছ সুধীর!” সুধীর দাস তখন কোনও কথা বলতে পারলেন না। ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন। আমরা তখন শিহরিত এবং রোমাঞ্চিত। উপন্যাসে কিংবা নাটকের যে বিষয় এক জন মঞ্চশিল্পী মঞ্চে কেমন করে মায়া সৃষ্টি করেন এবং সেই মায়াশিল্পীর জীবন-সংসারের যে মায়ার বন্ধন তার সঙ্গে কিভাবে দ্বন্দ্ব তৈরি করে? এই সমস্ত মায়ার বন্ধন থেকে মুক্তির উপায়ই বা কী? সেই সব গূঢ় ব্যাখ্যাকেও ছাপিয়ে যায় রবীন্দ্রসদনে সে দিনের সৃষ্টি হওয়া জীবন্ত মায়া গুরু-শিষ্যের সেই মিলন মুহূর্তের অনেকের সঙ্গে আমি সাক্ষি ছিলাম, যা কোনও দিন ভোলার নয়।
প্রান্তিক দত্ত, বহরমপুর
|
১৯৫৬ সালে আমি ১৪ বছরের কিশোর। আর সেই কিশোরের মনে অনেক কিছু থাকার কথা। সৈয়দ মুস্তাফা আলকাপ সম্রাট ‘ঝাঁকসু’ ওরফে ধনঞ্জয় মণ্ডলের আলকাপ দলে ১৯৫০ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ছিলেন এবং বাঁশের আড় বাঁশি বাজাতেন। তখন দলে এক জন কেতাদুরস্ত মানুষ যাঁর গড়ন লম্বা, ছিপছিপে এবং রঙটা একটু ময়লা। ধোপ-দুরস্ত সাদা ধবধবে ধুতি ও সাদা শার্ট গায়ে, যেন সদ্য পাট ভাঙা। সেই সময়েরই তো গ্রাম ‘ধনপতনগর, আলকাপ এবং ওস্তাদ ঝাঁকসার’ জীবনকেন্দ্রীক উপন্যাস ‘মায়ামৃদঙ্গ’। এরকম নিখুঁত উপন্যাস দলে বহু দিন ধরে না থাকলে অবশ্যই লেখা যায় না। লেখা হয়েছিল প্রায় ১৫ বছর পরে ১৯৭২ সালে। এটাতে সর্ব প্রথম একটা গ্রাম্য দেহাতি চাঁই ভাষা ব্যবহৃত হয়। ওই সময়ের লেখা আর একটি উপন্যাস ‘নির্জন গঙ্গা’। ওই উপন্যাসের নায়ক-নায়িকা চাঁই সম্প্রদায়ের। এতেই চাঁই সমাজের ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯৮০-৮১ সালের দিকে চাঁই সমাজ উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক হিসাবে কলকাতায় সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের সঙ্গে দেখা করতে কলকাতায় যেতাম। তিনি খুবই স্নেহ করতেন।
তুলসীচরণ মণ্ডল, জঙ্গিপুর
|
গত ২৯ অগস্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষ্ণনগরে এসেছিলেন। সেখানে তিনি অনেকগুলি ‘করে দেব’, ‘করব’, ‘গড়া হবে’, ‘গড়ব’ ইত্যাদি ঘোষণা করেন। তার মধ্যে তেহট্টের বেতাই-এ বাবা সাহেব অম্বেডকরের নামে একটি কলেজ তৈরির প্রতিশ্রুতিও আছে। কিন্তু বেতাই-এ বি আর অম্বেডকর নামে একটি কলেজ অনেকদিন ধরেই চালু আছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত ওই কলেজে পঠনপাঠন শুরু হয় ১৯৭৪ সালের ৯ জানুয়ারি। ১৯৯৯-২০০০ শিক্ষাবর্ষে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলার অন্য কলেজের সঙ্গে ওই কলেজটিও কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলে যায়। ৩ একর জমির উপর পাঁচিল দিয়ে ঘেরা কলেজভবন ছাড়াও রয়েছে ২.৩৩ একরের খেলার মাঠ, ২.৩৩ একরের পুকুর। এছাড়াও ৮.৭৭ একরের অতিরিক্ত মূল্যবান জমি আছে ওই কলেজের। ৩৮টি শ্রেণিকক্ষ-সহ রয়েছে প্রশাসনিক ভবন। ইউজিসি-র বরাদ্দ ৪৩ লক্ষ ৪১ হাজার ৮৮১ টাকায় মেয়েদের হস্টেল নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পথে। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, বেতাই-এ যেহেতু বি আর অম্বেডকরের প্রায় চার দশকের প্রাচীন একটি কলেজ রয়েছে, সেহেতু আপনার প্রস্তাবিত কলেজটি নদিয়ার অন্য কোথাও করলে ভাল হয় না?
শঙ্কর মণ্ডল, হোগলবেড়িয়া
|
পত্র ১: গত ২২ অগস্ট ৯ পাতায় প্রকাশিত ‘বিড়ি মজুরি বৃদ্ধিতে নারাজ মালিকপক্ষ’ সংবাদের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। মঙ্গলবার আলোচনায় বসার কোনও কথাই আমাদের জানা নেই। এ রূপ বিভ্রান্তিকর খবর পরিবেশিত হলে শিল্পে অশান্তি দেখা দেবে। আরও জানাই, আমাদের কোনও প্রতিনিধি কোথাও বক্তব্য রাখেননি।
রাজকুমার জৈন, অরাঙ্গাবাদ বিড়ি মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন
পত্র ২: ‘বিড়ি মজুরি বৃদ্ধিতে নারাজ মালিকপক্ষ’ সংবাদের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি ওই রকম কোনও বক্তব্য রাখিনি। আমি মালিক পক্ষ বা কোনও সংগঠনের সম্পাদক নই। বিভ্রান্তিকর খবর পরিবেশিত হলে বিড়ি শিল্পে আশান্তি দেখা দেবে।
বিভাস দাস, অরাঙ্গাবাদ
প্রতিবেদকের উত্তর: খবরে বিভ্রান্তির প্রশ্নই নেই। রাজকুমারবাবুর চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে জানাই, ওই শ্রমিক সংগঠন মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা হবে বলে দাবি জানিয়েছিল। খবরেও তাই লেখা হয়েছে। এর পরে আলোচনা না হলে তার দায় প্রতিবেদকের নয়। দ্বিতীয় চিঠিটি বিভাসবাবুর। অফিস সম্পাদক হিসাবে তিনি নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন। তিনি যা বলেন তা-ই সংক্ষেপে লেখা হয়েছে। ফলে তাঁর সঙ্গে কোনও কথা হয়নি বললে মিথ্যাচার করছেন বিভাসবাবুই, প্রতিবেদক নন। |