উত্তরের চিঠি

‘জলপাইগুড়ি কবে সাবালক হবে’
গত ২০ অগস্ট জলপাইগুড়ির প্রবীণ খেলোয়াড় অরবিন্দকুমার সেন খেলাধুলার পরিবেশ-পরিস্থিতি উজ্জীবনের জন্য ক্রীড়ামন্ত্রীর কাছে আবেদন রেখেছেন যে, জলপাইগুড়ির মতো ঐতিহ্যশালী শহরে একদা সব দিক দিয়েই খেলাধুলায় যে উন্নতি করেছিল তা এখন ম্রিয়মান। ‘স্পোর্টস কমপ্লেক্স’ তারও অত্যন্ত দৈন্যদশা। এই শহরে সুদূর অতীতে বহু নামকরা খেলোয়াড় খেলে গেছেন। এখন আর কেউ আসেন না। এলেও কালেভদ্রে সামান্য কিছু খেলাধুলা হয়, যা এই শহরের ঐতিহ্য পরিপন্থী। এ ব্যাপারে ক্রীড়ামন্ত্রী উদ্যোগ নিলে আবার সেই স্বর্ণযুগ ফিরে আসতে পারে। আপনার লেখা পড়ে মনে হোল, অতীতে চা-বাগান মালিক এস পি রায় ও বি সি ঘোষেরা খেলাধুলার উন্নতিকল্পে যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তা এখন আর নেই। তাই রায় ও ঘোষ পরিবারের বদলে এখন মন্ত্রী মহাশয়কে উদ্যোগ নিতে হবে। জলপাইগুড়ির প্রবীণ ও নিষ্ঠাবান এক ক্রীড়াপ্রেমী ব্যক্তিত্বর কাছ থেকে শুনেছি, কোনও এক সময় সি এ বি-র সভায় জলপাইগুড়িকে যিনি প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তাঁকে সেই সভায় শুনতে হয়েছিল, ‘জলপাইগুড়ি কবে সাবালক হবে’, অর্থাৎ আমরা জলপাইগুড়িবাসী কোনও উদ্যোগ নেব না, খালি বনেদি, সংস্কৃতিবান ও ঐতিহ্যশালী শহর বলে দিন রাত দম্ভোক্তি প্রকাশ করব। আর প্রয়োজনে শিলিগুড়ির শাপশাপান্ত করব। এখনও তো জলপাইগুড়ির খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক জগতে সেই রায় পরিবারের লোকই আছেন। সেখানে তো নতুন কোনও লোকের কথা ভাবা গেল না! আসলে সেই বাগানের ঐতিহ্য থেকে জলপাইগুড়ি এখনও বেরোতে পারল না। এই মানসিকতা নিয়ে উন্নতি হয় না। স্পোর্টস কমপ্লেক্সে একটা গাছ কাটার জন্যে, মাঠটি পরিষ্কার রাখার জন্যে নিশ্চয়ই মন্ত্রীর সাহায্য দরকার হয় না। তা ছাড়া একটা মডেল স্পোর্টস কমপ্লেক্স তৈরি করতে গেলে যে পরিমাণ জমির দরকার হয় তা কি এই স্পোর্টস কমপ্লেক্স আছে?
ছবি: সন্দীপ পাল।
আজ টেবিল টেনিসে শিলিগুড়ি আন্তর্জাতিক মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে। সেটা কি শুধুই অশোক ভট্টাচার্যের আন্তরিকতায় এবং উদ্যোগে? শিলিগুড়িবাসীর উদ্যমী মানসিকতাও এর জন্য দায়ী। বনেদি ও শিল্প সংস্কৃতির শহরে আপনি কোনও উচ্চমানের সাংস্কৃতিক সংস্থা খুঁজে পাবেন না। এখনও যারা কর্মসূত্রে জলপাইগুড়িতে বাইরে থেকে আসেন তাদেরও জলপাইগুড়ি গ্রহণ করতে পারে না। তাঁরা তাঁদের সন্দেহের চোখে দেখে। অথচ শিলিগুড়ি এই মানসিকতা অনেক দিন আগেই কাটিয়ে উঠেছে। ভাল কোনও সিনেমা দেখতে চান শিলিগুড়ি, আপনার পছন্দসই জিনিস কিনতে চান শিলিগুড়ি, ভাল নাটক দেখতে চান তাও শিলিগুড়ি। আসলে উন্নয়ন একটি বহুমাত্রিক ভাবনা। তা কেউ করে দিতে পারে না। এর জন্য দরকার মানসিকতার উন্নতি। কাউকে বিদ্বেষ করে নয়, জলপাইগুড়ির রাজনৈতিক দলগুলো ভারতীয় আগমার্কা হলেও তারাও যেন কালে কালে জলপাইগুড়ির রাজনৈতিক দল হয়ে গেল। এ ব্যাপারে তারাও যে খুব উদ্যোগী হয়েছে, তারও তেমন কোনও খবর জানা নেই। শুনেছি, একদা জলপাইগুড়ির রানিনগরে টার্মিনাল স্টেশন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তখনকার জলপাইগুড়ির প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তা হতে দেননি। কারণ, তা হলে শহর নষ্ট হয়ে যাবে। শহরে অপরাধ প্রবণতা বাড়বে, শহরকে লৌহ বেড়াজালে বেষ্টিত রাখতেই তাঁরা বেশি ভাল বেসেছেন। তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন, শহর উন্মুক্ত হলে তাঁদের মাতব্বরি আর থাকবে না। তাই গোড়াতেই তাঁরা জল ঢেলে দিয়েছেন। পরবর্তিতে সেই টার্মিনাল চলে গেল নিউ জলপাইগুড়িতে। জলপাইগুড়ি জেলাতে হলেও সুবিধা পেল শিলিগুড়ি। এর জন্য আক্ষেপ করে তো লাভ নেই। জলপাইগুড়ির ঐতিহ্যশালী রবীন্দ্রভবন, কোনও ‘শো’ চলাকালীন সময়ে যদি বৃষ্টি হয় তা হলে সামনের সারিতে বসে থাকা দর্শকদের সাঁতার কেটে বাইরে বেরোতে হয়। এখানে তো এম এল এ, এম পি-রা ছিলেন ও আছেন। তাঁরা তো এলাকা উন্নয়নের জন্য কোটি কোটি টাকা পান। তা হলে রবীন্দ্রভবনের এই দশা কেন? ১৮৪৬ সালে জাপানে কমোডোর পেরি ঢুকলেন, জাপানের সম্রাটকে বোঝালেন, কেন তাঁর বন্দর বাইরের জগতের জন্য খুলে দেওয়া দরকার। সম্রাট বুঝলেন এবং তিনি জাপানকে বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত করে দিলেন। সেই সময় থেকে জাপানের যে উন্নয়নের গতি শুরু হোল তা আজ গগনচুম্বী। