খুশিতে বাঁচুন
সুস্থ থাকুক কোমর
স্কুলপড়ুয়া থেকে গৃহবধূ কোমরের ব্যথায় কাবু অনেকেই। এর মূল কারণ জীবনযাপনের ধরন। এক নাগাড়ে চেয়ারে বসে ঝুঁকে কাজ করা, অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করা, পেটে অতিরিক্ত মেদ, হঠাৎ পড়ে গিয়ে আঘাত বিভিন্ন কারণে ব্যথা হতে পারে।
কোমরের ব্যথায় প্রথমেই নজর দিন ‘পসচার’ ঠিক রাখার দিকে। দাঁড়িয়ে রান্না করাই হোক বা চেয়ারে বসে লেখালেখি মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক S-এর আকার বজায় রাখতে হবে। পিঠ গোলাকার হলেই চাপ পড়ে দু’টি কশেরুকার (ভার্টিব্রা) মাঝে থাকা ‘ডিস্কে’। এই ‘ডিস্কে’র কাজ হল আঘাত সহ্য করা। মেরুদণ্ডকে তার স্বাভাবিক আকারে রাখার সহজ উপায় হল পিঠ টানটান রাখা। যাঁদের ঝুঁকে কাজ করার প্রবণতা রয়েছে তাঁদের বিশেষ নজর রাখা দরকার।
হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ
কী ভাবে পিঠ টানটান রাখবেন? একটি লাঠি নিন। লাঠিটিকে মাথা, পিঠ আর কোমরের সঙ্গে ছুঁইয়ে রেখে হাত দিয়ে ধরুন। এ ভাবে লাঠিটি ধরে রেখে সামনে ঝুঁকুন অথবা হাঁটু ভেঙে স্কোয়াট করার চেষ্টা করুন। এই সময়ে লাঠিটি যদি মাথা, পিঠ আর কোমর তিনটি জায়গাই স্পর্শ করে থাকে তবে আপনার মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক আকার বজায় থাকছে। কোনও একটি জায়গা থেকে সরে যাওয়া মানেই আকারের সমস্যা হয়েছে।
মূলত দু’ধরনের কোমরের ব্যথা নিয়ে আলোচনা করছি। অনেক ক্ষণ বসে থাকার পরে যাঁদের কোমরে ব্যথা শুরু হয় তাঁদের ব্যথার সঙ্গে ‘ডিস্ক হার্নিয়েশনের’ যোগ আছে। সহজ কথায় ‘ডিস্কের’ সমস্যা। এ ধরনের সমস্যায় সামনের দিকে ঝুঁকলে ব্যথা আরও বাড়ে। মুক্তি পেতে গেলে শরীরের পিছনের গভীরের মাংসপেশিকে শক্তিশালী করতে হবে। পাশাপাশি নিতম্বের গ্লুটিয়াস পেশি আর পায়ের হ্যামস্ট্রিং পেশিকে দীর্ঘায়িত এবং শক্তপোক্ত করতে হবে। নীচের ব্যায়ামগুলি করুন
থ্রি পয়েন্ট কন্ট্যাক্ট
(১) বার্ড-ডগ হোল্ড (লাঠির সাহায্যে): দুই তালু আর দুই হাঁটুর উপর ভর দিয়ে যে ‘পসচার’ হয় তাকে বলে ‘অল ফোর’। এই ‘অল ফোর’ অবস্থা থেকে বাঁ হাত সামনের দিকে তুলে সোজা আর টানটান করুন। একই সাথে ডান পা পিছন দিকে তুলে সোজা টানটান করুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে পেটকে মেরুদণ্ডের দিকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করুন যাতে গভীরের পেশিগুলি ‘অ্যাক্টিভেটেড’ হয়। ৩০ সেকেন্ড এ ভাবে চেষ্টা করার পরে হাত-পা বদলান এবং একই ভাবে ৩০ সেকেন্ড ডান হাত-বাঁ পা ধরে রাখুন। একটু বিশ্রাম নিয়ে তিন-চার বার রিপিট করুন। এই ৩০ সেকেন্ড লাঠিটি যেন মাথা, পিঠের উপরের অংশ আর কোমর স্পর্শ করে থাকে। পাশে কেউ থাকলে তাঁকে নজর রাখতে বলুন।
