দুই কোচের অঙ্কই আজ বেটোকে ঘিরে
কাঞ্চনজঙ্ঘায় আজ লড়াই ভারতীয় ফুটবলের ‘বর্তমান বেকহ্যাম’ বনাম ‘প্রাক্তন বেকহ্যাম’-এর!
দারুণ ফ্রিকিক মারেন বলে বেটো ডি’সিলভাকে তাঁর চার্চিল সতীর্থরা বলেন ‘আমাদের বেকহ্যাম’। আর কৃশানু দে-বিকাশ পাঁজিদের এক সময়ের সতীর্থ মোহনবাগান কোচ সন্তোষ কাশ্যপ ডান পায়ে দুর্দান্ত ফ্রিকিক মারতেন। প্রচুর গোল করেছেন। বিভিন্ন সময়ে মুম্বইয়ের কাগজগুলো হেডিং করেছিল, ‘বেকহ্যাম অফ ইন্ডিয়ান ফুটবল।’
ফেড কাপের প্রথম ম্যাচে মোহনবাগান বনাম চার্চিল ব্রাদার্সের ‘যুদ্ধ’-র আড়ালে আসল লড়াই কিন্তু দুই ‘বেকহ্যামের’।
ভারতীয় ফুটবলকে তালুর মতো চেনা সুভাষ ভৌমিকের যাবতীয় স্ট্র্যাটেজি তৈরি হচ্ছে তাঁর ব্রাজিলিয়ান অ্যাটাকিং মিডিও কাম স্ট্রাইকারকে ঘিরে। এতটাই যে, বুধবার সকালে হোটেলের সোফায় গা এলিয়ে বসে চার্চিল কোচ যেন হেঁয়ালি রেখে দিলেন, “বেটোকে ভাবছি লেফট উইং-এ খেলাব। কারণ ওকে তো মার্কিং করবেই। করুক। একজন তো মাঝখান থেকে ওদেরও সরে গেল।”
খুশির মেজাজে মোহনবাগান। প্র্যাক্টিসের ফাঁকে টোলগে-নবি।
অন্য দিকে কোচিং জীবনে প্রথম বার ধারে এবং ভারে দেশের অন্যতম সেরা টিমের দায়িত্ব নিয়ে সন্তোষ কাশ্যপের মাথায়ও শুধুই বেটো। অনুশীলনের পর তিনি বলে দিলেন, “বেটোকে নিয়ে আমাদের একটা স্ট্র্যাটেজি আছে, সেটা কাল বুঝতে পারবেন।” কিন্তু কী সেই স্ট্র্যাটেজি? হোটেলের ক্লাস রুম থেকে চুঁইয়ে যে খবর বাইরে বেরোচ্ছে তা হল: নিজেদের বক্সের আশেপাশে কোনও মতেই ফাউল করা যাবে না বলে ডিফেন্ডারদের কড়া বার্তা দিয়ে রেখেছেন মোহন-কোচ।
কিন্তু যাঁকে নিয়ে স্বস্তি এবং উদ্বেগ দুই শিবিরে সেই বেটো কিন্তু নিশ্চিত যে সুযোগ পেলে কেল্লা ফতে করে দেবেন। “হেয়ার স্টাইলটা যেমন বদলেছি। ফ্রি কিকেও কিছু নতুনত্ব এনেছি গত আড়াই মাসে। সুযোগ পেলে দেখাব কাল।
‘প্রাক্তন বেকহ্যাম’।
কোচ আমাকে নিয়ে কিছু নতুন স্ট্র্যাটেজি তৈরি করছেন, সেটা এখন বলব না। ওদের ইচে শুনলাম বক্সের আশেপাশে ফাউল করে। দেখা যাক,” বলে দিলেন হোসে ব্যারেটোর অভিন্ন হৃদয় বন্ধু। যিনি মনে করেন, টোলগেকে এনে ব্যারেটোর অভাব পুষিয়ে নিয়েছে মোহনবাগান।
এটা ঘটনা যে পজিশন ধরে ওয়ান টু ওয়ান হিসাব করলে বাংলা এবং গোয়ার ক্লাবের ফারাক অনেক। মোহনবাগানের অস্ত্র ভান্ডারে ওডাফা, টোলগে, রহিম নবি, নির্মল ছেত্রী, জুয়েল রাজা, রাকেশ মাসির মতো তারকা। চার্চিলে তারকা বলতে বেটো, স্টিভন ডায়াস, সদ্য নেহরু কাপ জিতে ফেরা দলের সদস্য লেনি আর ফ্র্যাঙ্কো।
“এটা ঠিক যে ওদের দলে ভারি ভারী নাম আছে। গুড, ব্যালান্সড সাইড। কিন্তু সেটা ভেবে আমি কী করব? আমাদের সব জুনিয়র ছেলে। পরিশ্রম করেছে। সবাই ফিট। মাঠে নেমে এ বার প্রমাণ করতে হবে ওদের,” ধুরন্ধর এবং চতুর চার্চিল কোচ ম্যাচের ২৪ ঘণ্টা আগে স্বভাববিরুদ্ধ ভাবে অতি বিনয়ী! কিন্তু আপনি তো কোচ হিসাবে সব সময়ই একটা বড় ফ্যাক্টর? সব ট্রফি পেলেও ফেড কাপ কখনও জেতেননি কোচ সুভাষ। প্রশ্ন শুনে তিনি আবার দার্শনিক! “আরে রহিম নবি তো ঠিকই বলেছে কোচ কি মাঠে নেমে খেলবে?”
