|
|
|
|
|
|
|
পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের দেড়শো পূর্তি |
ঐতিহ্য-সংরক্ষণ |
উদ্যোগটা শুরু হয়েছিল ১৮৬১-র ডিসেম্বরে। ভারতের পুরাকীর্তি অনুসন্ধানের দায়িত্ব পেলেন আলেকজান্ডার কানিংহাম। তাঁর কাজ প্রশংসা পেলেও সরকার ১৮৬৬-র গোড়ায় হাত গুটিয়ে নেয়। ১৮৭১-এর গোড়ায় আবার কানিংহামের নেতৃত্বেই শুরু হল ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের (এ এস আই) যাত্রা, যা কানিংহামের পর জন মার্শাল, দয়ারাম সাহনি, কে এন দীক্ষিত, মর্টিমার হুইলারের কাল পেরিয়ে আজও অব্যাহত। এখন সারা দেশে ৩৬৭৭টি স্মারক তাদের সংরক্ষণে, যার মধ্যে কলকাতা চক্রের আওতায় আছে পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম ও আন্দামান-নিকোবরের ১৩৬টি। পি সি মুখোপাধ্যায়, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, ননীগোপাল মজুমদার যেমন কাজ করেছেন এই সংস্থায়, তেমনই স্বাধীনতার পর এর সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন করেছেন অমলানন্দ ঘোষ বা দেবলা মিত্রের মতো বিশিষ্ট বাঙালি প্রত্নবিদও। শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও কম দায়িত্ব নেয়নি এ এস আই। |
|
মিশর, বাহরিন, অ্যাঙ্গোলা থেকে শুরু করে আফগানিস্তান, নেপাল, ভুটান, কাম্পুচিয়া, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কার অনুরোধে সাড়া দিয়ে সেখানেও পুরাকীর্তি সংরক্ষণের কাজ করেছে এই সংস্থা। এর মধ্যে কাম্পুচিয়ার আঙ্কোর ভাট এবং তা প্রোম, মায়ানমারের পাগানে আনন্দ মন্দির সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে তারা। বিদেশে এ এস আই-এর কাজকর্ম নিয়ে সংস্থার দেড়শো বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি বড় প্রদর্শনী বিভিন্ন শহর ঘুরে এখন কলকাতায় (সঙ্গে বাঁ দিকে তারই একটি ছবি)। ডালহাউসি এলাকায় কারেন্সি বিল্ডিং-এ এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন ১৫ সেপ্টেম্বর। সঙ্গে থাকছে ভারতীয় সংগ্রহশালার সহায়তায় আর একটি প্রদর্শনী, কলকাতা চক্রের সংরক্ষিত পুরাকীর্তি এবং বিভিন্ন প্রত্নক্ষেত্রে উৎখননের ছবি নিয়ে। কাজ চলছে এই সব সংরক্ষিত পুরাকীর্তির পুরনো ও নতুন ছবি, ভূমি নকশা ও বিবরণ সহ একটি বই প্রকাশেরও। শনিবারের অনুষ্ঠানে থাকবেন এ এস আই-এর ডিরেক্টর জেনারেল গৌতম সেনগুপ্ত, ভারতীয় সংগ্রহালয়ের অধিকর্তা অনুপ মতিলাল প্রমুখ। সঙ্গে ডান দিকের ছবিতে সুন্দরবনের জটার দেউলে সাম্প্রতিক উৎখননের দৃশ্য।
|
নকশি কাঁথা |
|
