শেষমেশ আর্কিমিডিসই মেরে ফেললেন জ্যাককে! ডুবন্ত ‘টাইটানিক’ থেকে প্রেমিকা রোজ-কে বাঁচিয়েও নিজে বরফ ঠান্ডা জলে একটু একটু করে জমে বরফ হয়ে গেল সে!
নাহ! দর্শকরা যতই কেঁদে ভাসান না কেন, পরিচালক জেমস ক্যামেরন দাবি করছেন, জ্যাককে মরতেই হত! চিত্রনাট্যের খাতিরে বা গল্পের দাবিতে নয়, ‘টাইটানিক’ ছবির শেষে লিওনার্দো দি ক্যাপ্রিও ওরফে জ্যাককে মরতে হত পদার্থবিজ্ঞানের ‘মান’ বাঁচাতেই।
জেমস ক্যামেরনের বিরুদ্ধে টাইটানিক-ভক্তদের দীর্ঘ দিনের ক্ষোভ, কেন ছবির শেষে করুণ ভাবে মরতে হল জ্যাককে? চেষ্টা করলে পরিচালক কি তাঁকে বাঁচিয়ে রাখতে পারতেন না? রোজ (কেট উইনস্লেট) আর জ্যাকের (লিওনার্দো দি ক্যাপ্রিও) কি মধুর মিলন ঘটানো যেত না? বিশেষত যেখানে দেখাই যাচ্ছে, রোজকে কাঠের পাটাতনে তোলার পরও অনেকটা জায়গা ফাঁকা ছিল। সেখানে উঠে পড়লে জ্যাকও তো বেঁচে যেতেন। কেন খামোখা অতলান্তিকে সলিল-সমাধি দেওয়া হল বছর উনিশের ভবঘুরে চিত্রশিল্পীকে? ভক্তরা কাঠগড়ায় তুলেছেন পরিচালককেই। এ বার তাদের উদ্দেশেই জেমসের বার্তা, “আরে ভাই, প্লবতা বলেও তো একটা জিনিস আছে।” |
প্লবতা মানে? আর্কিমিডিসের সূত্র অনুযায়ী কোনও বস্তু তরলে সম্পূর্ণ বা আংশিক ভাবে নিমজ্জিত হলে তার দ্বারা যে পরিমাণ তরল অপসারিত হয়, সেই তরল তার স্থান পুনরুদ্ধারের জন্য ওই বস্তুকে উপরের দিকে ঠেলতে থাকে। এখন ওই বস্তুটির ওজন যদি ওই অপসারিত তরলের ওজনের চেয়ে কম হয়, তাহলে সেটি তরলে ভেসে থাকবে।
যদিও এই ব্যাখ্যায় যে খুব একটা সন্তুষ্ট হয়েছেন ভক্তেরা, তা অবশ্য এখনই বলা যাচ্ছে না। আর হবেনই বা কী করে? ১৯৯৭ সালে ‘টাইটানিক’ মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন তাঁরা। তার পর অনেকগুলো বছর কেটে গেলেও জ্যাকের মৃত্যুর সেই শেষ দৃশ্য, আজও যুক্তি-বুদ্ধি-আবেগ, কোনও দিক থেকেই মেনে নিতে পারছেন না ভক্তেরা। নিজেদের ব্যাখ্যাটিকে সাবলীল ভাবে বোঝাতে সম্প্রতি কিছু সাইটে কয়েকটি ছবিও প্রকাশ করেছেন তাঁরা। যেখানে নানা ভাবে ছবি তুলে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে, পাটাতনে যথেষ্ট জায়গা থাকা সত্ত্বেও জ্যাককে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ভাবেই বাঁচতে দেননি জেমস।
এই ‘কুযুক্তিরই’ জবাব দিতে গিয়ে জেমস বলছেন, “আরে, জ্যাক তো বোকা নয়। সে নিশ্চয়ই মরতেও চায়নি। কাঠের পাটাতনে রোজকে তুলে দিয়ে সে নিজেও ওঠার চেষ্টা করেছিল।” কিন্তু ‘ভিলেন’ হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্লবতা। “জ্যাক উঠতে গেলে পাটাতনটি ডুবে যেত। ওরা দু’জনেই মরে যেত।” অর্থাৎ, জ্যাক এবং রোজ সমেত পাটাতনটির যা ওজন হত, তাতে সেটি জলে ভাসতে পারত না।
জ্যাক আর রোজের মিলনের পথে আসল ‘খলনায়ক’ তাই প্লবতাই, বলছেন ক্যামেরন। প্লবতার এই সূত্রের সন্ধান আর্কিমিডিস পেয়েছিলেন স্নানঘরে বাথ-টবে শুয়ে। অতলান্তিক মহাসাগরে সেটাই প্রাণ নিল জ্যাকের। |