গাড়ি-বিমা
অচল মান্ধাতার বিমাও
গাড়ি কিনলেই তার জন্য বিমা করা আইনত বাধ্যতামূলক। তাই গাড়ি কেনার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি-বিমাও করে ফেলি আমরা। কিন্তু তার জন্য আদৌ কতটা চিন্তা-ভাবনা বরাদ্দ থাকে? দেশ-বিদেশের এত সংস্থা যে এখন নিত্য-নতুন বিমা প্রকল্প বাজারে আনছে, তারই বা খবর আমাদের কাছে কতটুকু?

গোড়ার কথা
হালফিলে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থার হাত ধরে নানা উদ্ভাবনী বৈশিষ্ট্য নিয়ে বাজারে পা রাখছে রকমারি গাড়ি-বিমা প্রকল্প। কিন্তু সেই খুঁটিনাটিতে যাওয়ার আগে একটি বিষয় পরিষ্কার করে নেওয়া জরুরি। তা হল, গাড়ি কেনার সময়েই আইন মেনে যে-বিমা আমরা করি, তার থেকে কী কী সুবিধা পাওয়া সম্ভব?
ধরা যাক, সুবিধার জন্য একে ‘মূল প্রকল্প’ নাম দিচ্ছি আমরা। সাধারণত এর থেকে ৩টি সুবিধা আদায় করা সম্ভব
দুর্ঘটনায় মালিক বা চালক মারা গেলে বা স্থায়ী ভাবে পঙ্গু হয়ে গেলে ক্ষতিপূরণ মেলে।
দুর্ঘটনাজনিত কারণে গাড়ির ক্ষতি হলে, সারানোর খরচ দেয় বিমা সংস্থা। চুরি গেলে বা অকেজো হলেও পাওয়া যায় বিমার পুরো টাকাই।
গাড়ির ধাক্কায় মৃত বা আহত ব্যক্তির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার খরচ পর্যন্ত পেতে পারেন বিমার টাকা থেকে। অনেক সময়ে দুর্ঘটনায় অন্য কারও সম্পত্তি (ধরা যাক, দোকানঘর) ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, তার জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যয়ভার বহন করে বিমা সংস্থাটি।