‘নক্সী কাঁথাটি বিছাইয়া সাজু সারা রাত আঁকে ছবি, ও যেন তাহার গোপন ব্যথার বিরহিয়া এক কবি’, রূপাইয়ের সঙ্গে মিলন থেকে বিচ্ছেদের যাবতীয় কাহিনি সাজু তুলে রেখেছিল নকশি কাঁথার বুকে। কাঁথা গ্রামের মেয়েদের আত্মপ্রকাশের মাধ্যম, না বলা অন্তরঙ্গ কথা তোলা থাকে এই এক টুকরো কাপড়ে। নানাবিধ ফোঁড় তুলে ধরে কাঁথার ভাষা। নিছক শীতবস্ত্র নয়, অতিথি আপ্যায়নে সুজনি কাঁথা, খাবার ঢাকতে বর্তন কাঁথা, প্রসাধন সামগ্রীর জন্য আরশিলতা, ধর্মগ্রন্থ মুড়ে রাখতে গিলাফ, এমনকী মৃতদেহের আচ্ছাদনের জন্যও রয়েছে পৃথক কাঁথা। একটি কাঁথায় দেখা যাচ্ছে, ‘শ্রীমতি বামাসুন্দরীর দাস্যা। মূল্য ৩ টাকা’ শিল্পীর নাম সহ দাম সূচিশিল্পের মাধ্যমে ধরা রয়েছে। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে গ্রামে ঘুরে অসাধারণ এই শিল্পটির খুঁটিনাটি জেনে লোকসংস্কৃতিবিদ্ শীলা বসাক লিখেছিলেন বাংলার নকশি কাঁথা। এই বইকে ভিত্তি করেই দিল্লি দূরদর্শন সম্প্রতি তৈরি করল তথ্যচিত্র, ‘দ্য কাঁথা স্টিচ অব বেঙ্গল’। সঙ্গে বই থেকে নেওয়া ছবিতে কাঁথা তৈরিতে ব্যস্ত শিল্পীরা, ব্রাক, ঢাকা।
|
উপনিবেশে কারাবাস |
সভাসমিতির কংগ্রেস নেতা আর জেলবন্দি জওহরলাল কি আদপে এক? বাইরের জীবনে ব্যস্ত রাজনীতিক, পরিবারকেও বিশেষ সময় দিতে পারেন না। অথচ জেল থেকে তিনিই কন্যাকে চিঠি লেখেন। লিখে ফেলেন ‘ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া।’ মতিলাল নেহরু স্যুট পরতেন, কারাবাসের পরই পরনে উঠল খাদির পোশাক। এ রকম হরেক উদাহরণ সাজিয়েই সম্প্রতি জাতীয় গ্রন্থাগারে বি এস কেশবন স্মারক বক্তৃতা দিলেন জাতীয় অভিলেখাগারের অধিকর্তা ও ইতিহাসবিদ মুশিরুল হাসান। ‘উপনিবেশে জেল খাটা’ নিয়ে সেই বক্তৃতায় মুশিরুল নিয়ে এলেন কবি ফৈজ আহমদ ফয়েজ থেকে সরোজিনী নাইডু, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, মৃদুলা সারাভাই সকলের কথাই। কারাবাসই নেতাদের মনে স্বাধীনতার স্বপ্নের সঙ্গে তিতিক্ষা এবং আধ্যাত্মিকতা মিশিয়ে দিত। তখন নিজেকে কেউ প্রায় যিশুখ্রিস্ট ভাবতেন, কেউ বা হজরত মহম্মদ। বন্দিদের মধ্যে চলত রাজনৈতিক চিন্তার আদানপ্রদানও। তাই জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস রাজনীতি করে জেলে গিয়েছেন, এবং জেল থেকে বেরিয়ে কমিউনিস্ট দলে নাম লিখিয়েছেন, এমন নেতার অভাব নেই। বক্তৃতার শেষে ইতিহাসবিদ বরুণ দে মনে পড়িয়ে দিলেন, উপনিবেশের প্রথম পর্বে জাতীয় গ্রন্থাগারের এই তল্লাটেই ছিল হরিণবাড়ি জেলখানা। সেখানেই মহারাজা নন্দকুমারকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।
|
সীমানা ছাড়িয়ে |
