ইসলাম-বিরোধী সিনেমাকে ঘিরে প্রতিবাদ এ বার ছড়িয়ে পড়ল পাকিস্তানের অন্য শহরগুলোতেও। গত কালই ইসলামাবাদের কূটনৈতিক এলাকা ‘রেড জোন’-এ ঢুকে বিক্ষোভ দেখান বহু মানুষ। এই ঘটনায় আহত হন পুলিশ-সহ প্রায় ১০০ জন।
ফিল্মটির বিরুদ্ধে ‘শান্তিপূর্ণ’ প্রতিবাদ জানাতে এমনিতেই আজ সারা দেশে ছুটি ঘোষণা করেছিল পাক প্রশাসন। তার মধ্যেই দেশের নানা প্রান্তে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ হিংসাত্মক চেহারা নিল এ দিন। গোটা দেশে সারা দিনে কমপক্ষে কুড়ি জন নিহত হয়েছেন এই বিক্ষোভে।
আজ পেশোয়ারের দুটি সিনেমা হলে আগুন জ্বালিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা। এর মধ্যে জিন্না পার্ক সংলগ্ন সিনেমা হলটিতে চড়াও হয় প্রায় একশো জনের একটি দল।
আগুন লাগানোর আগে সেখানে অবাধে ভাঙচুর চালায় তারা।
এদের তাণ্ডবের হাত থেকে রেহাই পায়নি আশপাশের ছোট দোকানও। এর পরে স্থানীয় চেম্বার অফ কমার্সেও আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে শেষ পর্যন্ত শূন্যে গুলি চালায় পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রতিবাদীরাও নিরস্ত্র ছিলেন না। পাল্টা গুলি ছোড়েন তাঁরাও। এই গণ্ডগোলের মধ্যেই সিনেমা হলের বাইরে থাকা এক টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকের গায়ে গুলি লাগে। পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় মহম্মদ আমির নামের ওই সাংবাদিকের। |
রাওয়ালপিন্ডির বিভিন্ন রাস্তাতেও এ দিন প্রতিবাদে সামিল হন বহু মানুষ। রাওয়ালপিন্ডির শহরতলিতে বেশ কয়েকটি গাড়ি ও একটি টোল প্লাজাও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। লাহৌরের সার্কুলার রোডেও রাস্তা আটকে টায়ার পুড়িয়ে দেয় জনতা। করাচিতে বিক্ষোভ সামাল দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন এক পুলিশকর্মী।
আজ বিক্ষোভের মধ্যেই কোনও রকম গুজব যাতে আর না ছড়িয়ে পরে, তাই সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যে ছ’টা পর্যন্ত দেশের ১৫টি শহরে মোবাইল পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। এই তালিকায় রয়েছে ইসলামাবাদ, পেশোয়ার, লাহৌর, রাওয়ালপিন্ডি, করাচির মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলি।
মানুষ যাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ দেখাতে পারেন তাই আগে থেকেই আজ ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। ফলে সকাল থেকেই দেশ জুড়ে ব্যাহত হয় স্বাভাবিক জনজীবন। বন্ধ ছিল স্কুল, কলেজ, ব্যাঙ্কের মতো প্রতিষ্ঠান।
পাক প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরফ বলেন, এই সিনেমা দেড়শো কোটি মুসলিমকে আহত করেছে। তাঁর মতে, এই আক্রমণ ইচ্ছাকৃতই। আমেরিকার বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী হিনা রব্বানি খারও। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, বাক্ স্বাধীনতার নামে সব কিছুই মেনে নেওয়া যায় না।
আজ মার্কিন রাষ্ট্রদূত রিচার্ড হগল্যান্ডকে ডেকে পাঠিয়ে ইসলাম-বিরোধী সিনেমা ও ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও সম্পর্কে নিজেদের কড়া মনোভাব জানিয়েছে পাকিস্তান বিদেশ মন্ত্রক।
ক্ষোভ প্রশমনে ব্যবস্থা নিচ্ছে ওবামা প্রশাসনও। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টনকে নিয়ে তিরিশ সেকেন্ডের এক বিজ্ঞাপন তৈরি করা হয়েছে যা দেখানো হচ্ছে পাক টিভি চ্যানেলে। সাধারণ মার্কিনদের যে ইসলাম সম্পর্কে এই ধারণা নয়, ওই বিজ্ঞাপনে তাই জানিয়েছেন তাঁরা। |