|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি ৩... |
|
মিলে সুর মেরা তুমহারা |
উস্তাদ রাশিদ খান আর ইন্দ্রাণী সেনের মেলবন্ধন। তাঁদের মুখোমুখি সংযুক্তা বসু |
পত্রিকা: শুনেছি আপনি খুব ভাল বিরিয়ানি রান্না করেন...
রাশিদ: আমি কিন্তু রোজ বিরিয়ানি রান্না করি না। আর পাঁচ জনের মতোই ডাল, ভাত, সবজি খাই।
পত্রিকা: রোজ বিরিয়ানি আর কে খায়! জানতে ইচ্ছে হচ্ছে, এত রকম বিরিয়ানি রান্না শিখলেন কার কাছে?
রাশিদ: আমার মা মারা যান খুব ছোটবেলায়। মাসিদের কাছেই রান্নাবান্না শিখি। খেতে ভালবাসতাম বলেই রান্না শিখতে ইচ্ছে করত।
পত্রিকা: আপনার বাড়িতে ঈদের রাতে বড় পার্টি হয়। সেই পার্টিতে ইন্দ্রাণীকে নেমন্তন্ন করেন?
ইন্দ্রাণী: নেমন্তন্ন করবে না মানে? আমি তো ওর ঘরের লোক। মনে পড়ে, একটা চ্যানেলে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে রাশিদ ভাইয়ের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল।
রাশিদ: তার আগে টিভি-তে অনেক অনুষ্ঠানে দিদির (ইন্দ্রাণী সেন) গান শুনে আমার বউকে কত বার বলেছি, দেখেছ, কী সুন্দর করে সুর লাগান উনি! কিন্তু সামনাসামনি দেখা হলে কোনও দিন কথা হয়নি। খুব অহঙ্কারী মনে হত দিদিকে।
ইন্দ্রাণী: আর আমার মনে হত, এত বড় উস্তাদ রাশিদ খান। ওঁর সঙ্গে আমি আর কী কথা বলব? উনি কি আমায় চিনতে পারবেন? কিন্তু আলাপ হল যখন, কিছু দিনের মধ্যেই একেবারে আপনজন হয়ে উঠল রাশিদভাই। আমরা তো এ বছর পুজোয় একটা অ্যালবামও বের করছি। |
|
ছবি: সুমন বল্লভ |
পত্রিকা: এই একসঙ্গে অ্যালবাম বের করার প্ল্যানটা হল কী ভাবে?
রাশিদ: অ্যালবামে প্রথম গাইছি ঠিকই কিন্তু এর আগে আমরা মঞ্চে একসঙ্গে অনুষ্ঠান তো করেছি। বিভিন্ন ঋতুর উপরে কয়েকটি রাগ আমি মঞ্চে গেয়েছিলাম। আর দিদি সেই সব রাগের উপরে রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছিল।
ইন্দ্রাণী: অ্যালবাম বের করার প্ল্যানটা আমাদের কারও মাথায় আসেনি। ভাল গীতিকার, সুরকার, এবং সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে ইতিমধ্যেই বেশ প্রতিষ্ঠিত তপন সিংহের মস্তিষ্ক থেকে ভাবনাটা বেরোয়। তপনের সঙ্গে আগেও কাজ করেছে রাশিদভাই। আমিও অনেক করেছি। এক দিন তপন আমায় বলল, “টিপিক্যাল আধুনিক গানের অ্যালবাম না বের করে তার সঙ্গে যদি কিছুটা ক্ল্যাসিক্যাল মিশিয়ে দেওয়া যায় কেমন হয়?” আমি তো ক্ল্যাসিকাল তেমন গাইনি কখনও। কী হবে তা হলে? আর কাউকে তা হলে সঙ্গে নিতে হয়।
পত্রিকা: তখনই রাশিদজির কথা মনে এল?
ইন্দ্রাণী: আমার সেক্রেটারি সৌরভ বলল, “একবার রাশিদজিকে জিজ্ঞেস করলে কেমন হয়?” আমি তো প্রথমে শুনেই থতমত। যদিও আমার জামাই গৌরব অনেকদিন ধরে বলছিল, রাশিদ ভাইয়ের সঙ্গে একটা কিছু করতে। সৌরভের প্রস্তাবটি বেশ খানিকটা চিন্তাভাবনা করে, রাশিদভাইয়ের বউকে ফোন করে আমার ইচ্ছের কথাটা জানালাম। রাশিদভাই ফোন ধরে বলল, “দিদি তুমি যখন বলছ, নিশ্চয়ই গাইব।” আমি ভয়ে ভয়ে পারিশ্রমিকের কথা জিজ্ঞাসা করলাম। রাশিদভাই বলল, “আমি তোমার ছোট ভাই। টাকার কথা থাক।”
রাশিদ: গানগুলো যে এত সহজ ভাবে রেকর্ডিং হয়ে যাবে, ভাবতে পারিনি। এর জন্য তপনের কৃতিত্ব অনেকটাই। গানের মধ্যে কাফি, মেঘ, মালকোষ, ভৈরবী, সোহিনী এই সব রাগ ব্যবহার করা হয়েছে।
পত্রিকা: আপনি কি গানের কথাগুলিও গেয়েছেন?
