সম্পাদকীয় ১...
লজ্জাকর
টুকুই বাকি ছিল! লোকসভার কক্ষে জনস্বার্থ বিষয়ক বিল লইয়া আলোচনা বা বিতর্কের পরিবর্তে হাতাহাতি, মারামারি, আস্তিন গুটাইয়া পরস্পরের দিকে রণচণ্ডী মূর্তিতে ধাবিত হওয়ার দৃশ্য বহু কাল হইল ভারতীয় জনসাধারণ প্রত্যক্ষ করিতেছেন। টেলিভিশন সম্প্রচারের সৌজন্যে ঘরে-ঘরে সেই দৃশ্য অবলোকন করার সুযোগও বিস্তর। লোকসভার নির্বাচিত সাংসদদের অনেকেই যে মেধাশক্তি বা বাক্-চাতুর্য অপেক্ষা পেশি-শক্তির উপর নির্ভর করিতে পছন্দ করেন, তাহা ইতিপূর্বে দেশবাসীর জানা হইয়া গিয়াছে। কিন্তু রাজ্যসভাকে সংসদের ‘উচ্চতর কক্ষ’ বলা হয়। এই সভার সাংসদরা কেবল কট্টর রাজনীতিক পরিচিতির জন্য নয়, অন্য কিছু বিশিষ্ট গুণাবলির জন্য প্রার্থিপদে মনোনীত এবং নির্বাচিত হইয়া থাকেন। ব্রিটিশ ওয়েস্টমিনস্টার ধাঁচের অনুকরণে এই সভার সভাসদরাও কতকটা অভিভাবকের ভূমিকা পালন করিবেন, এমনটা অপ্রত্যাশিত নয়। কিন্তু বুধবার একটি বিল পেশ করাকে উপলক্ষ করিয়া রাজ্যসভায় দুই রাজনৈতিক দলের সাংসদদের মধ্যে বিরোধের যে চেহারা দেখা গেল, তাহা এ ধরনের গরিমাময় সভাকক্ষে অভূতপূর্ব। সাংসদরা কেবল চিৎকার-চেঁচামেচিতেই সীমাবদ্ধ থাকিলেন না, পুরো-দস্তুর হাতাহাতিতে মাতিয়া উঠিলেন।
ইহা যে চরম ধিক্কারযোগ্য একটি ঘটনা, তাহা বলার অপেক্ষা রাখে না। আরও ধিক্কারযোগ্য এই কারণে যে, হাতাহাতির ঘটনা ঘটিল সংবিধান সংশোধনের একটি বিলকে উপলক্ষ করিয়া। এটি ছিল সংবিধানের ১১৭তম সংশোধনী বিল, সরকারি চাকুরিতে তফশিলি জাতি-উপজাতির কর্মচারীদের পদোন্নতির সংরক্ষণ ছিল যাহার প্রতিপাদ্য। বিলটির পক্ষে-বিপক্ষে মতামত থাকিতেই পারে। কিন্তু সেই মতপার্থক্য জাহির করার যে পদ্ধতি-প্রকরণ সমাজবাদী পার্টি ও বহুজনসমাজ পার্টির সাংসদরা রাজ্যসভায় প্রদর্শন করিলেন, তাহা ন্যক্কারজনক। সংবিধান সংশোধন যে একটি অত্যন্ত গুরুতর পরিষদীয় বিষয়, ইহা কি মাননীয় সাংসদরা উপলব্ধি করিয়াছিলেন? সংবিধান-প্রণেতারা এই দলিলটির যে-কোনও পরিমার্জন বা সংশোধনকেই যৎপরোনাস্তি গুরুত্ব দিয়াই বিচার করিয়াছেন। অন্যথায় সংশোধনী অনুমোদনের পূর্বশর্ত হিসাবে বিলের পক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংসদীয় গরিষ্ঠতা ধার্য করিতেন না। অথচ বাস্তবে কী দেখা গেল? এমন একটা সময় সরকার বিলটি রাজ্যসভায় পেশ করিল, যখন সংসদ এগারো দিন ধরিয়া উপর্যুপরি ভণ্ডুল হইয়া চলিয়াছে এবং এ দিনও চরম বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য ও অসভ্যতা চলিতেছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে কি সংবিধান সংশোধনী কোনও বিল পেশ হওয়া উচিত?
একাদশ লোকসভার গোটা বর্ষাকালীন অধিবেশনটিই পরিকল্পিত ভাবে ভণ্ডুল করিয়া দেওয়া হইল। যে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সভার কাজ চলিতে দিলেন না, তাঁহারা সাংসদ হিসাবে মাসে এক লক্ষ টাকা বেতন পান এবং দৈনিক ভাতা পান দুই হাজার, যাহা সরকারের কোষাগার অর্থাৎ জনসাধারণের সরকারকে দেওয়া কর ও রাজস্ব হইতেই দেওয়া হয়। জনস্বার্থ লইয়া ভাবিত, চেষ্টিত হওয়া অর্থাৎ জনপ্রতিনিধিত্বের কাজটি সুষ্ঠু ভাবে করার জন্যই এই বেতন-ভাতা তাঁহাদের প্রাপ্য হয়। তাঁহারা নিজেদের বেতন-ভাতা নিশ্চয় হাত পাতিয়া বুঝিয়া লইবেন, কিন্তু সংসদের দুই কক্ষেই ক্রমাগত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করিয়া একটি আস্ত অধিবেশন বানচাল করার দায়িত্বজ্ঞানহীনতাও তাঁহাদের কলঙ্কিত করিতেছে। অধিবেশনের শেষ প্রহরে তাহার সহিত যুক্ত হইল রাজ্যসভায় বরিষ্ঠ ও বিশিষ্ট রাজনীতিকদের অশালীন, অসংসদীয় আচরণ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.