কাটোয়ায় অবরোধ
ছাদ খুঁজে ‘নির্বাসনে’ চাষ দেখার জিপ
খোলা আকাশের নীচে ফসল বাড়ে। গাড়ির আয়ু কমে যায়।
রোদে-বৃষ্টিতে পেকে ওঠে ধান। কিন্তু পুড়ে, ভিজে, জং ধরে, রং চটে দফারফা হয় গাড়ির।
কাটোয়ার কৃষি দফতরের কর্তারা তাই অফিসের জিপ রাখতে পাঠিয়েছেন দফতর থেকে প্রায় ২৮ কিলোমিটার দূরে মঙ্গলকোটের নতুনহাটে।
কী-ই বা করবেন তাঁরা?
কাটোয়া শহরে ‘ছাদ’ মেলেনি। তাতে শুধু যে জিপের জেল্লা চটছে তা-ই নয়, বাগে পেলে চোরেরা বেবাক ফাঁক করে দিতে পারে যন্ত্রপাতি। এমনকী হাওয়া হয়ে যেতে পারে গোটা চার-চাকাই। অগত্যা গত ছ’মাস ধরে সে জিপ কার্যত নির্বাসনেই গিয়েছে বলা চলে।
মুশকিল হল, এই জিপে চেপেই নানা তল্লাটে খেতজমি দেখতে যেতেন মহকুমা কৃষি আধিকারিক (প্রশাসন) ও অন্য কর্মীরা। নানা এলাকায় বৈঠক করতেও ওতেই দৌড়ে বেড়াতেন তাঁরা। ফি মাসে প্রায় হাজার কিলোমিটার দৌড়ত জিপটি। এখন মঙ্গলকোট থেকে জিপ আসতে-যেতেই যা হ্যাপা, তাতে কর্তারা প্রায় তিতিবিরক্ত। সে জিপ এখন মাসে দেড়শো কিলোমিটারও চলে কি না সন্দেহ।
হবে না-ই বা কেন?
স্টিয়ারিংয়ে বসার সুযোগ তেমন আর পান না চালক উৎপল রজক। —নিজস্ব চিত্র।
মাসে দু’এক দিন বাদে প্রায় সব সময় নতুনহাটে মঙ্গলকোট ব্লক কৃষি উন্নয়ন দফতরে পড়ে থাকে গাড়িটি। গত এপ্রিল থেকেই এই ‘ব্যবস্থা’ চলছে। চালক উৎপল রজক রোজ বোলপুর থেকে কাটোয়ায় এসে হাজিরা খাতায় সই করে যান। ওই পর্যন্তই। জিপ থাকে জিপের জায়গায়। আর মহকুমা অফিসের কৃষিকর্তারা সাইকেলে যাতায়াত করেন।
উৎপলবাবুর কথায়, “মার্চের আগে অবধি জিপটি কাটোয়া শহরেই থাকত। প্রতি দিনই এ গ্রামে-ও গ্রামে যেত।” এক কৃষিকর্তারা বলেন, “এখন কোথাও যেতে হলে সাইকেলে চেপে বাসস্ট্যান্ডে যেতে হয়। সেখান থেকে বাস। শুধু প্রশাসনিক বৈঠকের সময়ে এক বার করে জিপটি বর্ধমানে যায়।” তাঁর কোনও কাজ নেই জানিয়ে বিরক্ত উৎপলবাবু বীরভূমের সিউড়িতে জেলা দফতরে বদলি চেয়েছেন।
দফতর সূত্রে জানা যায়, মার্চের আগে জিপটি অন্যের জায়গায় থাকত। কিন্তু তা নিয়ে আপত্তি ওঠায় সেটি সেখান থেকে সরাতে হয়েছে। তখনকার মতো ঠিক হয়, জিপটি আদালত চত্বরে বা রাস্তায় রাখা হবে। কিন্তু চালক চিঠি দিয়ে জানান, এর পরে গাড়ির কোনও ক্ষতি হলে তার দায় তিনি নেবেন না। গ্যারাজের ব্যবস্থা হলে তবেই গাড়িটি সুরক্ষিত থাকবে। কিন্তু গ্যারাজের ভাড়া গুনবে কে? এই প্রশ্ন ওঠার পরেই জিপটিকে নতুনহাটে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মহকুমা কৃষি দফতর সূত্রের খবর, ২০০০ সালের পর থেকে প্রায় চার বছর গ্যারাজেই বন্দি ছিল জিপটি। চালক ছিল না। এখন আবার চালক আছে, কিন্তু তাঁর কাজ নেই। দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “এক লিটার তেলে জিপটি ৮ কিলোমিটার চলে। তেলের জন্য বরাদ্দ মাত্র ৪ হাজার টাকা। কত বার তেলের দাম বাড়ল! রোজ ৫-৬ কিলোমিটার যাতায়াত করলেই টাকা শেষ। তার চেয়ে জিপটি নতুনহাটে থাকা ভাল।”
এতে যে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তা কিন্তু কৃষিকর্তারা অস্বীকার করতে পারছেন না। এক আধিকারিকের কথায়, “আগে যত গ্রামে গিয়ে চাষিদের পরামর্শ দেওয়া যেত, এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না। পরিস্থিতির চাপেই যাতায়াত আগের চেয়ে সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছে।” মহকুমা অফিসের কর্মীদের বেশির ভাগেরই দাবি, কাটোয়া শহরে যে জিপ রাখা যাচ্ছে না, তা জেলার কর্তারা ভাল করেই জানেন। কিন্তু কোনও বন্দোবস্ত করা হয়নি।
বর্ধমান জেলা কৃষি দফতরে উপ-অধিকর্তা শ্যামল দত্তের বক্তব্য, “কাটোয়ায় আমাদের কোনও জায়গা নেই। সে কারণে কাটোয়ার মহকুমাশাসক এবং থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে জিপ রাখার ব্যবস্থা করার জন্য মহকুমা কৃষি আধিকারিককে বলা হয়েছে।” মহকুমা কৃষি আধিকারিক (প্রশাসন) রবিউল হক জানান, গাড়ি রাখার জায়গা চেয়ে মহকুমাশাসকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। তবে তার কোনও উত্তর এখনও আসেনি। মহকুমাশাসকের দফতর সূত্রের খবর, এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
জল অনেক গড়িয়েছে। গাড়ি কবে ফের গ্রামে-গ্রামে গড়াবে, তা এখনও ঘোলা জলেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.