রাশিদ: না, গানের মাঝে মাঝে বন্দিশগুলো আমার। আর বাংলা আধুনিক গানের কথাগুলো দিদির।
পত্রিকা: এ তো দারুণ মেলবন্ধন...
রাশিদ: আমাদের অ্যালবামের নামও ‘মেলবন্ধন’।
পত্রিকা: তাই নাকি! তা আপনি তো নিজের গানেও অনেক রকম মেলবন্ধন করছেন। শ্রোতাদের কাছে পৌঁছোনোর জন্য?
রাশিদ: কেন, আমার খেয়াল গানের শ্রোতা কি নেই নাকি যে, রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি গেয়ে শ্রোতা ধরতে হবে। ঠিক যে ভাবে দাদরা, ঠুংরি, গজল গাই, নিজের শখে, ঠিক সে ভাবেই এই সব গান গাইছি।
পত্রিকা: রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি কি আলাদা কোনও টান আছে? অন্য গানের মধ্যে রবীন্দ্রসঙ্গীতই সবচেয়ে বেশি গেয়েছেন তো?
রাশিদ: আসলে রবীন্দ্রসঙ্গীত আমার জীবনে এসেছিল আশ্চর্য ভাবে। একবার আনন্দ পুরস্কারের সময় আমাকে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে বলা হয়েছিল। অসিত ঘটকের কাছে তালিম নিয়ে আমি গেয়েছিলাম, ‘কে বসিলে আজি হৃদয়াসনে’—সেই থেকেই শুরু। তার পর আরও পাঁচ-ছ’টা রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছি। ভাল লাগে গাইতে। এক ধরনের অধ্যাত্মবোধ আছে যেটা আমি যখন রাগসঙ্গীত গাই তখনও পাই।
ইন্দ্রাণী: আর আমি তো কবে থেকেই রবীন্দ্রসঙ্গীত ছাড়াও আরও বহু রকমের গান গাইছি। আমার কাছে নানা ধরনের গান গাওয়াটা একটা চ্যালেঞ্জ। সে হিসেবে দেখতে গেলে আমাদের এই ‘মেলবন্ধন’ অ্যালবামও একটা চ্যালেঞ্জ। কারণ এটা একটা ফিউশন অ্যালবাম। এ রকম আধুনিক গানের সঙ্গে ক্ল্যাসিকালের ফিউশন আগে কখনও করিনি।
পত্রিকা: আচ্ছা ইন্দ্রাণী আপনি যে বছরের পর বছর এই গোল টিপ, নাকে নাকছাবি, আলগা খোঁপায় ফুল জড়ানো, সঙ্গে একঢালা রঙের তাঁতের শাড়ি পরে সাজেন, রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইয়েদের এটা একেবারে প্রচলিত সাজ। অন্য রকম সাজতে ইচ্ছে করে না! যেমন ধরুন শ্রাবণী সেন সাজেন। কিংবা ধরুন সুচিত্রা মিত্র সাজতেন। চোখে রিমলেস চশমা, সঙ্গে ছোট করে চুল ছাঁটাএ রকম সাজতে ইচ্ছে করে না?
ইন্দ্রাণী: না, এই সাজেই আমার নিজেকে বেশ লাগে। কোনও রকম এক্সপেরিমেন্টে যেতে চাই না।
রাশিদ: কেন? দিদিকে এ রকম সাজলেই ভাল দেখায়। একেবারে ভারতীয় নারীর মতো। শুধু শুধু সাজ পাল্টাতে যাবে কেন?
পত্রিকা: রাশিদজি, আপনার গান ছাড়া আর কোন বিষয়ে ইন্টারেস্ট আছে?
রাশিদ: কত রকমের মাংস রাঁধতে পারি, জানেন? ডাল গোস্ত, শাক-আলু গোস্ত, টমেটো-গোস্ত, আর্বি গোস্ত, ভিন্ডি গোস্ত... এই রকম আরও কত...
ইন্দ্রাণী: যে-হেতু অধ্যাপনাটাও আমার আর একটা পেশা, আমি খুব বই পড়ি। অন্যের গান শুনতে খুব ভাল লাগে। তবে রান্নাটান্না একেবারেই পারি না।
রাশিদ: দিদি তুমি রান্না পার কি পার না, রেঁধে না খাওয়ালে বুঝব কী করে? রেঁধে খাওয়াও একদিন...
ইন্দ্রাণী: কবে খাবি বল আমার রান্না, খেয়ে যদি সহ্য করতে পারিস, নিশ্চয়ই খাওয়াব। |
|
|
|
|
|