সঙ্গে বাড়তি সুবিধা পেতে...
এখন নতুন যে সব বিমা বাজারে আসছে, তাতে মূল প্রকল্পের তিন সুবিধা তো থাকছেই। সঙ্গে যোগ হচ্ছে একগুচ্ছ বাড়তি পরিষেবা। তবে সেই সুবিধা (রাইডার) আলাদা ভাবে কিনতে হবে গাড়ির মালিককে। গুনতে হবে বাড়তি টাকাও। ঠিক কতটা বেশি টাকা আপনাকে এ জন্য দিতে হবে, তা নির্ভর করছে কী ধরনের সুবিধা আপনি চাইছেন, তার উপর। দেখতে হবে গাড়ির মডেল এবং তার বয়সও।
সুবিধার রকমফের
প্রধানত চার ধরনের অতিরিক্ত সুবিধাযুক্ত প্রকল্প পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। এগুলি হল
পুরনো গাড়ির যন্ত্রাংশেও পুরো টাকা। ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে যে কোনও যন্ত্রেরই ক্ষয় হয়। গাড়ি বা তার যন্ত্রাংশও এর ব্যতিক্রম নয়। একেই ডেপ্রিশিয়েসন বলি আমরা। তাই চিরাচরিত প্রকল্পগুলিতে নতুন গাড়ির জন্য বিমার টাকা যতটা পাওয়া যায়, পুরনো গাড়িতে ততটা মেলে না।
কিন্তু এখন ‘জিরো ডেপ্রিশিয়েসন কভার’ প্রকল্পে সেই অসুবিধা এড়াতে পারেন গ্রাহক। কারণ এই সুবিধাযুক্ত প্রকল্প কিনলে, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত কোনও গাড়ির যন্ত্রাংশ বদলানোর জন্য তার পুরো দামই পেয়ে যাবেন তিনি। মূল প্রকল্পে টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশের দাম থেকে ডেপ্রিশিয়েসনের (‘ব্যবহারজনিত ক্ষয়ক্ষতি’) খরচ বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু এই প্রকল্পে সেই অসুবিধা নেই। ফলে, গাড়ি যত পুরনোই হোক না-কেন, যন্ত্রাংশের পুরো দামই মিটিয়ে দেবে বিমা সংস্থা
পথের সাথী। গ্যারাজ থেকে গাড়ি পথে নামার পর বহু ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারেন আপনি। তার সুরাহার আশ্বাস নিয়েই বাজারে এসেছে ‘রোড-সাইড আসিসট্যান্স’ ধাঁচের প্রকল্প। এই সব প্রকল্পের জন্য প্রিমিয়ামের টাকা এক বার দিয়ে রাখতে পারলে, একগুচ্ছ সুবিধা আপনার হাতের মুঠোয়। যেমন
দুর্ঘটনায় পড়লে হাসপাতালে যাওয়া ও চিকিৎসার খরচ। দেওয়া হতে পারে সহযাত্রীদের হোটেলের খরচও।
লম্বা সফরে গাড়ি খারাপ হলে, তা কাছের সার্ভিসিং সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা এবং মেরামতে অর্থ সহায়তা।
মেরামতিতে সময় বেশি লাগলে, প্রয়োজনে এক দিন হোটেলে থাকার খরচ। বাজারে এমন প্রকল্পও রয়েছে, যাতে শুধু গাড়ির মালিক বা চালক নন, হোটেলে থাকার খরচ পাবেন ৮ জন পর্যন্ত যাত্রী।
দীর্ঘ যাত্রায় হঠাৎ জ্বালানি ফুরোলে এক ঘণ্টার মধ্যে গাড়ির কাছে পৌঁছবে ৩ লিটার তেল।
সব সময়ের ‘ইঞ্জিন-বন্ধু’। চিরাচরিত প্রকল্পে একমাত্র দুর্ঘটনায় ইঞ্জিন বিগড়ালে, তবেই তা সারাতে বিমার টাকা পাবেন আপনি। কিন্তু তা ছাড়াও তো বিভিন্ন কারণে ইঞ্জিন খারাপ হতে পারে। এই যেমন ধরুন, বর্ষায় রাস্তার জমা জল ঢুকেই হয়তো খারাপ হয়ে গেল আপনার সাধের গাড়ির ইঞ্জিন। তখন কিন্তু ত্রাতার ভূমিকা নিতে পারে ‘ইঞ্জিন প্রোটেকশন কভার’ প্রকল্প। কারণ, এই বিমা করা থাকলে, দুর্ঘটনা ছাড়াও নির্দিষ্ট কিছু কারণে ইঞ্জিনের ক্ষতি হলে, তা মেরামতের টাকা পাবেন গ্রাহক।
পুরনো গাড়িতেও নতুনের দাম। গাড়ি চুরি গেলে কিংবা দুর্ঘটনায় গাড়ি প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হলে, চিরাচরিত বিমা থেকে এমনিতেই টাকা পান গ্রাহক। কিন্তু তা বলে নতুন গাড়ির দাম পাওয়া যায় না। কারণ, এ ক্ষেত্রেও ডেপ্রিশিয়েসনের (‘ব্যবহারজনিত ক্ষয়ক্ষতি’) খরচ বাদ দেওয়া হয় গাড়ির দাম থেকে। যে কারণে, গাড়ি পুরনো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতি বছরই কমতে থাকে বিমাকৃত টাকার অঙ্কও।
কিন্তু ‘ইনভয়েস প্রাইস কভার’ প্রকল্পের সুরক্ষা থাকলে, এই সমস্যাও এড়াতে পারেন আপনি। কারণ এই প্রকল্প কিনলে, গাড়ি চুরি কিংবা দুর্ঘটনায় একেবারে নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর নতুন গাড়ির দামই পেয়ে যাবেন আপনি। অর্থাৎ, একেবারে প্রথমে বিমা করার সময়ে যে-দামের উল্লেখ ছিল, সেই অর্থই মিটিয়ে দেবে সংস্থা। কিছু সংস্থা আবার ফিরিয়ে দেয় এককালীন রোড-ট্যাক্সের টাকাও।

অতএব ভেবে-চিন্তে...
গাড়ি বিমা সাধারণ বিমারই অঙ্গ। এবং দেশের আইন অনুযায়ী, গাড়ি কেনার সময়েই থার্ড-পার্টি বিমা করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু শুধু আইন বাঁচানোর জন্যই বিমা করে তো কোনও লাভ নেই। বরং তা করার আগে একটু ভেবে নেওয়া জরুরি। চিন্তা করা উচিত, মূল প্রকল্পের পাশাপাশি আর কোন কোন অতিরিক্ত পরিষেবা বিমা সংস্থার কাছ থেকে পেলে সুবিধা হবে আপনার। সেই অনুযায়ী বাছাই করা উচিত প্রকল্প। কে বলতে পারে, মাঝ রাস্তায় ঘোর বিপদে এক দিন সেই প্রকল্পের জন্যই “ভাগ্যিস করেছিলাম” ভাববেন না আপনি?

মনে রাখুন
আইন বাঁচানোই শেষ নয়। ভাবুন নিজের প্রয়োজনও।
প্রয়োজন মিটবে কি না দেখতে মিলিয়ে নিন পলিসির নথি।
গাড়ি চুরি গেলে পেতে পারেন নতুনের দামও।
মেলাতে হবে
পলিসিতে নাম-ঠিকানা ঠিক আছে তো।
মেয়াদ স্পষ্ট তো?
কত টাকার বিমা করা হচ্ছে (সাম অ্যাশিওর্ড), তা পরিষ্কার কি না।
মূল পলিসির সঙ্গে অতিরিক্ত সুবিধার (রাইডার) নথি নিয়েছেন তো?

তথ্য সহায়তা: শুভাশিস মজুমদার
(বজাজ অ্যালায়েঞ্জ জেনারেল ইনশিওরেন্সের রিজিওনাল ম্যানেজার ও ভাইস প্রেসিডেন্ট)
কে এন মুরলী
(ভারতী-অ্যাক্সা জেনারেল ইনশিওরেন্সের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.