সম্পাদকীয় ২...
রাজনীতির ঘোলা জল
কাবেরী নদীর জলের ভাগ লইয়া কর্নাটকের সহিত তামিলনাড়ুর বিবাদ আবার মাথা চাড়া দিয়াছে। কাবেরীর নিম্ন অববাহিকায় অবস্থিত তামিলনাড়ুর অভিযোগ, কর্নাটক তাহাকে প্রাপ্য হইতে বঞ্চিত করিতে আপন জলাধারে জল মজুত করিতেছে। অন্য দিকে তামিলনাড়ুকে জল ছাড়িয়া দেওয়ার নির্দেশ পাইলে কর্নাটকের সরকার রাজ্যের কৃষিতে বিপর্যয় ঘনাইয়া উঠিবার শঙ্কা প্রচার করে। উভয় পক্ষের অবস্থানেই কিছু সারবত্তা রহিয়াছে। কিন্তু সমস্যাটি জটিলতর হয় রাজনীতিকদের কারণে। এই ক্ষেত্রে যেমন বিজেপি-শাসিত কর্নাটক এবং এডিএমকে-শাসিত তামিলনাড়ুর রাজনীতিকরা বিরোধের উপলক্ষকে কেন্দ্র করিয়া উগ্র প্রাদেশিকতার জিগির তুলিতে পারেন। অতীতে এ ধরনের জিগির তোলা হইয়াছে। তাহাতে প্রতিবেশীদের মধ্যে অকারণ বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়।
বিরোধ নিষ্পত্তির যে কমিটি রহিয়াছে, তাহার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের দেওয়া মীমাংসাসূত্র দুই মুখ্যমন্ত্রীর কেহই মানিতে চাহেন নাই। তামিলনাড়ুর মনে হইয়াছে, আগামী ২৪ দিন ধরিয়া তাহাকে ৯ হাজার কিউসেক জল ছাড়ার নির্দেশটি রাজ্যের প্রয়োজনের তুলনায় যৎসামান্য। আর কর্নাটকের মতে, এই পরিমাণ জল প্রতিবেশীকে ছাড়িয়া দিলে রাজ্য শুকাইয়া যাইবে। ফলে বিরোধ অব্যাহত। নদীর জলের ভাগ লইয়া বিরোধ সারা বিশ্বেই এক গভীর সমস্যা। শাত-এল-আরব জলধারার দখল লইয়া ইরাক-ইরানের এক দশকব্যাপী তুমুল যুদ্ধের ইতিবৃত্ত স্মর্তব্য। দক্ষিণ এশিয়ায় গঙ্গা ও তিস্তার জলের ভাগ লইয়া বাংলাদেশের সহিত ভারতের, সিন্ধু ও তাহাতে লীন পঞ্চনদের জলের অংশ লইয়া পাকিস্তানের সহিত ভারতের দ্বন্দ্ব এবং সম্প্রতি ব্রহ্মপুত্রের জল লইয়া চিনের সহিত জায়মান বিরোধ সমস্যাটির জটিলতা নির্দেশ করে। একাধিক দেশের মধ্যে প্রবাহিত নদীর জলের ভাগ লইয়া আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদনের নিয়ম আছে। একই দেশের বিভিন্ন প্রদেশের মধ্য দিয়া প্রবাহিত নদীর জলের ভাগাভাগি লইয়া তেমন কোনও চুক্তি নাই। যখন যেমন প্রয়োজন বা পরিস্থিতি, তদনুযায়ী কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ তাহা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করিয়াছেন। রাজ্যগুলি জলের ভাগ লইয়া রাজনীতি করিয়াছে, আর কেন্দ্রও সুযোগ মতো সেই রাজনীতির ঘোলা জলে মাছ ধরিতে চেষ্টা করিয়াছে। কৃষ্ণা, গোদাবরী, ইরাবতী ও বিপাশার জলের ভাগ লইয়া সংলগ্ন রাজ্যগুলি সংকীর্ণ প্রাদেশিকতার খেলা খেলিয়াছে। আর কোন রাজ্যে কোন দল ক্ষমতাসীন, তাহার ভিত্তিতেও কেন্দ্র সিদ্ধান্ত করিয়াছে। কাবেরীর জলের ভাগ লইয়া তামিলনাড়ুর প্রাপ্য বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ যেমন কর্নাটকের শাসক দল বিজেপির ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ মনে হইয়াছে। জল লইয়া রাজনীতি অনুশীলনের এই সম্ভাবনা বরাবরের জন্য দূর করিতে হইলে হয়তো জলপথ ও জলসম্পদের জাতীয়করণ করা ছাড়া পথ নাই। সেটাও এমন ভাবে করিতে হইবে, যাহাতে ভবিষ্যতে আদালতে মামলার পাহাড় জমিয়া গোটা প্রক্রিয়াটিকে বানচাল করিয়া দিতে না পারে। ট্রাইবুনাল বা সর্বদলীয় কমিটি, যাহাই গড়া হউক, সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলি তাহাদের নিদান না মানিলে তাহা নিষ্ফল হইতে বাধ্য। কোনও রাজ্যই বাস্তবসম্মত দাবি জানাইবে কিংবা প্রতিবেশী রাজ্যের কৃষির স্বার্থে নিজ রাজ্যের কৃষিকে জলাঞ্জলি দিবে, ইহা আশা করা মূঢ়তা। বরং সকলেই সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জল দাবি করিবে। জলকে জাতীয় সম্পদ বানাইয়া দিলে রাজ্যগুলিকে নিরস্ত করা যাইবে। কেন্দ্রীয় শাসক দলের তরফেও জল লইয়া রাজনীতি করার সুযোগ তত থাকিবে না। দীর্ঘ দশ বৎসর পর কাবেরীর জলবণ্টন লইয়া বৈঠক হইল। এই অকারণ কালক্ষেপও কেন্দ্রের রাজনীতি বইকী!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.