...গন্ধ এসেছে পটুয়াপাড়া সেই তিমিরেই
টুয়াপাড়ায় আশা ছিল পরিবর্তন আসবে। আসেনি। অঙ্কুরহাটির প্রসস্থে পটুয়াপাড়ায় প্রায় অন্ধকার স্টুডিওয় দাঁড়িয়ে বাবলু চিত্রকর বলছেন, “পুরোটাই ‘রিস্ক’, বিক্রি না হলে টাকাটাই জলে। তাই বাড়তি ঠাকুর আর এ বার গড়ছি না।”
বৃষ্টি পড়ছে অঝোরে। বহুতলের দোতলার গ্রিলদু’টিতে প্লাস্টিকের চাঁদোয়া টাঙিয়ে কোনও মতে জল আটকানোর চেষ্টা। হাওড়া ময়দানের চিন্তামণি দে রোড-সংলগ্ন সরু হারকার্টস ফার্স্ট বাই লেনে তখন আগুনে ঠাকুর শুকোচ্ছেন সুরেশ পাছাল। সুরেশবাবু বলছিলেন, “কুমোরটুলির সময় এখানেও গড়ে উঠেছিল বিশাল পটুয়াপট্টি। এখন সে জায়গায় ১০ ঘরের মতো পটুয়া আছে।”
এখানে ৩০ ঘরের ওপর পটুয়ার বাস। সামান্য ক’জনেরই ছাদ পাকা। অপরিসর জায়গা। বিনোদ চিত্রকর বলছিলেন, “পাঁচ বছর হল স্টুডিওর ছাদ পাকা করলেও ঢালাই করতে পারিনি। ছাদ চুঁয়ে জল পড়ে, ঠাকুর বিক্রি না হলে রাখার সমস্যা।” তাই পুজোর সংখ্যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঠাকুরের চাহিদা বাড়লেও বাড়তি ঠাকুর গড়ার পরিকাঠামোই নেই প্রসস্থে।
বাড়ছে ঠাকুর গড়ার জিনিসপত্রের দাম। গণেশ চিত্রকর বলেন, “মাসে ১০০ টাকায় পাঁচ টাকা সুদের হারে মহাজনের থেকে টাকা ধার নিয়েছি। বাপ-ঠাকুরদার আমল থেকে ব্যবসা চলে আসছে, আজও সরকারি লোন পাইনি। প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। এ বার ঠাকুরের দাম বাড়াতেই হবে। যদি বিক্রি না হয়, পরের বছর বিক্রি করব।”
মহিলা পটুয়া শিল্পী শচী চিত্রকর বলেন, “কয়েক বছর হল দুর্গা গড়া বন্ধ করে দিয়েছি। আগে মাকড়দহের ঘোষ বাড়িতে হরগৌরী গড়তাম। এখন সেটাও বন্ধ। বাজারদরের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারি না। তাই ছোট ছোট লক্ষ্মী, বিশ্বকর্মা, সরস্বতী, কালী প্রতিমা গড়ি।”
এরই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কারিগরের সমস্যা। আগে মেদিনীপুর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা থেকে আসতেন কারিগরেরা। কিন্তু এখন প্রতিমার প্রকৃত কারিগর পাওয়া সমস্যা। তাঁদের চাহিদাও বেড়েছে।
গলিপথের পাশে বসে কোজাগরী লক্ষ্মীর ছাঁচে পাল্প (আঠার সঙ্গে অভ্র গোলার মিশ্রণ) লাগাচ্ছেন পূর্ণিমা চিত্রকর। দরমার ঘর হেলে পড়েছে। মাটির রাস্তায় জল জমে আছে। ম্লান হেসে পূর্ণিমা বললেন, “মাঝে মাঝেই কাগজে পড়ি কলকাতার কুমোরটুলিকে নিয়ে সাজো সাজো রব। এ পটুয়াপাড়ায় পরিবর্তন আসবে কবে?”




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.