সীমানা ছাড়িয়েও বন্ধুত্ব হয় প্রমাণ করল একটি শিল্প প্রদর্শনী। চিন-জাপান-কোরিয়া-তাইল্যান্ড এবং ভারতের মোট ছাব্বিশ জন শিল্পীর চিত্র-ভাস্কর্য নিয়ে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে চলছে একটি প্রদর্শনী। রয়েছেন এ দেশের ৬ জন শিল্পী। সমকালীন চিত্রকলা এখন বিশ্বজনীন, অতএব অন্যদের কাজও দেখা বা বোঝার সময় এসেছে বলছিলেন শিল্পী যোগেন চৌধুরী। কালি, জল, তেলরঙ, ছাপাচিত্র, ওয়াশ ছবির সঙ্গে এখানে রয়েছে সেরামিক, টেক্সটাইল, ল্যাকার ও কাঠের কাজ। ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে যৌথ ভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজক ‘এশিয়ান আর্টিস্টস এক্সচেঞ্জ প্ল্যানিং কমিটি’। কলকাতার পরে এ প্রদর্শনী ঘুরবে অন্যান্য দেশে। আর্ট অ্যাক্রস এশিয়া রিনিউড এনকাউন্টার্স, এশিয়ান আর্টিস্টস এক্সচেঞ্জ-২০১২ শীর্ষক এই প্রদর্শনী ভিক্টোরিয়ার পোর্ট্রেট গ্যালারিতে চলবে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (সোমবার ছাড়া) ১০-৫টা। প্রকাশিত হয়েছে একটি সুমুদ্রিত পুস্তিকা। এ দিকে ১১ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় কুইন্স হলের দোতলার গ্যালারি দর্শকদের জন্য খুলে দেবেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন।
|
গুরুসদয় ৫০ |
তথ্য সংগৃহীত হয় ক্ষেত্র সমীক্ষার মাধ্যমে। গবেষণা বা পরিকল্পনার প্রাথমিক সূত্র থাকে সেই তথ্যের মধ্যে। গুরুসদয় দত্ত গুরুত্ব বুঝেই শুরু করেছিলেন বাংলার নানা লোককৃতির সংগ্রহ। বর্তমান বিশ্বের তথ্য চাহিদার কথা ভেবেই জোকার গুরুসদয় সংগ্রহালয়ে ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হল তিন মাসের একটি পাঠ্যক্রম, ‘ফিল্ড ওয়ার্ক অ্যান্ড সোশ্যাল সার্ভে - ডেটা কালেকশন অ্যান্ড প্রসেসিং টেকনিক্স’ শীর্ষকে। সারা দেশে বর্তমানে অজস্র স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তথ্যসংগ্রহের সঙ্গে যুক্ত। গুরুসদয় সংগ্রহালয়ের সঙ্গে এ কাজে হাত মিলিয়েছে এমনই কয়েকটি সংস্থা। এই বছর এই সংগ্রহালয় পঞ্চাশ বছর পূর্ণ করেছে। সে উপলক্ষে আছে এই ধরনের নানা অনুষ্ঠান।
|
সন্দর্ভ |
শুরুতে ছিল শখের থিয়েটার। দক্ষিণ কলকাতার গোলপার্ক অঞ্চলের কয়েকজন যুবক তৈরি করে নাট্যদল সন্দর্ভ। বছরে দুই-একটা নাটক। সেটা সত্তর দশকের শেষ দিক। সংখ্যায় কম, কিন্তু ছেদ পড়েনি। পরে এদের সঙ্গে পরিচয় ঘটে নাট্যশিল্পী দীপেন্দ্র সেনগুপ্তর। সন্দর্ভ পায় পেশাদারিত্বের ছোঁয়া। ’৯৮-এ যোগ দেন নাট্যশিল্পী সৌমিত্র বসু। তখন থেকে শুরু হয় ধারাবাহিকতা। ১৩ সেপ্টেম্বর ওরা ৩৬ বছরে পা দেবে। জন্মদিন উপলক্ষে সন্দর্ভ সঙ্গে নিয়েছে কোচবিহার, বালুরঘাট, হাওড়া, খড়দহ ও ব্যারাকপুরের পাঁচটি নাট্যদলকে। ৯ সেপ্টেম্বর থেকে এদের পরিবেশিত নাটকের মাধ্যমে সন্দর্ভ উদ্যাপন করছে জন্মদিন। উদ্বোধন করেন ব্রাত্য বসু। সঙ্গে নিজেদের নাটক। আজ ও আগামী কাল রবীন্দ্রসদন ও মধুসূদন মঞ্চে রয়েছে সন্দর্ভর নাটক ‘যাহারা তোমার’, ‘বোষ্টমী’।
