রবিবাসরীয় প্রবন্ধ ১...
কাসভের ফাঁসি চাই না
লেখার নামটা পড়ে, যাঁরা আমাকে দেশদ্রোহী চিহ্নিত করে আরাম পেলেন, যাঁরা ভেবে নিলেন, এই দেশ, এই রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের অধীনে থাকা পৃথিবীর এই বিরাট অঞ্চল, সেখানে বসবাসকারী মানুষদের প্রতি আমার বিন্দুমাত্র ভালবাসা নেই, তাঁদের ভাল-মন্দ বিপদ-আপদ নিয়ে আমার কোনও চিন্তা নেই, তাঁদের সকলকে আমার শুভেচ্ছা জানিয়ে, সজ্ঞানে, আমি এই রাষ্ট্রের কাছে এবং জনগণের কাছে, কাসভের মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাহার করার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।
না, ভুল হয়নি। জনগণের কাছেও আবেদন জানাচ্ছি, কারণ আমি বিশ্বাস করি, জনসাধারণের মনেও কাসভের একটা বিচার হয়েছে। আমরা প্রত্যেকে তাঁর মৃত্যুদণ্ড চেয়েছি। রাষ্ট্র যতটা সভ্য ভাবে, একটা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গোটা ব্যাপারটাকে নিয়ে গিয়ে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছে, আমরা মোটেই অতটা ভদ্র ভাবে চাইনি। আরও হিংস্র, আরও নিষ্ঠুর, আরও পাশবিক আক্রমণে কাসভকে ছিঁড়ে খেয়ে ফেলতে পারলে তবে আমাদের জ্বালা জুড়োত। আমরা যে শুধু চেয়েইছিলুম, তাও নয়, আমরা নিশ্চিতও ছিলুম যে কাসভের মৃত্যুদণ্ডই হবে। সারা দুনিয়া নিশ্চিত ছিল। আমার মনে হয়, কাসভ নিজেও নিশ্চিত ছিলেন। কিন্তু, তা হলে আর বিচার-টিচার এত কাণ্ড হল কেন? অনেকেই কাসভকে বন্দি করে রাখা আর বিচার করার পেছনে কোটি-কোটি টাকার খরচ নিয়ে কথা তুলছেন। সত্যিই তো, আমরা যখন জানিই যে আমরা সেই মারবই, তখন কেন এতদিন বাঁচিয়ে রাখা হল? এমন তো নয় যে আমরা বিনা বিচারে মারি না। এমন তো নয় যে দুনিয়ার বড় বড় দেশগুলো, যাদের একত্রে আমরা আন্তর্জাতিক দুনিয়া বলে সম্মান করি, তারা বিনা বিচারে মারে না। খোদ আমেরিকা যে ভাবে গোটা দুনিয়ার আড়ালে ওসামা বিন লাদেনকে মারে, মেরে পুঁতে দেয় জলের তলায়, বডির একটা পোস্টমর্টেম পর্যন্ত হয় না, সে নিয়ে আমাদের তো কোনও অসুবিধা নেই। যাঁরা ভীতু, তাঁরা তো এ ভাবেই মারেন। তাঁরা যাঁকে অপরাধী মনে করেন, বিপজ্জনক মনে করেন, তাঁকে ধরে কোনও দিন জনসমক্ষে আনেন না, কোনও ঘোষিত আইনে বিচার করেন না, তাঁকে বলতে দেন না, দুনিয়ার লোককে শুনতেও দেন না, সরাসরি সিদ্ধান্ত নেন। শুধু আমেরিকা-আমেরিকা করে লাভ নেই, যাঁরা আমেরিকা-আমেরিকা করেন, তাঁরাও তাই। লাদেনও তাই, সাদ্দামও তাই, কোটেশ্বর রাও-ও তাই। কোটেশ্বরকে যাঁরা মারেন, তাঁরাও কিছু আলাদা নন। এই পৃথিবী সিধে রাস্তায় চলে। আমায় যে মারে, আমিও তাকে মারি, সিম্পল। এর মধ্যে মানবাধিকার বলে কিছু নেই, থাকতে পারে