বারাসতে মদ্যপ দুষ্কৃতীদের হাতে চিকিৎসক খুনের ঘটনাকে দুই পরিবারের মধ্যে ঝগড়ার পরিণাম বলে মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার মহাকরণে তিনি বলেন, “বারাসতে শেষ যে-ঘটনাটি ঘটেছে, দুই পরিবারের ঝগড়াই তার পিছনে আছে বলে আমার কাছে খবর। উনি (ওই চিকিৎসক) অসুস্থ ছিলেন। ধাক্কাধাক্কিতে ঘটনাটা ঘটেছে।”
সোমবার দুপুরে বাড়ির সামনেই দুই মদ্যপ দুষ্কৃতীর বেলেল্লাপানার প্রতিবাদ করতে গিয়ে খুন হন বারাসতের কদম্বদাছির পূর্ব ইছাপুরের জনপ্রিয় চিকিৎসক বিকাশবন্ধু মল্লিক। তিনি যে অসুস্থ ছিলেন, সেই তথ্য অবশ্য পুলিশি রিপোর্টেও রয়েছে। সেই অসুস্থতার কথা বলে বিকাশবাবুকে রেহাই দেওয়ার জন্য দুষ্কৃতীদের হাতে-পায়েও ধরেছিলেন জ্যোৎস্না মণ্ডল নামে এক প্রতিবেশী। বিকাশবাবুর মৃত্যুর পরে তাঁর পরিবার সূত্রেও জানানো হয়, বছর দুয়েক আগেই কলকাতার একটি নার্সিংহোমে বাইপাস সার্জারি হয় বিকাশবাবু। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাপারে ওই চিকিৎসকের পরিবারের পাল্টা প্রশ্ন, “এক জন অসুস্থ বৃদ্ধ মানুষ অকারণে অল্পবয়সী মদ্যপদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি-মারপিট করতে যাবেন কেন?”
পুলিশি রিপোর্টে বিকাশবন্ধু মল্লিক খুন হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু দুষ্কৃতীদের সঙ্গে ওই চিকিৎসক বা তাঁর পরিবারের পূর্ব পরিচয় বা ‘ঝগড়া’ ছিল বলে কোনও উল্লেখ নেই তাতে। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে কটাক্ষ করে বলেন, “বারাসতের ঘটনাটিকেও লঘু করে দেখানো হচ্ছে। ওটা নাকি দুই পরিবারের মধ্যে কলহ! ব্যাপারটা নাকি কিছুই না!” ঘটনায় অভিযুক্ত দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে খুনের মামলা শুরু করেছে পুলিশ। ওই দু’জনই বাংলাদেশের নাগরিক এবং কদম্বগাছির একটি বস্তিতে থেকে এলাকায় দুষ্কর্ম করে বেড়াত বলে অভিযোগ।
মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের মন্তব্য প্রসঙ্গে বিকাশবাবুর ছোট মেয়ে মালতী মল্লিক বলেন, “ওই দু’জন কেন, আমাদের সঙ্গে গোটা এলাকার কোনও বাসিন্দারই ঝগড়া নেই। যে-মদ্যপ দুষ্কৃতীরা ওই ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা তো বহিরাগত। ওদের তো আমরা চিনিই না।” স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষিকা মালতীদেবীর প্রশ্ন, “বাবার মৃত্যুর পরে আমরা তো কোনও ক্ষতিপূরণ দাবি করিনি। তা হলে এ-সব নিয়ে রাজনীতি হবে কেন? এক জন এমন নৃশংস ভাবে খুন হওয়ার পরেও মুখ্যমন্ত্রী এই ধরনের কথা কী করে বলেন?” ওই এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, বিকাশবাবু শুধু জনপ্রিয় চিকিৎসকই নন, দরদি মানুষ ছিলেন। দুষ্কৃতীরা মদ ও সাট্টার ঠেক চালাত। ওই হত্যাকাণ্ডের পরে সেই ঠেক ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাসিন্দাদের প্রশ্ন, তা হলে মুখ্যমন্ত্রী এ-সব বলে কোন ব্যাপারটাকে আড়াল করতে চাইছেন? তিনি তো পুলিশমন্ত্রীও। তাঁর কাছে এ-সব তথ্য নেই কেন? কারা তাঁকে এই ‘খবর’ (দুই পরিবারের ঝগড়া) দিল?
বারাসতের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে অবশ্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “বারাসতে কিছু কিছু ঘটনা ঘটছে। জায়গাটার পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। তাই পুলিশের ক্ষেত্রে একটু পরিবর্তন করছি।”
ইতিমধ্যেই বারাসতের এসডিপিও বদলি হয়েছেন। নতুন এসডিপিও হিসেবে সুবীর চট্টোপাধ্যায় কাজে যোগও দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্যকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁকে কলকাতা পুলিশের দক্ষিণ-পূর্ব ডিভিশনের ডিসি করা হয়েছে। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন সুগত সেন। তিনি জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার ছিলেন। সুগতবাবু এক সময় উত্তর ২৪ পরগনা জেলাতেই এসডিপিও এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কাজ করেছেন। |