গ্রাম ঘিরে তৈরি হয়েছে একটার পর একটা মুরগি খামার। ওই সব মুরগি খামার থেকে আসা দুর্গন্ধ ও মশা-মাছির উৎপাতে এমনিতেই ক্লান্ত রাজনগরের ছোট্ট আদিবাসী গ্রাম কানাইপুরের বাসিন্দারা। তার উপরে কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থা আরও একটি খামার তৈরির উদ্দেশ্যে কানাইপুরে জমি কেনায় ভবিষ্যতে তাঁদেরকে ওখান থেকে উচ্ছেদ করা হবে বলে আশঙ্কায় ভুগছেন ওই গ্রামে বসবাসকারি আদিবাসীদের একাংশ।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, ইতিমধ্যেই ওই সংস্থাটি তাঁদের কেনা জায়গা ঘিরতে কংক্রিটের ছোট ছোট পিলার দিয়ে এমনভাবে সীমানা নির্ধারণ করেছে যে সেই অনুযায়ী প্রাচীর ঘেরা হলে বেশ কিছু আদিবাসীদের বাড়ি ভাঙা পড়বে। শুধু তাই নয় ইতিমধ্যেই সংস্থা ইট নামিয়েছে এবং লোক লাগিয়ে বড় বড় গর্ত খুঁড়ে, গাছ কেটে প্রাচীর তৈরির কাজ শুরু করতে চেয়েছিল। অবশ্য বাসিন্দাদের বাধায় সে কাজ আপাতত বন্ধ। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, এ ব্যাপারে স্থানীয় চন্দ্রপুর পঞ্চায়েত ও রাজনগরের বিডিওকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।
সরব আদিবাসী গাঁওতার আহ্বায়ক সুনীল সোরেনও। তিনি বলেন, “কোন সংস্থা জমি কিনেছেন, কতটা পরিমাণ জমি কিনেছেন, কী ফার্ম করতে চাইছেন, তাতে পরিবেশ দূষণ হবে কি না বা যে যে আদিবাসীদের বাড়ি সংস্থা চিহ্নিত সীমার মধ্যে রয়েছে সেই পরিবারগুলির কী হবে, সে বিষয়ে ওই গ্রামের আদিবাসীদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই কাজ শুরু করতে চাইছিল সংস্থাটি। বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। প্রশাসন সঠিক পদক্ষেপ না গ্রহণ করলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাব।” |
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুবরাজপুরের গুন্ডোবা গ্রামের মাহাতা পরিবারের একটি বাগানের ছিল কানাইপুরে। ওই পরিবারের সম্মতিতেই ওখানে বেশ কিছু বছর আগে কয়েক ঘর আদিবাসী বসবাস করতে শুরু করে। বর্তমানে আদিবাসী পরিবারগুলির সংখ্যাটা হয়েছে ৩২ ঘর। সম্প্রতি ওই পরিবার কলকাতার একটি সংস্থার কাছে ২৮ বিঘা জমি বিক্রি করে দিয়েছে। ওই সংস্থা যখনই তাদের ক্রয় করা সম্পত্তি ঘেরার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সমস্যার সূত্রপাত তখন থেকেই। কারণ যে পরিমাণ জমি ওই সংস্থা কিনেছে, তার কিছুটা অংশে বেশ কয়েকটি আদিবাসী পরিবার বসবাস করছেন। কানাইপুরের পটল মুর্মু, সুমি হেমব্রম, দিদিমনি হাঁসদা, পুলিশ মুর্মুরা বলেন, “আমরা বেশ কয়েক পুরুষ ধরে এখানে বাস করছি। চারিদিকে মুরগি খামার তৈরি হয়েছে। দুর্গন্ধ ও মশা-মাছির উৎপাতে এমনিতেই ভীষণ কষ্টে আছি। আবার যদি সে রকম কিছু একটা তৈরি করতে গিয়ে আমাদের ঘর, খামার গাছপালা সব চলে যায় তা হলে আমরা থাকব কোথায়।”
রাজনগরের বিডিও প্রভাংশু হালদার বলেন, “কলকাতার যে সংস্থাটি জমি কিনেছে তার মধ্যে তিন বিঘার মত জায়গা রয়েছে যেখানে বর্তমানে কয়কটি আদিবাসী পরিবার বসবাস করছেন। আমি ওই সংস্থাকে বলেছি ওই পরিমান জমি ছেড়ে দিয়ে কাজ শুরু করতে। কোনও ভাবেই আদিবাসীদের ঘরবাড়িতে হাত দেওয়া যাবে না। তার আগে স্থানীয় চন্দ্রপুর পঞ্চায়েত, আদিবাসী ও কলকাতার ওই সংস্থার লোকজনকে বৈঠক করে সমস্যা মেটাতে বলা হয়েছে। যদি এ ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা থাকে বিষয়টিতে আমি হস্তক্ষেপ করব।”
এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সংস্থার পক্ষে শরৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা মূলত গোটারি (ছাগল) এবং ডেয়ারি (গরু) ফার্ম করার জন্য জমি কিনেছি। তবে আমাদের ক্রয় করা জমিতে বসবাসকারি আদিবাসী পরিবারগুলির বাড়িতে হাত দেব না। সেগুলি বাইরে রেখেই কাজ করব। শুধু মাত্র ক্রয় করা জমিটির চিহ্নিতকরণের জন্য ইট, সিমেন্ট দিয়ে ছোট করে পিলার করেছি। এ নিয়ে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। এ নিয়ে আমরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলব।” |