না। তাই, কোনও মানবাধিকার সংগঠন কাসভ নিয়ে কোনও কথা বলছে না। যাঁরা ধনঞ্জয়ের বেলা এত-এত কথা বলেছিলেন, যাঁরা গোটা বিশ্বে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে সরব, তাঁদেরও কাউকে আমি অন্তত কিছু বলতে শুনিনি। এই বিষয়ে কোনও সাংবাদিক সম্মেলনে কোনও রাষ্ট্রনায়ককে বসে তোতলাতে হয়নি, বলতে হয়নি, ওরা যখন মারে, তখন তো মানবাধিকার নিয়ে কথা তোলেন না! কারণ, কোনও সাংবাদিক তেমন প্রশ্নই করেননি। আমরা যারা কথায় কথায় কোর্টকাছারি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করি, এই যে এত ফিল্মে-লেখায়-নাটকে বিচারব্যবস্থার নানা দিক নিয়ে নিন্দেমন্দ হয় (এমনকী আমাদের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সেন্সর বোর্ডও যে কথাগুলো কেটে বাদ দেয় না), এই যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এই নিয়ে কটাক্ষ করেন এবং আমরাও মনে মনে বোধহয় সে রকমই বিশ্বাস করি, সেই আমরা, সেই সক্কলে আমরাও শুধু এই একটি ক্ষেত্রে এক বারও সন্দেহ প্রকাশ করিনি যে বিচার ঠিক করে হয়েছে কি না। আমরা জানি, বিচার ঠিক হয়েছে। কারণ, আমার নৈতিকতা, আমার বিশ্বাস, আমাদের সকলের ইচ্ছের সঙ্গে বিচারের বাণী মিলে গেছে। ব্যস।
ছবি: সুমন চৌধুরী
অনেকে বলছেন, আসলে পাকিস্তান সম্পর্কে যে অভিযোগগুলো আমরা এত বছর ধরে করে এসেছি ওই দেশের মাটি থেকেই যে এখানে সন্ত্রাস রফতানি করা হচ্ছে তার অকাট্য প্রমাণ হাজির করার জন্য এই তদন্ত, মামলা ইত্যাদির বিশেষ প্রয়োজন ছিল। পাকিস্তানকে চাপে ফেলার জন্য, চাপে রাখার জন্য দরকার ছিল। এও শুনেছি, ভারতের নিজেকে সভ্য দেশ হিসেবে তুলে ধরারও দায় আছে। এই যে আমাদের ব্যবস্থায় এক জন আক্রমণকারী বিদেশিকেও বিচার দেওয়া হয়, সেটা বলার আছে। যদি তাইও হয়, খারাপ কী? চাপ হোক, কৌশল হোক, অন্য তাড়না থেকেই হোক, অন্তত বিচারটা যে যত্ন করে করা হল, যথেষ্ট সময় এবং সব পক্ষকে যথেষ্ট সুযোগ দিয়ে করা হল, এটাই তো অনেক বড় পাওয়া। সত্যিই আমার ভাল্লেগেছে। মানবতা নিয়ে বাতেলাকারী অনেক বড় বড় রাষ্ট্র, অনেক বড় বড় সংগঠন এটা করে দেখাতে পারে না। আমার রাষ্ট্র পেরেছে। আমি গর্বিত।
আমার অন্য প্রশ্ন আছে। চে গেভারা-র মরণ হল বলিভিয়ায়। যদ্দুর জানি তিনি আর্জেন্টিনার লোক। ফিদেল কাস্ত্রো-রা যখন কিউবায় ক্ষমতাদখলের যুদ্ধে নামলেন, চে-ও তাতে শামিল হলেন, নেতৃত্ব দিলেন, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেন। তার পর একটা সময় তিনি কঙ্গোতে গেলেন, একই কাজ করতে। শেষে বলিভিয়ায়। সেখানে বলিভিয়ার বাহিনী, সঙ্গে সিআইএ-র লোকজনও ছিল, তাদের হাতে ধরা পড়লেন এবং তাঁকে হত্যা করা হল। গল্পটা