|
|
|
|
পিছিয়ে ঝাড়খণ্ড-ছত্তীসগঢ় |
মাওবাদী দমনে রাজ্যের সাফল্য মানছে কেন্দ্র |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদী হিংসার ঘটনা একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে বলে জানাচ্ছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারাই। একই সঙ্গে তাঁদের বক্তব্য, যৌথ অভিযানের ফলে গোটা দেশেই মাওবাদী কার্যকলাপ যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে। কিষেণজির মৃত্যু এবং একাধিক শীর্ষ নেতার গ্রেফতারের পর মাওবাদী শীর্ষনেতারা এখন ছত্তীসগঢ় বা ঝাড়খণ্ডের জঙ্গল ছেড়ে বেরোতেই ভয় পাচ্ছেন। কিন্তু এত কিছুর পরেও মাওবাদীদের সামরিক শক্তি এখনও অটুট বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা।
সম্প্রতি মাওবাদীরা ছত্তীসগঢ়ের দণ্ডকারণ্যে নতুন একটি ব্যাটেলিয়ন গড়ে তুলেছে। আরও একটি ব্যাটেলিয়ন তৈরির পথে। অস্ত্রশস্ত্রের জোগান অব্যাহত রেখেই গ্রামের মানুষকে নিয়ে তৈরি জন-মিলিশিয়ার সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিয়ে মাওবাদীরা লাগাতার সশস্ত্র ক্যাডার তৈরি করছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর ডিরেক্টর নেহচল সান্ধুর বক্তব্য, এখনও পাল্টা আক্রমণ করার ক্ষমতা রয়েছে মাওবাদীদের।
আজ রাজ্য পুলিশের শীর্ষকর্তাদের সম্মেলনে সিআরপিএফের ডিজি কে বিজয় কুমার জানিয়েছেন, মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় পুলিশি অভিযান এবং উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হওয়াও জরুরি। কারণ ঝাড়খণ্ড ও ছত্তীসগঢ়ের বিভিন্ন এলাকায় দেখা গিয়েছে, যৌথ অভিযান চালিয়ে মাওবাদীদের পিছু হঠানো সম্ভব হলেও উন্নয়নের কাজকর্ম শুরু করা যাচ্ছে না। কারণ ওইসব এলাকায় রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে। পঞ্চায়েত কাজ করছে না। ফলে রাজ্য সরকার বা জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের কাজকর্মও বেহাল হয়ে রয়েছে। কোথাও আবার মাওবাদীদের প্রকাশ্য সংগঠনের সদস্যরাই পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়ে ক্ষমতা দখল করেছেন। ওড়িশার বিভিন্ন জায়গায় পঞ্চায়েতে নির্বাচিত সদস্যদের পদত্যাগ করারও হুমকি দিয়েছে মাওবাদীরা।
সিআরপিএফের ডিজি এবং গোয়েন্দা কর্তারা বলছেন, এখানেই ঝাড়খণ্ড-ছত্তীসগঢ়কে পিছনে ফেলেছে পশ্চিমবঙ্গ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের আমলে জঙ্গলমহলে মাওববাদী দমন অভিযান ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচির পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলিও নিজেদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে একাধিক বার জঙ্গলমহলে গিয়েছেন। আর তাতেই অনেকটা পার্থক্য তৈরি হয়েছে। আজ রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়ও সে কথাই বলেছেন। কিষেণজির মৃত্যু, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাওবাদী নেতাকে গ্রেফতার এবং সুচিত্রা মাহাতোর মতো একাধিক নেতানেত্রীর আত্মসমর্পণকে রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসনের সাফল্য হিসেবেই তুলে ধরেছেন তিনি।
তবে এখনই আত্মতুষ্ট হওয়ার কারণ দেখছেন না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দেও আজ স্বীকার করেছেন, মাওবাদীদের প্রশিক্ষিত ও সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনীর সংখ্যাবৃদ্ধির ইঙ্গিত মিলেছে। যৌথ বাহিনীর উপর হামলার ঘটনা কমে এলেও এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে মাওবাদীদের দল বেঁধে যাতায়াত, জন আদালত বসানো, ঠিকাদারদের থেকে লেভি আদায় বন্ধ হয়নি। দেশের মধ্যে থেকেই অস্ত্র জোগাড়ের ‘নেটওয়ার্ক’-ও এখনও অটুট।
গোয়েন্দা কর্তারা বলছেন, উত্তর-পূর্বের জঙ্গি সংগঠন, বিশেষ করে মণিপুর থেকে মাওবাদীদের হাতে অস্ত্র সরবরাহ হচ্ছে। উজানি অসম এবং অরুণাচল প্রদেশেও মাওবাদীদের উপস্থিতি টের পাওয়া গিয়েছে বলে আজ জানিয়েছেন নেহচল সান্ধু।
আপাতত আলোচনায় ঠিক হয়েছে, ঝাড়খণ্ড ও ছত্তীসগঢ়ের দণ্ডকারণ্যে মাওবাদীদের নিজেদের দুর্গেই আটকে রাখার চেষ্টা হবে। মাওবাদীরা নতুন করে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার চেষ্টা করলে তাদের আবার ঝাড়খণ্ডের জঙ্গলেই ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
গোয়েন্দা কর্তারা বলছেন, দিল্লিতে বসে কাজ করতে গিয়ে মাওবাদী তাত্ত্বিক নেতা কোবাড ঘান্দী পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। আরও বেশ কিছু নেতা শহরে বসে সংগঠনের কাজ চালাতে গিয়ে পুলিশের জালে ধরা পড়েছেন। বেশি প্রকাশ্যে আসার মাসুল গুণতে হয়েছে কিষেণজিকেও। মাওবাদী সংগঠনের প্রধান গণপতি, বেণুগোপালের মতো পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা তাই আপাতত বস্তারের অবুঝমাঢ়ের জঙ্গলেই গা ঢাকা দিয়ে থাকা
শ্রেয় বলে মনে করছেন। অন্যান্যরা রয়েছেন ঝাড়খণ্ড বা ওড়িশার জঙ্গলে। |
|
|
|
|
|