ইসলাম-বিরোধী সিনেমা নিয়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ল আরব জগতের অন্যান্য দেশেও। ওই সিনেমা নিয়ে বিক্ষোভের জেরেই গত কাল নিহত হন লিবিয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টোফার স্টিভেনস। ইয়েমেনে মার্কিন দূতাবাসে আজ হামলা চালিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে
এক বিক্ষোভকারী। গত কালের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে লিবিয়ায় দু’টি যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে পেন্টাগন। ত্রিপোলিতে মার্কিন দূতাবাসের নিরাপত্তা বাড়াতে পাঠানো হয়েছে ৫০ জন সেনাও।
আমেরিকায় তৈরি ইসলাম-বিরোধী একটি সিনেমার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর নামে গত কাল লিবিয়ার বেনগাজিতে মার্কিন কনস্যুলেটে হানা দেয় জনতা। রীতি মতো রকেট গ্রেনেড নিয়ে হামলা চালায় তারা। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন বেনগাজিতে নিহত মার্কিন দূতাবাস কর্মী শন স্মিথ। মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে ইন্টারনেটের একটি ফোরামে তিনি জানান, আজ রাতে তাঁর মৃত্যু হতে পারে। |
আজ ইয়েমেনের রাজধানী সানায় মার্কিন দূতাবাসে হানা দেয় বিক্ষোভকারীরা। বাইরের দেওয়াল টপকে দূতাবাসের চৌহদ্দিতে ঢুকে পড়ে তারা। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় একটি ভবনে। মার্কিন জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে লাগিয়ে দেওয়া হয় ইসলামি প্রতীক। ইয়েমেনি নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষও হয় তাদের। কয়েকটি গাড়িও পুড়িয়ে দিয়েছে তারা। পুলিশ গুলি চালালে এক জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়। আহত বেশ কয়েক জন। গ্রেফতারও হয়েছে কয়েক জনকে। কূটনৈতিক সূত্রে খবর, লিবিয়া ও মিশরের মতো বিক্ষোভে যোগ দিতে ইয়েমেনবাসীকে ডাক দিয়েছিলেন আব্দুল মজিদ আল-জানদানি নামে এক ধর্মগুরু। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই মার্কিন দূতাবাসে হামলা হয়। এক সময়ে ওসামা বিন-লাদেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল জানদানির। আমেরিকার “আন্তর্জাতিক জঙ্গি”-র তালিকাতেও রয়েছেন তিনি।
কায়রোতে মার্কিন দূতাবাসের সামনে আজ ফের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে পুলিশের।
কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে নিরাপত্তাবাহিনী। তেহরানেও বিক্ষোভ দেখায় জনতা। সুইৎজারল্যান্ডের দূতাবাসের সামনে জড়ো হয় তারা। ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।
তা-ই সে দেশে আমেরিকার কূটনৈতিক কাজকর্ম হয় সুইস দূতাবাস মারফৎ। পরে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ।
ইসলাম-বিরোধী সিনেমাটির জন্য আমেরিকাকে বিপদে পড়তে হবে বলে হুমকি দিয়েছে ইরাকের একটি জঙ্গি গোষ্ঠী। সিনেমাটি ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়াতেই নানা দেশে বিক্ষোভের মাত্রা বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তা-ই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে ওই সিনেমা ও ইউটিউবের সম্প্রচার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশ। ভারতেও যে সব ওয়েবপেজে ওই সিনেমাটি পাওয়া যাচ্ছে সেগুলি ব্লক করতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র।
উত্তেজনা ছড়ানো রুখতে উদ্যোগী হয়েছে আমেরিকাও। উস্কানিমূলক বক্তৃতা নিয়ে পরিচিত মার্কিন ধর্মযাজক টেরি জোনস। কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই তাঁকে ফোন করেন মার্কিন সামরিক বাহিনীর অন্যতম প্রধান জেনারেল মার্টিন ডেম্পসে। এই সিনেমাটি নিয়ে কোনও মন্তব্য না করতে জোনসকে অনুরোধ করেন তিনি। জোনস অবশ্য কোনও প্রতিশ্রুতি দেননি।
আজ লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মাগারিয়াফ, মিশরের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুরসি ও আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। |