চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১...
সংগোপন প্রতীকীতে পরিস্ফুট এক তরুণীর জামা
চিত্রকলায় জলরংকে অনেক সময় গৌণ মাধ্যম বলে গণ্য করা হয়। আজকের বিশ্বায়নের পরিমণ্ডলে কিছু দিন আগে পর্যন্ত ছবির বাজারে যখন কিছুটা বাড়বাড়ন্ত দেখা দিয়েছিল, তখন এই প্রবণতা যেন আরও বেশি প্রশ্রয় পেয়েছে। সাধারণত কাগজের উপর জলে দ্রবীভূত রঙে আঁকা হয় যে ছবি, তার স্থায়িত্ব সম্পর্কে সংশয়ই এর অন্যতম কারণ। অ্যাক্রিলিক আসার পর জলরং যেন আরও বেশি ব্রাত্য হয়ে গেছে। এ সমস্ত সত্ত্বেও এ কথা মনে রাখতেই হয় জলরঙে আঁকা গভীর মননের ছবির উত্তরাধিকার কিন্তু ও দেশে বা এ দেশে মোটেই অবহেলার নয়। ইউরোপে আলব্রেখট ড্যুরার থেকে টার্নার হয়ে এমিল নোলডে পর্যন্ত জলরঙের বিবর্তনের দিকে তাকালে কি বিস্ময় জাগে না? তেমনই আমাদের দেশে কোম্পানি স্কুল থেকে শুরু। তার পর অবনীন্দ্রনাথ, গগনেন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ, বিনোদবিহারী, রামকিঙ্কর, গোপাল ঘোষ হয়ে শ্যামল দত্তরায় পর্যন্ত জলরঙের যে বিবর্তন, তাকেও কি গৌণ বলা যায় খুব? এ সব কথা মনে রেখেই হয়তো প্রখ্যাত শিল্পী সুনীল দাস একটি প্রদর্শনীর পরিকল্পনা করেছেন। ‘গ্যাঞ্জেস’ আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হল ২২ জন সমকালীন শিল্পীর সম্মেলক প্রদর্শনী। সকলেই জলরং মাধ্যমে ছবি এঁকেছেন। কিছু ভাল কাজ রয়েছে এই প্রদর্শনীতে। কিন্তু সকলে এই পরিকল্পনাকে যে খুব গুরুত্ব দিয়েছেন, তা বলা যায় না। জলরং মাধ্যমটিও দাবি করে শিল্পীর সামগ্রিক ধ্যান। সুদীর্ঘ অনুশীলন থেকেই তা উঠে আসতে পারে। তার কিছু অভাব ছিল এই প্রদর্শনীতে।
সুনীল দাসের দু’টি ছবি ছিল। একটি ১৯৮৭-র ‘নোত্রে দেম চার্চ’, দ্বিতীয়টি ২০০৭-এর ‘ফুজি মাউন্টেন জাপান’। এই নিসর্গধর্মী রচনায় শিল্পী তাঁর স্বাভাবিক দক্ষতায় প্রকৃতির মগ্ন সৌন্দর্যকে তুলে এনেছেন। যোগেন চৌধুরীর ‘বর্ষা প্রকৃতি’ ছবিটিতে কালো মেঘের সমারোহ। তাঁর দ্বিতীয় ছবিটিও বর্ষারই নিসর্গ। তাঁর এখনকার তীব্র প্রতিবাদী বিপন্ন সামাজিক দায়বোধ থেকে ছুটি নিয়ে শিল্পী যেন বর্ষার সজলতায় সাময়িক মুক্তি খুঁজেছেন। লালুপ্রসাদ সাউ-এর বর্ণিল ছবিটি তাঁর সুপরিচিত আঙ্গিকের। হাতে পাখা নিয়ে আসনের উপর বসে আছে বাংলার গৃহবধূ। পরম্পরার প্রশান্ত সৌন্দর্যকে ধরতে চেয়েছেন শিল্পী জলরঙের জমাট সমতল বর্ণলেপনে। ধীরাজ চৌধুরীর ‘ফাস্ট ফুড অ্যাট ময়দান’ (১৯৫৯) ও ‘ক্যালকাটা কফি হাউজ’ (১৯৮০) দু’টি ছবিই অনুশীলনমূলক রচনা।
