সম্পাদকীয় ১...
মোমবাতি তবে নিভিল
ণতন্ত্রের মূলধারায় আসিবার সুযোগ হারাইলেন অণ্ণা হজারে। তাঁহার দুই অনুগামী, অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং প্রশান্ত ভূষণ যে রাজনৈতিক দল তৈরি করিতেছেন, অণ্ণা জানাইয়া দিলেন, সেই দলের সহিত তাঁহার কোনও সংস্রব থাকিবে না। এমনকী, তাঁহার নাম বা ছবি ব্যবহারেও নিষেধ করিলেন তিনি। কোনও ব্যক্তিবিশেষ কোনও একটি রাজনৈতিক দলের সহিত যুক্ত হইবেন কি না, বা আদৌ তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের সহিতই যুক্ত হইবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত নিতান্তই ব্যক্তিগত। কিন্তু, এত দিন অণ্ণা যে পথে চলিয়াছেন, তাহার শেষে এই সিদ্ধান্তটি দুঃখজনক, তাঁহার রাজনৈতিক অপরিণতমনস্কতার পরিচায়ক। তিনি ভারতের রাজনৈতিক দলগুলির নৈতিকতা বিষয়ে সংশয়ী, এবং যেহেতু এই দলগুলিই সংসদে অধিষ্ঠিত, ফলে অণ্ণা কার্যত মানুষের স্বার্থরক্ষায় সংসদের ভূমিকা লইয়াই সন্দিহান। তাঁহার এই সংশয় তুচ্ছ নহে। বিশেষত নায়কপিপাসু ভারতে তিনি যে পরিমাণ প্রচারের আলোয় থাকিয়াছেন, তাহাতে তাঁহার এই অবস্থানটি জনমানসে তাহার প্রাপ্য গুরুত্বের অধিক পাইয়াছে। তিনি যখন প্রশ্ন তৈরি করিয়াছেন, উত্তর সন্ধান করাও তাঁহারই দায়িত্ব। সেই উত্তর দুই পথে খোঁজা সম্ভব। এক, অরাজনৈতিক অবস্থান হইতে নাগরিক সমাজ যে ভাবে খোঁজে; আর দুই, রাজনীতির পথে সংসদে প্রবেশ করিয়া। তিনি নিজের জন্য প্রথম পথটি বহু পূর্বেই বন্ধ করিয়া দিয়াছেন। পড়িয়া আছে শুধু দ্বিতীয় পথটি গণতন্ত্রের নিয়ম মানিয়া আইনসভায় নির্বাচিত হইয়া নিজের, নিজেদের মত প্রকাশ করিবার পথ। বহু বিলম্বে যখন তিনি এবং তাঁহার অনুগামীরা সেই পথের সম্মুখে উপস্থিত হইলেন, তখনই অণ্ণা রণে ভঙ্গ দিলেন। প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক, তাঁহার একমাত্র বাঞ্ছা কি দায়িত্বহীন ক্ষমতা অর্জন করা? নচেৎ, গণতন্ত্রের ভার বহনের সম্ভাবনা সৃষ্টি হওয়ামাত্র তিনি পিছু হঠিলেন কেন?
অণ্ণা হজারে রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে নারাজ বটে, কিন্তু রাজনীতিতে তাঁহার অরুচি বলিলে অনৃতভাষণ হইবে। বস্তুত, গত দেড় বৎসরে তিনি একটি বিপজ্জনক রাজনীতির চাষ করিয়াছেন দায়িত্বজ্ঞানহীনতার রাজনীতি। তাঁহার রাজনীতিতে প্রশ্ন উত্থাপনের উৎসাহ আছে, উত্তর সন্ধানের নিষ্ঠা নাই। অভিযোগ করিবার বাহুল্য আছে, সমাধানের প্রয়াস নাই। ভারতীয় যুবসমাজের একটি অংশ এই ‘সহজ’ পথেরই পথিক। তাঁহারা অণ্ণার মতো, অণ্ণা তাঁহাদের মতো। ফলে ‘আমিই অণ্ণা’ লেখা টুপি পরিয়া মোমবাতি জ্বালাইয়া বাড়ি ফেরাকেই তাঁহারা রাজনীতির পরাকাষ্ঠা ভাবিয়াছেন। অণ্ণা তাঁহাদেরই নেতা। আজ অণ্ণা ফেসবুক, টুইটারের জনসমর্থন বিষয়ে সন্দিহান হইয়াছেন, অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে বলিয়াছেন যে ওই ‘অলীক’ সমর্থন অর্থহীন। অথচ, এই সমর্থনের ঢেউয়ে চাপিয়াই রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে প্রবেশ করিয়াছিলেন তিনি। নাগরিক সমাজের আন্দোলনকে যে সীমা মানিতে হয়, ইন্টারনেটের সমর্থকদের মন রাখিতে অবলীলায় সেই সীমা অতিক্রম করিয়াছিলেন তিনি, তাঁহারা। তিনি ভিন্ন রাজনীতির কারিগর হইতেই পারেন, ভারতীয় গণতন্ত্র তাঁহাকে সেই অধিকার দিয়াছে। সাম্প্রতিক ভারতেই নাগরিক সমাজের রাজনীতির মূলধারায় প্রবেশ করিবার বহু উদাহরণ আছে। কিন্তু, সেই ভিন্ন রাজনীতি গণতন্ত্রের পরিসরের বাহিরে থাকিতে পারে না। রাস্তা রাজনীতির আদর্শ মঞ্চ নহে। মোমবাতির আলোয় প্রচলিত রাজনীতির অন্ধকার দূর হয় না। দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের যে দাবি তাঁহার উত্থানের বীজমন্ত্র, গণতন্ত্রের ভিতরে ঢুকিয়া সেই প্রশাসন তৈরি করিবার সুযোগ অণ্ণার সম্মুখে আসিয়াছিল। তিনি তাহা হারাইলেন। অতঃপর তাঁহার মুখে রাজনীতিকদের সমালোচনা বড় বেমানান হইবে। তাঁহার রাজনীতির মোমবাতি নিভিল। তিনি স্বয়ং নিভাইয়া দিলেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.