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘জাপান যাত্রী’তে লিখেছেন, জাপান যখন আধুনিকতার তরণিতে বসল তখন সে পশ্চিমকে অনুকরণ বা অনুসরণ করেনি, তার আধুনিকতার তরণির পাল একটু পশ্চিমে হেলিয়ে দিল, কিন্তু দাঁড়ে বসল জাপানিরা। শুধু অতীত রোমন্থন করে এ ব্যাধি দূর করা সম্ভব নয়, দরকার উদ্যোগী কিছু মানুষ ও আন্তরিকতা। যার মাধ্যমে নতুন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা সম্ভব।
তামাকের গুঁড়ো
দিনহাটা থেকে সিতাই, সিতাই থেকে দিনহাটা প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। এই পথে পেটলা এলাকায় বেশ কিছুটা জায়গা জুড়ে রাস্তার ওপর শুকোতে দেওয়া তামাকের গুঁড়ো। তাতে পথ চলতি মানুষের শ্বাসকষ্ট, চোখজ্বালা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে যে সমস্ত নিত্যযাত্রী মোটর বাইক, অটোতে করে যাতায়াত করে তাদের ভোগান্তি একটু বেশি। যেখানে তামাকের অপকারীতার সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে বিশ্ব তামাক বিরোধী দিবস, তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট বা কৌটতে সতর্কবার্তা মুদ্রিত থাকে, সেখানে রাস্তার ওপর এবং রাস্তা সংলগ্ন স্থানে তামাকের গুঁড়ো শুকনো কতটা স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে সে ব্যাপারে প্রায় সকলেই উদাসীন। তামাক এবং তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবসায় অনেক পরিবার জড়িত। তাদের কোনও ক্ষতি না-করে যদি সাধারণ যাত্রীদের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে অন্যত্র তামাক শুকানোর ব্যবস্থা করা যায় তবে উপকৃত হবে অনেকেই।
অভ্যাসের বদল জরুরি
পশুপাখিদের খাঁচায় আবদ্ধ করার বিরুদ্ধে যখন কঠিন শাস্তি ঘোষণা করা হয়েছে, তখন বিভিন্ন শহরের বিপণিতে পিঞ্জরাবদ্ধ ছোট ছোট রঙিন পাখি এবং সাদা লোমশ কুকুর, খরগোশ ইত্যাদি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। তাদের সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিক্রি করার জন্য এবং কিছু ক্রেতা তাদের কিনেও নিয়ে যাচ্ছেন গৃহসজ্জার উপকরণ হিসাবে। কিন্তু এই ভাবে বনের পশুপাখিকে পিঞ্জরাবদ্ধ করে এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ করে আনন্দ উপভোগ করার পিছনে যে নৃশংসতা বেআব্রু হয়ে পড়েছে, তা নিন্দনীয়। বাস্তবে দেখা গেছে, খাঁচায় আবদ্ধ পশুপাখির একটি বৃহৎ সংখ্যাই খাঁচার ভিতরে মারা যায় প্রাকৃতিক পরিবেশের অভাবে। কোনও কোনও দোকানে রঙিন মাছও বিক্রির জন্য থাকে ইলেকট্রিক আলো ও নানা সামুদ্রিক সাজসজ্জা সমৃদ্ধ অ্যাকোরিয়ামে। জলের মধ্যে ঘোরাফেরা করা ফুলের মতো সেই রঙিন মাছগুলোকে দেখতে ভারি সুন্দর লাগে। কিন্তু এই শখও বর্জন করাই শ্রেয়। বরং বন্যেরা বনেই সুন্দর থাকুক এবং রঙিন মাছেরাও তাদের প্রকৃতিমায়ের কোলেই জলক্রীড়া করুক।
অপচয় বন্ধ হোক
এক দিকে যখন লোডশেডিং-এর দাপটে গরমে জীবন ওষ্ঠাগত, তখন দিনহাটা হাসপাতালের মাতৃমঙ্গল বিভাগের সামনে হ্যালোজেন বাতি দিনের বেলায় বিদ্যুৎ অপচয়ের সাক্ষ্য বহন করছে। এ চিত্র নিত্যদিনের।
এই বিভাগে চিঠি পাঠান সম্পূর্ণ নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করে।
উত্তরের চিঠি
আনন্দবাজার পত্রিকা প্রাঃ লিঃ
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড
শিলিগুড়ি-৭৩৪৪০১



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.