ব্রিজ
(২) ব্রিজ: মাটিতে শুয়ে দুই হাঁটু ছবির মতো ভাঁজ করুন। দুই হাত মাটিতে রেখে কোমর শূন্যে তুলুন যাতে কোমর আর বুক একই উচ্চতায় থাকে। আগের মতো পিঠকে মেরুদণ্ডের দিকে টেনে নিন। ৩০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এতে কোমরের গভীরের লাম্বার মাল্টিফিডাস আর পেটের ট্রান্সভার্সাস অ্যাবডমিনিস পেশি কার্যক্ষম হয়। সপ্তাহ দুয়েক পরে এক পায়ে ভর রেখে অন্য পাটি শূন্যে তুলে কোমর ৩০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। অন্য পায়েও একই ভাবে করবেন।
দু-পায়ে বা এক পায়ে ব্রিজ মোট ৩-৪ বার করুন।
অনেকের বেশি ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে বা মেরুদণ্ডকে অতিরিক্ত প্রসারিত (Hyper Extend) করলে কোমরে ব্যথা হয়। এর সঙ্গে ফ্যাসেট অর্থাৎ দু’টি কশেরুকার মধ্যের বন্ধনীর সমস্যার মিল আছে। পিঠের পেশিও সঙ্কুচিত হতে পারে। এই সমস্যার জন্য নীচের ব্যায়ামগুলি কাজে দেবে। মনে রাখবেন, ভুজঙ্গাসন জাতীয় মেরুদণ্ডের হাইপারএক্সটেশন একদম করবেন না।
প্ল্যাঙ্ক
(৩) প্ল্যাঙ্ক: উপুড় হয়ে দুই কনুই আর পায়ের পাতায় ভর দিয়ে পিঠ-কোমরকে শূন্যে তুলে ৩০ সেকেন্ড এক সরলরেখায় ধরে রাখতে হবে। আগের মতো পেট ভিতরের দিকে টেনে রাখুন। এতে মেরুদণ্ডকে আনুভূমিক ভাবে জড়িয়ে থাকা ট্রান্সভার্সাস অ্যাবডমিনিস পেশি কার্যক্ষম হয়। সপ্তাহ তিনেক মেঝেতে ব্যাপারটা রপ্ত করার পরে একই ব্যায়াম সুইস বলে করুন (ছবির মতো)।
ক্রাঞ্চ হোল্ড গ্লুটিয়াস স্ট্রেচ
(৪) ক্রাঞ্চ হোল্ড: মাটিতে শুয়ে দু’হাঁটু ভাঁজ করে রাখুন। হাত দু’টি শরীরের দু’পাশে মাটিতে থাকবে।
এ বার ঘাড় টানটান রেখে পেট ভিতরের দিকে টেনে নিয়ে পিঠটা মাটি থেকে আপনার সাধ্যমতো শূন্যে তুলে ৫-১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। নজর দিন কোমরের কাছে মেরুদণ্ড যেন বেঁকে না থাকে। একটু বিশ্রাম নিয়ে ৩-৪ বার রিপিট করুন। পাশাপাশি পিঠের পেশিগুলি দীর্ঘায়িত করার জন্য কিছু স্ট্রেচিং করুন। সবগুলি ব্যায়ামই রোজ নিয়ম করে করতে পারেন।
দু’ধরনের স্ট্রেচ করতে পারেন। মাটিতে শুয়ে হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ করুন। নিজে না-পারলে কারও সাহায্য নিন। ৩০ সেকেন্ড করে ধরে থাকুন। একই সঙ্গে গ্লুটিয়াস পেশি স্ট্রেচ করুন। এই দুই পেশি সঙ্কুচিত হলে মেরুদণ্ডের আকার বিগড়ে যায়। চাপ পড়ে ডিস্কে। স্ট্রেচগুলি তিন বার করে করুন।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

 



অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.