এই ভাবে বললাম, কারণ এই ভাবে বললে চে-কে তিন-তিনটে বিদেশি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বা ষড়যন্ত্রে শামিল হওয়া বা নেতৃত্বদানের অপরাধে অভিযুক্ত করা যায়। অথচ, দুনিয়ার একটি বিশাল অংশের মানুষের কাছে তিনি হিরো। কেন হিরো? উত্তর হল: বিপ্লব। উত্তর হল: তাঁর মতাদর্শ, যা এই পৃথিবীর অনেক মানুষের ভাল্লাগে। তাই তাঁর মৃত্যু নিয়ে এত কথা, তাঁর না-বোজা চোখের চাহনি নিয়ে এত কাব্য, দুনিয়ায় এত মানুষের মনের কোণে, উচ্চারণেও, সিআইএ তথা আমেরিকার নামে এত গালাগালি। এখন, আমি যদি বলি, কাসভেরও তো মতামত আছে, জেহাদ, ইসলামি বিপ্লব বা ‘আমেরিকা-ইজরায়েল-ভারত শত্রুপক্ষ, তাই ভারতের লোকগুলোকে মেরে ফেলা উচিত’ এ রকম কিছু একটা নিশ্চয়ই কাসভের আছে, না হলে অন্য রকম আছে, আমি ঠিক জানি না, কিন্তু একটা কিছু তো আছেই। আমি যদি বলি, সেই আদর্শের প্রতি তাঁর একটা সততাও আছে, যার জন্য তিনি প্রাণ দিতেও প্রস্তুত হয়েছেন, কারণ এ দুনিয়ায় কেউ এতটাও গাধা নয় যে, ভারতের এত বড় একটা শহরে গিয়ে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে এত লোককে খুন করার পরেও পার পাওয়া যাবে বলে আশা করবে। আমি তাঁর বিশ্বাসকে, তাঁর মতবাদকে, তাঁর পদ্ধতিকে মানতে না-ই পারি, উল্টে জঘন্য, ভয়ঙ্কর, মানবতাবিরোধীও মনে করতে পারি, সে নিয়ে আমি হাজারটা যুক্তি দিতে পারি এবং তাঁর হত্যাও চাইতে পারি। কিন্তু আমাকে তা হলে এটাও মনে রাখতে হবে যে, চে-র মৃত্যু নিয়ে নাকি-কান্না কাঁদা আর আমার সাজবে না। পাঠক নিশ্চয়ই ভাবছেন, আমি চে আর কাসভকে এক করলুম! হ্যাঁ, আপনি ঠিকই ভাবছেন। এক করলুম। কারণ, দুনিয়ায় স্ট্যান্ডার্ড মতবাদ বলে কিছু নেই। যার যার আদর্শ তার তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমার রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাসভ যা করেছেন বিদেশের মাটিতে ঢুকে সেই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চক্রান্ত আর যুদ্ধ ঘোষণা বলিভিয়ার সেই সময়কার প্রশাসনের বিরুদ্ধেও চে তাই-ই করেছেন। কাসভ-হত্যা যদি যুক্তিযুক্ত হয়, তা হলে সে দিনের চে-হত্যাও ঠিকই আছে বলে মেনে নিতে হবে। এর মতবাদ আমি মানি, তাই একে মারা চলবে না, আর ওর আদর্শ আমি মানি না, তাই ওকে মারা চলবে, এটা কোনও যুক্তি হতে পারে না। ইনি আমার দেশে করেছেন বলে বিরাট অপরাধী আর উনি অন্যের দেশে করেছেন বলে বিপ্লবীমানে কী? কমিউনিস্ট বিপ্লব দারুণ আর ইসলামি জেহাদ ফালতু, অন্তত কাসভ-রা যে ভাবে বোঝেন, সেই জেহাদ খুবই খারাপ একটা ব্যাপার এটা আপনার মত হতে পারে, কিন্তু এ ব্যাপারে বিশ্ব জুড়ে কোনও ঐকমত্য নেই। আমার বিচারে মৃত্যুদণ্ড হলে ‘আহা’, আর বলিভিয়ার প্রশাসন ও সিআইএ-র বিচার বিচার নয়, এটা কে ঠিক করল? কে ঠিক করবে কোন বিচারপদ্ধতিটা ভাল? মার্কিন প্রশাসনের গোপন কক্ষে পাঁচ জনে মিলে জাপান বা ভিয়েতনামের বিচার, সিদ্ধান্ত এবং সেই মতো হিরোশিমা বা নাপাম বোমার ব্যবস্থা ভাল? না, আল-কায়দার তাঁবুতে বসে আমেরিকার বিচার ও ৯/১১ ভাল? না কি, দান্তেওয়াড়ার জঙ্গলে বসে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের বিচার এবং একের পর এক এলাকা মুক্ত করার জন্যে বা নিজেদের দখলে আনার জন্য পরের পর খুনের ব্যবস্থা ভাল? না কি, জাফনায় বসে রাজীব গাঁধীর বিচার করে হত্যা করার সিদ্ধান্ত ভাল? না কি, কলম্বোয় দাঁড়িয়ে প্রভাকরণের বিচার ও সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া ভাল? আমার আদালতকে মাওবাদীরা মানেন না, আমিও মাওবাদীদের গণ-আদালত মানি না, যার যেখানে জোর আছে, সে সেখানে নিজের নিজের ব্যবস্থা চালাচ্ছি, কিন্তু তাতে আসলে কার কী এসে যাচ্ছে বলুন তো? হত্যা থেমে থাকছে? প্রতিহিংসা থেমে থাকছে? আপনার মনে হয়, এ ভাবে চালিয়ে গেলে কোনও দিন থামতে পারে? সবার নিজস্ব যুক্তি আছে, সবার কাছে নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটা না একটা ব্যবস্থা আছে, সবার কাছে নিজের তৈরি করা ব্যবস্থাই ঠিক এবং শ্রেষ্ঠ, যে যার মতো বিবেচনা করে মারছে, আরও মারছে, মেরেই চলেছে। আমরা যে যে মতেই বিশ্বাস করি না কেন, একটা না একটা যুক্তিযুক্ত হত্যাকাণ্ড ঠিকই খুঁজে পাব, যেটা নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি।
বেশ, তা হলে এটাই চলুক। যে যার মতো অন্যকে মেরে শান্তি পাক, বীর হোক। কিন্তু, আমি যে রাষ্ট্রের নাগরিক, যে দেশ নিয়ে আমার এত গর্ব, যে জনসমষ্টির সঙ্গে আমার সংসার সহাবস্থান সম্মেলন, সে-ও কি তা-ই হবে? এখনও কি আমি, আমরা প্রতিশোধের ব্যবস্থায় বিশ্বাসী থাকব? আমরাই তো রাজীব-হত্যাকারীকে ক্ষমা করতে পেরেছি, তামিল সেন্টিমেন্ট বা অন্য কোনও কারণে হোক, করেছি তো, যে ভাবেই হোক, অহিংসার দিকে এক ধাপ তো এগোলুম, তা হলে কাসভের বেলায় পারছি না কেন? পাকিস্তানি বলে? আমি বিশ্বাস করতে চাই আমি ভুল বকছি, কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছি না। কারণ আমরা তো জানি, পাকিস্তান আমাদের শত্রু-দেশ, একটা জঘন্য দেশ, গোটা দেশটাই ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসের কারখানা, প্রতিটি পাকিস্তানি সারা দিন সমস্ত কাজ ফেলে শুধু আমাদের সর্বনাশের জন্য জপ করছে বসে বসে। পাকিস্তানের একটা স্পেশাল স্টেটাস আছে আমাদের সকলের কাছে। ওটা নিয়ে চট করে কিছু বলা একটু রিস্কি। পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদী আর শ্রীলঙ্কাবাসী তামিল সন্ত্রাসবাদী তাই ভারতের জনগণের মনেও বোধহয় এক হয়ে ওঠেনি কোনও দিন।
