সম্পাদকীয় ...
হস্তে বসতে লক্ষ্মী
কল বিদ্যালয়েই হাতের লেখা অনুশীলন করিবার স্বতন্ত্র ক্লাস আছে, এমনকী যে বালক বা বালিকা অত্যধিক দুষ্টামি করিয়া শিক্ষকের হাড় জ্বালাইয়াছে, তাহাকে শাস্তি দিবার জন্য একই বাক্য বহু বার লিখাইবার পদ্ধতি চালু আছে, যাহা ছাত্র বা ছাত্রীটিকে কাঁদাইবার সঙ্গে সঙ্গে তাহার হাতের লেখা ভাল করিয়া দিয়া উপকার বর্ষাইতে থাকে। যদিও এত প্রয়াস সত্ত্বেও বহু শিশুরই হস্তাক্ষর জঘন্য হয়, তাহাদের লিখিত উত্তর বুঝিতে গিয়া শিক্ষকের চক্ষের পাওয়ার, চশমার খরচ, হৃদয়ের তিক্ততা ও সংসারের কলহ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাইতে থাকে, শেষমেশ শিশুরা তিন পৃষ্ঠা ব্যাপী গুচ্ছের ভুল লিখিয়াও কাগের ঠ্যাং বগের ঠ্যাং হেতু বহু ক্ষেত্রে পার পাইয়া যায়। ইহাদের অনেকেই, কেন ও কী ভাবে কে জানে, বড় হইয়া ডাক্তার হয়। আসলে, এই পৃথিবীতে বহু নিয়ম আছে, যাহা শুনিতে অদ্ভুত, যুক্তিরহিতও বটে, কিন্তু অবধারিত ভাবে সত্যের সহোদর ভ্রাতা হিসেবে আপন স্থান পাকা করিয়াছে। হাতের লেখা খারাপ হইলেই সে ডাক্তার হইবে, এমন কোনও নিয়ম এই ধরাধামে না থাকিলেও, ডাক্তার হইলেই তাহার হস্তাক্ষর খারাপ হইবে, এ প্রায় নিউটনের পঞ্চম সূত্রের ন্যায়, অকাট্য। মহারাষ্ট্র সরকার নিশ্চয় যে কোনও সরকারের ন্যায় অতিশয় গম্ভীর ও নিয়ত তাৎপর্য-অভিলাষী একটি প্রতিষ্ঠান। লঘু বিষয় লইয়া অবশ্যই সে কখনও মস্তিষ্ক বা বাক্য অপচয় করে না। সেই সরকার অবধি ঘোষণা করিল, এখন হইতে ডাক্তারদের স্পষ্ট ও সুন্দর হস্তাক্ষরে পুরা প্রেসক্রিপশন লিখিতে হইবে।
ডাক্তার ও তাহার হস্তাক্ষরের নিগূঢ় সম্বন্ধ সাধারণ জনমানসে এতটাই স্পষ্ট প্রোথিত, এ দেশের অধিকাংশ মানুষই মনে করেন, যে ডাক্তারের হস্তাক্ষর ভাল, সে নির্ঘাত ডাক্তার খারাপ। এক জন সার্থক ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন পড়িতে বেলা পার হইয়া যাইবে, তবু দুর্বোধ ইকড়িমিকড়িগুলিকে কিছুতে জ্ঞাত মনুষ্যভাষায় অনুবাদ করা যাইবে না, অবশেষে ঔষধের দোকানে যাইলে সেখানকার তড়বড়ে ছোকরা কে জানে কোন অলৌকিক উপায়ে তাহা উদ্ধার করিয়া তিনটি অমোঘ ট্যাবলেট বাড়াইয়া দিবে এই বিশ্বাস প্রায় ধর্মীয় স্তরের। কিছু ডাক্তার যেমন ইঞ্জেকশন দিতে গিয়া মোটেই প্রচণ্ড জোরে লাগাইয়া দেন না, টেরই পাওয়া যায় না একটি জলজ্যান্ত সুচ ত্বকে বিঁধিল ও গভীরে যাত্রা করিল। সেই ডাক্তারকে অধিকাংশ রোগীই শ্রদ্ধা করেন না। ‘সুঁই’-এর ফলে যদি হাতটি ঢাউস হইয়া ফুলিয়া যায় ও উহার তাড়সে মূল অসুখটির পিতৃনাম পর্যন্ত বিস্মৃতির গহ্বরে তলাইয়া যায়, তখন ডাক্তার তাঁহার কার্য সবিশেষ শিখিয়াছেন সিদ্ধান্ত করা হয়। এ সকল লোকবিশ্বাস ভাঙিয়া কোনও ফরমান জারি করা, মন্দির ভাঙিয়া রানওয়ে গড়ার সমান। আর, চিকিৎসার ক্ষেত্রে অন্তত, বিজ্ঞানটি যত প্রভাবশালী, রোগীর বিশ্বাসটিও ততটাই কার্যকর, এ কথা বহু পণ্ডিত মানেন। মহারাষ্ট্র সরকার তাই এই সু-হস্তাক্ষর-আদেশ জারি করিয়া ভুলবশত লক্ষ লক্ষ মানুষের ডাক্তারের প্রতি সমীহ ও ভরসাকে আঘাত করিলেন কি না, বলা শক্ত। হস্তাক্ষর অনেকাংশেই কাব্যের ভাবার্থের ন্যায়: যদি বুঝিতেই পারিলাম তবে আর কী হইল?
প্রশ্ন আরও আছে। যে ডাক্তারের হাতের লেখা অতি নিকৃষ্ট, তিনি কি এ বার স্টেথোস্কোপ ছাড়িয়া পুনরায় কলম পিষিয়া অ-আ-ক-খ অনুশীলন করিবেন? তাঁহার হস্তাক্ষর খারাপ হইলে, আদৌ না শুধরাইলে, সরকার কি তাঁহার রোগীদের চেম্বারে আসিতে নিষেধ করিবেন? তিনি কি শেষে কম্পাউন্ডারের সঙ্গে এক জন প্রেসক্রিপশন-নকলনবিশও নিয়োগ করিবেন? অবশ্য এই যুগে ইহার সমাধানও জলবৎ তরলং। বিদ্যালয়েও আজ বাদে কাল খাতার পরিবর্তে কম্পিউটারে লিখিয়া হোমওয়ার্ক ‘সেন্ড’ করিবার চল হইল বলিয়া। ডাক্তারবাবুও তাঁহার ল্যাপটপের সহিত একটি প্রিন্টার রাখিলেই গোল মিটিবে। যে গ্রামে ল্যাপটপ আসে নাই? সেখানে সরকার-নেত্রও উপস্থিত নাই, নিশ্চিন্ত থাকুন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.