তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ড বন্ধ করে দেওয়া এবং বর্ধমান শহরের ভিতর দিয়ে বড় বাস চলতে না দেওয়ার বিরোধিতায় নামল সিপিএম। তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদ (বিডিএ) এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ, শনিবার শহরের দু’প্রান্তে দু’টি বাসস্ট্যান্ড চালু হওয়ার কথা। এর মধ্যে নবাবহাট বাসস্ট্যান্ডের উদ্বোধন করেছিলেন পূর্বতন বাম সরকারের শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন। আজ আলিশায় বাসস্ট্যান্ড উদ্বোধন করার কথা পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্রের।
কিন্তু তার আগেই, শুক্রবার শহরে বড় বাস চলাচল বন্ধের প্রতিবাদে সাংবাদিক বৈঠক করেন সিপিএম পরিচালিত জেলা পরিষদের সভাধিপতি উদয় সরকার এবং পুরপ্রধান আইনুল হক। তাঁদের বক্তব্য, মঙ্গলবার থেকেই তিনকোনিয়া স্ট্যান্ডে বাস ঢোকা বন্ধ করিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। ওই স্ট্যান্ডের মালিকানা বর্ধমান পুরসভার। অথচ তাদের কিছুই জানানো হয়নি। দুই নেতার অভিযোগ, শহরে মূল যানজট তৈরি করে মালবাহী ট্রাক। অথচ স্টেশন সংলগ্ন গুডস শেড সরানোর কোনও পরিকল্পনাই কার্যকর করা হয়নি। স্টেশনের সামনের পরিত্যক্ত রেল কোয়ার্টারগুলি সরিয়ে জি টি রোড চওড়া করার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়নি। রেল ওভারব্রিজ সংলগ্ন রাস্তা নতুন করে সম্প্রসারিতও করা হয়নি। বাইপাসের চারপাশে যে সার্ভিস রোড তৈরির কথা ছিল, তাও হয়নি।
জেলা সভাধিপতি ও পুরপ্রধানের মতে, বাস ঢুকতে না পারলে শহরের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়বে। শুধু শহরের দু’প্রান্তে দু’টি বাসস্ট্যান্ড চালু করে নাগরিকদের সমস্যায় ফেলে দেওয়া হচ্ছে। অথচ ঘটনা হল, ওই দুই বাসস্ট্যান্ড তৈরির মূল পরিকল্পনা ছিল বাম আমলে নিরুপম সেনের নেতৃত্বাধীন থাকা বিডিএ-ই। |
লোকসভা নির্বাচনের মুখে শহরের উপকন্ঠে তৈরি হওয়া নবাবহাট বাসস্ট্যান্ডের উদ্বোধনও হয়। যদিও দক্ষিণ বর্ধমানের দিকে যাতায়াতের বাসগুলির এই স্ট্যান্ডে থাকার কথা হলেও বাড়তি খরচের অজুহাতে কোনও বাসই সেটি ব্যবহার করেনি। কিন্তু গত বছর বিধানসভা ভোটের পরে বিডিএ-র ক্ষমতা পেয়ে তৃণমূলও এখন নতুন বাসস্ট্যান্ডই চালু করতে চাইছে।
এ দিন বর্ধমান জেলা পরিষদের হলে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক বৈঠকে সভাধিপতি ও পুরপতি বলেন, “উন্নয়নের প্রশ্নে আমরা কোনও বিরোধিতা করছি না। কিন্তু যে উন্নয়নের ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকে না, সেই সভায় আমন্ত্রণ পেয়েও আমরা যাব না।’’ পুরপ্রধানের বক্তব্য, “বিডিএ-র উন্নয়ন সংক্রান্ত কোনও বৈঠকে আমাদের ডাকা হয়নি। সদস্য রাখা তো দূরের কথা। যদি দেখি শহরে বড় বাসের চলাচল আটকানোর যথেচ্ছ সিদ্ধান্তে মানুষের চূড়ান্ত অসুবিধা হচ্ছে, আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।” তাঁদের অভিযোগ, বর্ধমান শহরের উন্নয়নের জন্যে বিডিএ টাকা দিচ্ছে না। উল্টে এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ করছে বিডিএ। পুরসভার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি টাকা খরচ নিম্নমানের রাস্তা তৈরি হচ্ছে। নলকূপ বসানো হলেও তা দ্রুত অকেজো হয়ে পড়ছে।
জেলা বাস মালিক সমিতির গত ১৯ সেপ্টেম্বরের একটি চিঠি দেখিয়ে পুরপ্রধান বলেন, “সমিতি আমায় চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, ১৮ তারিখ রাত থেকে তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ডে জোর করে বাস ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। অথচ এই ব্যাপারে আগে কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি। আমি জেলাশাসককে চিঠি লিখে জোর করে বাস না ঢুকতে দেওয়ার কারণ জানতে চেয়েছি। তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থাও নিতে বলেছি।” জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা অবশ্য বলেন, “আমি পুরপ্রধানের কোনও চিঠি পাইনি। একটা কথাই বলতে পারি। বাসের পারমিট সম্প্রসারণের জন্য তিনকোনিয়ায় একটি শিবির করা হয়েছে। যদি বাসই সেখানে না ঢুকবে, ওই শিবির শুক্রবারও চলল কী করে?”
বিডিএ-র চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “শহরের অর্থনীতি নিয়ে যাঁরা চিন্তা করছেন, তাঁদের আমলেই তো অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল! ওরা বাসস্ট্যান্ড চালু করতে পারেননি। সেটা আমরা করছি।” সেই সঙ্গে তাঁর আশ্বাস, “তিনকোনিয়ার ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন দেওয়ার কথা আমরা বিবেচনা করব।” |