টিউশন নিয়ে বাড়ি ফেরার সময়ে বাস কন্ডাক্টরের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে বচসা হয়েছিল তাদের। দ্বাদশ শ্রেণীর চার ছাত্রীর অভিযোগ ছিল, তারা ছাত্রী, পুরো ভাড়া তারা দেবে না। দাবি ছিল, ‘স্টুডেন্ট ভাড়া’ অর্থাৎ কিঞ্চিৎ ছাড়ের। কিন্তু বেসরকারি বাসে সে নিয়ম খাটে না বলে ধমক দিয়ে চার জনকেই বাস থেকে নামিয়ে দিয়েছিল কন্ডাক্টর।
ভর সন্ধ্যায়, ফাঁকা মাঠে নেমে বাস্তবিকই সমস্যায় পড়েছিল তারা। পরের দিন স্থানীয় থানার পাশাপাশি পলাশিপাড়া এমজিএস বিদ্যাপীঠের ওই চার ছাত্রী সরাসরি অভিযোগ জানিয়েছিল তেহট্টের মহকুমাশাসক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যের কাছে।
বৃহস্পতিবার ওই চার ছাত্রীর সঙ্গে অভিযুক্ত বাস কন্ডাক্টর, বাসের মালিক, স্থানীয় বাস মালিক সমিতির কর্তাদের তলব করেছিলেন সুদীপ্তবাবু। সে দিনের ঘটনার জন্য ছাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন বাস কন্ডাক্টর। ছাত্রীরাও তাঁকে ‘মাফ’ করে দেন। কিন্তু এর পরেই মোক্ষম ‘নির্দেশ’ দিয়ে বসেন সুদীপ্তবাবু।
তিনি বলেন, ‘‘আমি ওই কন্ডাক্টরকে তিন দিনের জন্য সাসপেন্ড করার নিদের্শ দিয়েছি। পাশাপাশি সে দিনের ওই অমানবিক ঘটনার জন্য বাসের ভিতর একটা পোস্টারও সেঁটে দিতে হবে। যাতে লেখা থাকবে- ‘ওই ঘটনার জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী ভবিষ্যতে আর এরকম ঘটনা ঘটবে না।’ যদি ওরা তা না করে তাহলে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’’ এখন প্রশ্ন, এমন নির্দেশ কী মহকুমাশাসক দিতে পারেন? প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে পোস্টার দেওয়ার এই নির্দেশ অনেকটা ‘একুশে আইনের’ মতো শোনাচ্ছে না?
বাস মালিক সমিতির কর্তারা এ নিয়ে স্পষ্টতই ক্ষুব্ধ। ওই বাসের মালিক তরুণ ঘোষও বলছেন, ‘‘এ কেমন বিচার হল!’’ নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিকির সম্পাদক অশোক ঘোষ বলেন, ‘‘কন্ডাক্টর তার ভুল স্বীকার করেছে। সকলের সামনে ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছে। তারপরেও বাসে যদি এরকম পোস্টার লাগাতে হয় সেটা বাস মালিকের পক্ষে অপমানজনক। এটা কী ধরণের শাস্তি?’’
এমন নির্দেশ কি মহকুমাশাসক দিতে পারেন? নদিয়ার জেলাশাসক অভিনব চন্দ্র স্পষ্ট বলচেন, ‘‘না। এমন নির্দেশ মহকুমাশাসক দিতে পারেন না। আমি এ ব্যাপারে ওঁর সঙ্গে কথা বলব।’’
অশোকবাবু জানান, বাস মালিকেরা ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে বরাদ্দ ভাড়ার এক তৃতীয়াংশ নেন। এটা নিছকই সৌজন্যের কাতিরে। তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে এটা চলে আসছে। এ ব্যাপারে কোনও আইন নেই। তবে ওই ছাড় কেবলমাত্র কার্ড থাকলেই মেলে। এবং তা স্কুল বা কলেজে যাতায়াতের সময়েই।’’ |