শিল্পী: শেখর রায়
অমিতাভ সেনগুপ্ত জলরং ভিত্তিক মিশ্রমাধ্যমে আংশিক বিমূর্তায়নের মধ্য দিয়ে উত্তর-আধুনিক জটিলতাকে ধরতে চেয়েছেন। উত্তর-আধুনিক জটিলতার প্রচ্ছায়া আছে পার্থপ্রতিম দেবের দু’টি ছবিতেও। স্বাভাবিকতা ও কল্পরূপের মেলবন্ধনে কাঞ্চন দাশগুপ্তও কৌতুক ও শ্লেষকে মিলিয়ে জীবনের নিহিত করুণাকে অভিব্যক্ত করতে চেয়েছেন তাঁর দু’টি জলরঙে।
ওয়াসিম কাপুর এঁকেছেন যিশু খ্রিস্টের যন্ত্রণাক্ত করুণাঘন মুখ এই সময়েরই দুঃখের স্মারক হিসেবে। সুনীল দে-র বিমূর্ত রূপায়ণে তাঁর পরিচিত প্রজ্ঞা পরিপূর্ণ ভাবে আসেনি। আদিত্য বসাকের ছবিটি জলরং ভিত্তিক মিশ্রমাধ্যম। বিশ্বায়িত পরিস্থিতিতে একক ব্যক্তির নিশ্চেতনের তমসা যেন মহাজাগতিক বিস্তার পাচ্ছে। তাপস কোনারের ২০০৫-এর ‘এ লেডি এঞ্জিনিয়ার’ আর্থ-কালার রঙে আঁকা। তমসাদীর্ণ ব্যক্তির আত্মিক সংকট। শেখর রায় স্বচ্ছ জলরঙে এঁকেছেন কাঁটাতারে আটকে যাওয়া কোনও তরুণীর একটি জামা। সংগোপন এক প্রতীকী তাৎপর্য আছে তাতে। সমীর আইচ-এর ‘সেল্ফ পোর্ট্রেট’-এ একটি বিন্দু বিস্ফারিত হতে হতে প্রতিকৃতিতে পৌঁছেছে ছ’টি ফ্রেমের মধ্য দিয়ে। সাধন চক্রবর্তী জলরঙের প্রচ্ছায়ায় জীবনের ছায়াচ্ছন্নতাকে অভিব্যক্ত করেছেন। সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় এঁকেছেন নারীমুখের অন্তর্লীন রহস্য। অমিতাভ ধরের দু’টি জলরংই বিমূর্ত রচনা।
যান্ত্রিকতাজারিত বিপর্যয়ের প্রতিফলন চন্দ্র ভট্টাচার্যের ছবিতেও। অতীন বসাক টেম্পারায় এঁকেছেন। কানের ভিতর প্রক্ষিপ্ত হচ্ছে বর্ণমালা। ছত্রপতি দত্তের বহুস্তনবিশিষ্টা মানবী বিশ্লিষ্ট ব্যক্তিত্বের প্রতীক হয়ে সাম্প্রতিক সংকটেরই ঘনীভূত প্রকাশ হিসেবে উপস্থাপিত হয়। আত্মগত শঙ্কা অতনু ভট্টাচার্যের ছবিটিরও বিষয়। পার্থ দাশগুপ্ত সহজ ছন্দে এঁকেছেন দু’টি পাত্র। ঈলীনা বণিকের ‘মাদার আর্থ’ ছবিতে প্রকৃতির ভিতর মানবী ও মানবীর ভিতর প্রকৃতির একাত্মতা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.