|
স্মরণে মননে |
পরিচয় শিক্ষক ও গবেষক। বেথুন, কৃষ্ণনগর ও প্রেসিডেন্সি কলেজে বাংলা ও সংস্কৃত অধ্যাপনা করেছেন বহু দিন। চিন্তাহরণ চক্রবর্তীর (১৯০০-১৯৭২) গবেষণার বিষয় ছিল প্রাচীন বাংলা ও সংস্কৃত পুঁথির পাঠোদ্ধার তথা বর্ণনাত্মক বিবরণ সংকলন এবং ভারতীয় ঐতিহ্য, তন্ত্র, লোকাচার, সাহিত্য এবং সামাজিক বিবর্তনের তত্ত্ব ও ইতিহাস চর্চা। ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত ছিলেন এশিয়াটিক সোসাইটি ও বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে। ‘ভারতকোষ’-এর অন্যতম সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৪ সেপ্টেম্বর বিকেল পাঁচটায় জীবনানন্দ সভাঘরে অধ্যাপক চিন্তাহরণ চক্রবর্তী স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হবে। বিষয় ‘গবেষণার রকমফের’, বলবেন সুধীর চক্রবর্তী। ‘স্মরণে মননে চিন্তাহরণ’ অনুষ্ঠানটির আয়োজনে সোসাইটি ফর আন্ডারস্ট্যান্ডিং কালচার অ্যান্ড হিস্টরি ইন ইন্ডিয়া (সুচি)।
|
হাঙ্গেরির ছবি |
রুশ বিপ্লবের পর লেনিন সোভিয়েত ইউনিয়নে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি জাতীয়করণ করারও আগে হাঙ্গেরি নিজেদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সরকারি আওতায় নিয়ে আসে। তারপর বহু পালাবদল, রাজতন্ত্র নাতসিতন্ত্র সমাজতন্ত্রের চাপ পেরিয়ে কিছুকাল হাঙ্গেরির সিনেমা ও তার দর্শক জাতীয়তার স্বাদ পেয়েছে। সে দেশের সিনেমা ও তার স্রষ্টারা আজ সারা দুনিয়ায় আদৃত। কলকাতায় নন্দনে ১০-১২ সেপ্টেম্বর সেই হাঙ্গেরির ছবির উৎসব। ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ, দিল্লির দ্য হাঙ্গেরিয়ান ইনফরমেশন অ্যান্ড কালচারাল সেন্টার ও নন্দনের উদ্যোগে, উদ্বোধন করবেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। অন্য দিকে উপনিষদের আনন্দকে কেন্দ্র করে বৈষ্ণবীয় লীলা, সুফি ও বাউলধর্ম, যুক্তিবোধ ইত্যাদির ভিত্তিতে গড়ে ওঠা রবীন্দ্রনাথের মানবধর্ম নিয়ে গবেষণাধর্মী ছবি করেছেন রুম্পা গুঁই ও শুভব্রত দে ‘হৃদা মনীষা’। দেখানো হবে ১৩ সেপ্টেম্বর সন্ধে ৬টায় গোর্কি সদনে। ১২-য় কবির রাশিয়া ভ্রমণ নিয়ে একটি রুশ ছবি। আয়োজক আইজেনস্টাইন সিনে ক্লাব।
|
বঙ্গের শিল্প |
পুজো আসছে। গোটা বঙ্গের শিল্প আরও এক বার শহরের মন্ডপে মন্ডপে ফুটে উঠতে চলেছে। কিন্তু ওইটুকুই, তার পরে আসছে বছর আবার হবে। ইতিমধ্যে অযত্নে আর অভাবে ধ্বংস হতে থাকবে বাংলার শিল্প ও শিল্পী। তবু ভরসা, কিছু গঠনমূলক উদ্যোগ আজও হয়। তেমনই একটি, শুরু হয়েছে এই শহরে। বঙ্গের কাঁথা, পুতুলনাচ, কাষ্ঠশিল্প নিয়ে দুই পক্ষকালের কর্মশালা ও আলোচনা। ‘বঙ্গের শিল্প: জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যের পুনর্মূল্যায়ন’ শীর্ষকে এই আয়োজন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের। ৭ সেপ্টেম্বর সূচনা হল কাঁকুড়গাছির অম্বেডকর ভবনে, ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে কর্মশালা ও আলোচনাসভা।
