বার্ধক্য ও স্মৃতিভ্রংশজনিত রোগে ভুগছিলেন অনেক দিনই। গত মাসেই মহীশূরে ভাইয়ের বাড়িতে থাকার সময়ে প্রাতর্ভ্রমণে গিয়ে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলেন প্রাক্তন সঙ্ঘ-প্রধান কে এস সুদর্শন। আজ চলেই গেলেন তিনি। এ দিনও প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন তিনি। তার পরে ঠিক মতোই ফিরে এসেছিলেন রায়পুরের সঙ্ঘে দফতরে। রোজকার অভ্যেস মতো বসেছিলেন প্রাণায়ামেও। সঙ্ঘ সূত্রে বলা হয়েছে, প্রাণায়ামের সময়েই মৃত্যু হয় প্রাক্তন এই সঙ্ঘ-প্রধানের।
২০০০ সাল থেকে ৯ বছর সরসঙ্ঘচালক ছিলেন সুদর্শন। সেই সময় তাঁর কট্টরবাদী নীতির জন্যই বিজেপি-র সঙ্গে নানা বিষয়ে মতপার্থক্যে জড়িয়ে পড়েছিল সঙ্ঘ। তাঁর আমলেই কেন্দ্রে নির্বাচনে হেরে ক্ষমতা হারায় বিজেপি তথা এনডিএ। আবার তাঁর সময়েই জিন্না বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে দলের সভাপতির পদ ছাড়তে হয় লালকৃষ্ণ আডবাণীকে।
সঙ্ঘপ্রধান হিসাবে সুদর্শন যখন দায়িত্ব নেন, কেন্দ্রে তখন বিজেপি ক্ষমতায়। রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, বাজেপেয়ী ও আডবাণীর যৌথ নেতৃত্ব সে সময়ে কট্টরবাদী সুদর্শনকে দলের দৈনন্দিন কাজকর্মে মাথা গলাতে দেয়নি। যা নিয়ে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের মধ্যে একাধিক বার মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। কিন্তু পরপর দু’টি নির্বাচনে হারার পরে সঙ্ঘ বুঝতে পারে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে হলে সঙ্ঘে নতুন ও উদার মুখ প্রয়োজন। তাই কট্টরবাদী সুদর্শনের পরে আধুনিক ও অনেকাংশে উদার নেতা মোহন ভাগবত পরবর্তী সরসঙ্ঘচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন। সঙ্ঘের একাংশের কথায়, “সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সঙ্ঘ নেতৃত্বও সুদর্শনের লাইন থেকে সরে এসেছে। কট্টর না উদার ভাবমূর্তি, কোনটি প্রয়োজন তা নিয়ে সঙ্ঘের মধ্যে টানাপোড়েন যে একেবারে শেষ হয়ে গিয়েছে তা নয়। তবে রাম জন্মভমি আন্দোলনের সময়কার কট্টরবাদী মুখেরা এখন প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে।” যদিও কট্টরবাদী নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, “সুদর্শন যে বিচারাধারা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন সেখানে থেকে যদি বিচ্যুতি ঘটে তা হলে দেশ ঠিক দিশায় এগোবে না।’’
সুদর্শন নিজে কট্টর না উদারবাদী, তাঁর মৃত্যুর পরে এই নিয়েও পরস্পরবিরোধী বক্তব্য উঠে এসেছে বিজেপি নেতৃত্বের তরফে। সুদর্শনের বিচারধারা নিয়ে বলতে গিয়ে দলের আধুনিকমনস্ক জাতীয় সভাপতি নিতিন গড়কড়ী যখন বলেছেন, “সুদর্শন একজন চিন্তাবিদ ও জাতীয়তাবাদী নেতা ছিলেন।” তখন কলরাজ মিশ্রের মতো বর্ষীয়ান নেতার বক্তব্য, “সুদর্শন হিন্দুত্ব ও হিন্দু সংস্কৃতির প্রসার ঘটাতে তৎপর ছিলেন।”
|