বরং গর্জন শোনা গেল বিকেলে। মোহনবাগান অনুশীলনের পর। “আমরা জিতবই। ছেলেদের মধ্যে জেতার একটা খিদে তৈরি হয়েছে। নব্বই মিনিট পর দেখবেন আমরাই জিতে ফিরছি,” ঘিরে ধরা মিডিয়াকে বলে দিয়েছেন সন্তোষ। পাশাপাশি হাসতে হাসতে মোহন-কোচের মন্তব্য, “আমার এ, বি, সি, ডি সব স্ট্র্যাটেজিই তৈরি।”
শিলিগুড়ির হোটেলে ‘বর্তমান বেকহ্যাম’।
বিনয় আর গর্জনের আড়ালে অঙ্ক কষা চলছেই দু’দলে। ওডাফা-টোলগে জুটিকে ‘ও-টো’ বলে ডাকা শুরু হয়েছে। চার কোটির মহানায়কদের থামাতে লেবাননের জাতীয় দলের ডিফেন্ডার বিলাল শেখ নার্জারিনকে ব্যবহার করবেন বলে ঠিক করে ফেলেছেন সুভাষ। বিপক্ষের দুই স্টপার ইচে-খেলেম্বাকে চাপে রাখতে হেনরি আর বিনীশ বালানকে স্ট্রাইকারে ব্যবহার করতে চান তিনি। বেটো খেলবেন একটু পিছন থেকেরোমিং অ্যাটাকিং মিডিও হিসাবে।
সন্তোষের অঙ্কে আবার আক্রমণের ধার বাড়াতে রহিম নবিকে চলে যেতে হচ্ছে লেফট মিডিও পজিশনে। নবি এ দিন অনুশীলন করেননি। সামান্য খোঁড়ালেও ওডাফা নেমেছেন এবং দু’টো গোলও করেছেন। মোহনবাগানের অনুশীলন দেখে মনে হল মাঝমাঠে নবির সঙ্গে মাসি, জুয়েল, ডেনসনই কোচের প্রথম পছন্দ। ডিফেন্সে নির্মল, ইচে, খেলেম্বা আর ফিনাই। টোলগে বলছিলেন, “আমাদের রক্ষণ ভাল খেলেছে। চার্চিলের হেনরি কিন্তু গত বার বেশ ভাল খেলেছিল। বেটোর মতোই ওকেও কড়া পাহারায় রাখতে হবে। এই ম্যাচ খুব গুরুত্বপূর্ণ। জিততেই হবে।”
মজা হল, দু’দলের কোচ যে স্ট্র্যাটেজি তৈরি করছেন তা শুধুই নাম দেখে। কারণ সুভাষ বা সন্তোষ কেউই প্রতিপক্ষ টিমের খেলা দেখেননি এ বার। সবচেয়ে বড় কথা, সেই অর্থে প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টে মোহনবাগান বা চার্চিল কেউই শক্তিশালী প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হয়নি। চার্চিল শুধু ১১-১২-টা অনুশীলন ম্যাচ খেলেছে। ফলে শেষ পর্যন্ত কোন কোচের কোন অঙ্ক কার্যকর হবে তা বলা কঠিন।
ম্যাচে কিন্তু বড় ভূমিকা নিতে পারে বৃষ্টি এবং মাঠের ঘাস। এবং অবশ্যই নতুন উদ্বোধন করা ফ্লাডলাইট। কোনও দলই যা দেখার সুযোগ পায়নি বুধবার। এখানে এ দিন তেমন বৃষ্টি না হলেও পাহাড় ঢেকে রয়েছে মেঘে। যে কোনও সময় নামতে পারে বৃষ্টি।
সন্তোষ না সুভাষবৃষ্টি হলে কোন ‘স’ সুবিধা পায় সেটা দেখার জন্য বন্ধের দিনেও মুখিয়ে থাকবে কাঞ্চনজঙ্ঘা।

ছবি: শঙ্কর নাগ দাস




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.