|
ভারতে প্রথম |
যে পরীক্ষণাগারে তাঁর বৈজ্ঞানিক পথ পরিক্রমণ হয়েছিল, সেই পরীক্ষণাগার এখন আর নেই। পাল্টে গিয়েছে ঘর, পাল্টে গিয়েছে বাড়ির খোলনলচে। তবুও জগদীশচন্দ্র বসুর মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ আবিষ্কারের স্থান, সেই পুরনো বাড়ি প্রেসিডেন্সি কলেজের মেন বিল্ডিংটিতেই বসবে স্মৃতিফলক। এই শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, বেলা দুটোয়। সে দিনই সকালে আরও একটি ফলক বসবে কলকাতার ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্স-এ, সি ভি রমন-এর ‘রমন এফেক্ট’ আবিষ্কারের স্মরণে। নিউ ইয়র্কের ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ার্স-এর প্রেসিডেন্ট স্বয়ং কলকাতা আসছেন এই দুটি ফলক বসাতে। গত বছর দশেক ধরে শুরু হয়েছে এই কাজ: যোগাযোগ বিজ্ঞানের ইতিহাসে যেগুলি বৃহত্তম ‘মাইলস্টোন’ আবিষ্কার বলে মনে করে বিশ্বখ্যাত এই প্রতিষ্ঠানটি, সেখানে একটি করে ফলক বসানো চলছে। এশিয়া মহাদেশে জাপান পেয়েছে এমন একটি ফলক। ভারতে এই প্রথম। প্রেসিডেন্সি কলেজে এই উপলক্ষে অনুষ্ঠান ডিরোজিও হলে, বেলা দুটো থেকে। আই ই ই ই-র প্রেসিডেন্ট, বসু বিজ্ঞান মন্দিরের প্রধান, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছাড়াও শোনা যাবে অধ্যাপক সোমক রায়চৌধুরি, বিজ্ঞান-গবেষক বিকাশ সিংহ ও সব্যসাচী ভট্টাচার্যের কথা।
|
অনাথবাবু |
|
ছবি: হীরক সেন |
ওরকম কোট, ও ধরনের শার্টের কলার, ওই চশমা, আর বিশেষ করে ওই বুট জুতো এসব আর আজকালকার দিনে কেউ পরে না।’ দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে মনে হচ্ছিল যেন সত্যজিতের গল্পের পাতা থেকে উঠে এসেছেন অনাথবাবু। ‘অনাথবাবুর ভয়’ অবলম্বনে সন্দীপ রায়ের নতুন ছবি যেখানে ভূতের ভয়-এর শুটিং চলছিল শান্তিনিকেতনের আশপাশ কখনও রায়পুরে, কখনও-বা ইলামবাজারের দিকে বনলক্ষ্মী বাসস্টপ পেরিয়ে। বিরতিতে দ্বিজেনবাবু চেয়ার টেনে বসলেন বনলক্ষ্মী-পেরনো শালবনটাতে, বৃষ্টিভেজা বিকেল, ফিল্ম ইউনিটের লোকজন থাকলেও নির্জন চারপাশ। ‘চলচ্চিত্রকার হিসেবে এত নাম সত্যজিৎবাবুর যে গল্পকার হিসেবে তত কথা হয় না তাঁকে নিয়ে। কী আশ্চর্য পর্যবেক্ষণ এই অনাথবাবু লোকটা সম্পর্কে, এই সময়ে বসবাস করলেও সে যে আদতে এ-সময়ের মানুষ নয়, তার ভিতরে আর-একটা মানুষ বাস করে, সে বিবরণ গল্পটির ছত্রে ছত্রে।’ দ্বিজেনবাবুর মন্তব্যে টের পাওয়া যায় মঞ্চদাপানো অভিনেতার চোখ থেকেই আঁতিপাতি করে চরিত্রকে দেখেন। ‘আমার কেমন মনে হয় প্রফেসর শঙ্কু বা লালমোহনবাবু ওরফে জটায়ু-র সঙ্গে এই অনাথবাবুর মানুষটার কোথাও যেন একটা আশ্চর্য মিল। কত রকমের শেডস, সেন্স অব কমেডি, নিজে মজা পেতে ভালবাসে আবার অন্যকে মজা দিতেও ভালবাসে, না হলে লোকটা বলে ভূত আমায় ফাঁকি দিয়েছে।’ নাটকেও এ ধরনের রহস্যময় মানুষকে নিয়েই কাজ করতে ভালবাসেন দ্বিজেন, মুষ্টিযোগ, এই ঘুম, ভূতনাথ থেকে হালের মনশ্চক্ষু তার হাতে-নগদ প্রমাণ। |
|
|
|
অজিন্ঠার শিল্পী |
|
ছবি: গোপী দে সরকার |
শিল্পের সাগরে ডুবে গেলাম’ বলছিলেন অজিন্ঠায় অভিভূত শিল্পী গণেশ হালুই। ময়মনসিংহের জামালপুরে জন্ম ১৯৩৬-এ। দেশভাগের পর চলে আসা এ পারে। ১৯৫১-তে ভর্তি হন সরকারি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে। ১৯৫৬-য় পাঠ্যক্রম শেষ করার পর বুদ্ধগয়ায় এক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে কাজ জুটে যায়। কাজ শেষে রোজ রাতে তাঁবুর বাইরে বসে এক জন শোনাত অজিন্ঠার গল্প, নন্দলালের কাজের কথা। স্বপ্ন দেখার সেই শুরু, সুযোগ মিলল ১৯৫৭-য়। একটা চাকরি মিলল অজিন্ঠায় ছবি আঁকার। বেঙ্গালুরু, মুম্বই ও দিল্লির তিন জনের সঙ্গে গণেশবাবুও যোগ দিলেন ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের সেই গবেষণার কাজে। ছয় বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রমে আবিষ্কার করতে থাকলেন অজিন্ঠার চিত্র-রহস্য। হারিয়ে যাওয়া অংশের পুনরঙ্কন, সিলিং-এর বিভাজন পদ্ধতি এমন আরও নানা বিষয়ে আলোকপাত করেন তিনি। ১৯৯৩ পর্যন্ত তিনি যুক্ত ছিলেন সরকারি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের সঙ্গে। ওঁর অধীনে তৈরি হয়েছেন আজকের বহু খ্যাতকীর্তি শিল্পী। দেশ-বিদেশে আয়োজিত হয়েছে বহু প্রদর্শনী। ছোটদের জন্য কাজ করেছেন ফ্রগস অ্যান্ড আ স্নেক (এন বি টি) এবং চলতে চলতে (পাপু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট) বই দু’টিতে। শিল্পীকে নিয়ে তথ্যচিত্র হয়েছে দুটি। আকাদেমি ও শিরোমণি-সহ তিনি পেয়েছেন অজস্র পুরস্কার। ১৯৭১ থেকে তিনি সোসাইটি অব কনটেম্পোরারি আর্টিস্টস-এর সদস্য। এখনও নিয়ম করেই করেন চিত্রচর্চা। ১৯৯১-তে লিখেছিলেন দি আর্ট অব অজিন্ঠা (নিউ পার্সপেকটিভস) বইটি। সম্প্রতি শেষ করেছেন পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ ও চিত্রসহ পাণ্ডুলিপি দ্য ড্রইংস অব অজিন্ঠা। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ উদ্যোগী হয়েছে বইটি প্রকাশে। সর্বেক্ষণের দেড়শো বছর উপলক্ষে ১৫ সেপ্টেম্বর কারেন্সি বিল্ডিং-এ এক অনুষ্ঠানে সম্মান জানানো হবে শিল্পীকে।
|
|
|
|
|
|
|
|