জানি না, যুক্তির বাঁধন যথেষ্ট টাইট হচ্ছে কিনা। হয়তো আপনার বিরক্তিকর লাগছে। বিশ্বাস করুন, এই মুহূর্তে সুখপাঠ্য সাহিত্য রচনার অবস্থা আমার নেই। আমি যে করে হোক কাসভের মৃত্যুদণ্ড আটকাতে চাই। যে যুক্তি খাটবে, সে যুক্তিকেই আশ্রয় করতে চাই, কারণ একটা মানুষের প্রাণ বাঁচানোর জন্য আমার কাছে যে-কোনও যুক্তিই ঠিক, কারণ একটা মানুষকে মেরে ফেলার পক্ষে কোনও তত্ত্বই আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। সত্যি কথা বলতে কি, এই যে একটা মানুষকে হত্যা না-করার জন্য কুঁতে কুঁতে এত যুক্তি তৈরি করতে হচ্ছে, এটাই আমার কাছে মানবতার পক্ষে অপমানকর, মানুষ হিসেবে লজ্জাজনক। আমি তবু বিশ্বাস হারাতে চাই না। ভাবতে চাই না, যে রাষ্ট্রের আওতায় আমি বাস করি, আনুগত্য এবং শ্রদ্ধা নিয়ে বাস করি, সে রাষ্ট্র একটা প্রাণহীন শুষ্ক কাঠামো ছাড়া কিছুই নয়। আমি চাই না সে আর একটাও হত্যা করুক, কোনও কারণেই করুক। দুনিয়ার কোন দেশে কী হয়, না-হয়, আমি জানতে চাই না। আমি চাই, আমার দেশ, তার মানুষ, এই রাষ্ট্র সাহসী হোক, একটা মানবিক সিদ্ধান্ত নিক। সে মনে করুক তার ইতিহাস। সে ঠিক করুক, অশোকস্তম্ভকে সামনে রেখে, ধর্মাশোক বা চণ্ডাশোক, সে কাকে মনে করতে চায়? আমি চাই, আমার দেশ সত্যিকারের বীরের মতো মাথা তুলে শিরদাঁড়া সোজা করে পৃথিবীর সামনে দাঁড়াক। সে ঘোষণা করুক, সে সহনশীল, সে সহ্য করার ক্ষমতা রাখে, এবং এতটাই ক্ষমতা রাখে যে সে তার নিজের সন্তানের হত্যাকারীকেও ক্ষমা করে দিতে পারে। এতটাই শক্তি তার মধ্যে, তার জনগণের মধ্যে নিহিত আছে।
আমি দু’চোখ ভরে দেখতে চাই একটা ভারতবর্ষ, যেখানে আজমল কাসভের সন্তানসন্ততিরা হেসেখেলে নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তাঁরা শান্তির দূত হয়ে ছড়িয়ে পড়ছেন বিশ্ব জুড়ে, আর বলছেন, আমরা সেই দেশ থেকে এসেছি, যে দেশে আমাদের পূর্বপুরুষ হাতে বন্দুক নিয়ে মানুষ মারতে ঢুকেছিলেন, জঘন্য ভাবে খুন করেছিলেন নিরস্ত্র মানুষদের, তবু সে দেশ তাঁকে ক্ষমা করে দিয়েছিল, শুধরোনোর সুযোগ দিয়েছিল তাঁকে, সেখানে প্রহরীদের চেয়েও সাইকোলজিস্ট বেশি ছিলেন, থেরাপিস্টরা কাউন্সেলররা ছিলেন, তাঁরা সকলে মিলে এক জন নৃশংস হত্যাকারীকে এক জন উদার মানুষে পরিণত হতে সাহায্য করেছিলেন, তাঁরা পেরেছিলেন, সে দেশের মহান মানুষজন তাঁকে মানুষের মর্যাদা দিতে পেরেছিলেন। হ্যাঁ, আমরা সেই দেশের কথা বলতে এসেছি, যেখানে বহুকাল আগে রত্নাকর বলে এক দস্যু ছিলেন...


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.