খুন না আত্মহত্যা, প্রশ্ন ঠাকুরপুকুরে
মা, ছেলে-সহ চার জনের গলাকাটা দেহ ঘিরে রহস্য
দোতলা বাড়ির দু’টি তলার চারটি ঘরে চারটি মৃতদেহ। চার জনেরই গলা কাটা। ঠাকুরপুকুরে বীরেন রায় রোড পশ্চিমের ওই বাড়িতে কর্ত্রী-সহ তিন মহিলা এবং এক ব্যবসায়ীর মৃতদেহ এ ভাবেই পাওয়া গেল বৃহস্পতিবার রাতে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের সন্দেহ, প্রচণ্ড আক্রোশ থেকেই পৈশাচিক নৃশংসতায় নলি কেটে ওই চার জনকে খুন করা হয়েছে।
পুলিশি সূত্রের খবর, ওই তিন মহিলার মধ্যে রয়েছেন ৮০ বছরের গৃহকর্ত্রী গৌরী ভট্টাচার্য। খুন হয়েছেন গৌরীদেবীর ব্যবসায়ী ছেলে দীপক (৪০)-ও। নিহত অন্য দুই মহিলা হলেন ওই বাড়ির পরিচারিকা অণিমা মণ্ডল (২৮) এবং গৌরীদেবীর রাতের শিফটের আয়া মিনু বিশ্বাস (৪৫)। অণিমা পাঁচ বছর ধরে ওই বাড়িতে কাজ করছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
কে বা কারা বাড়িতে ঢুকে চার জনকে খুন করে গেল, সেই বিষয়ে পুলিশ অন্ধকারে। কোনও ডাকাতদল লুঠপাটে বাধা পেয়ে খুন করেছে, এমন প্রমাণও পায়নি তারা। ধস্তাধস্তিরও চিহ্ন মেলেনি। ডাকাতি হলে আলমারি-সহ জিনিসপত্র লন্ডভন্ড অবস্থায় পড়ে থাকত বলে মনে করছে পুলিশ। কিন্তু ওই বাড়িতে তেমন কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি। যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ জানান, দোতলায় দু’টি ওয়ার্ডরোব খোলা থাকলেও বড় আলমারি বন্ধই ছিল।
খুনের কথা জানা গেল কী ভাবে?
পুলিশ জানায়, এ দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ এক ফিজিওথেরাপিস্ট ওই বাড়িতে যান। অসুস্থ গৌরীদেবীকে শারীরচর্চা করাতেন তিনি। অরুণ প্রসাদ নামে ওই ফিজিও এ দিন পাঁচিলের বাইরে লোহার গেটে আওয়াজ করার পরেও অনেক ক্ষণ কারও সাড়াশব্দ পাননি। ভিতরে ঢুকে তিনি বেল বাজান। তাতেও সাড়া না-পেয়ে তিনি ফোন করেন দীপকের কেব্ল ব্যবসার অফিসে। সেখানে যিনি ফোন ধরেন, অরুণবাবু তাঁকে বলেন, “আপনারা বাড়িতে ফোন করে দেখুন তো, কেউ সাড়া দিচ্ছে না কেন।” কেব্ল অফিস থেকে বাড়িতে ফোন করে কর্মীরাও সাড়া পাননি। ফোন বেজে যায়। তখন তাঁরাও দীপকের বাড়িতে পৌঁছে যান। দেখা যায়, গ্রিলের গেট খোলা। সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা বাড়িতে না-ঢুকে খবর পাঠান পুলিশের কাছে।
সেই বাড়িতে তদন্তে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র
পুলিশ এলে তাদের সঙ্গে অরুণবাবু ও অন্যেরা বাড়িতে ঢোকেন। ভিতরে ঢুকে দেখা যায়, একতলার রান্নাঘর বাইরে থেকে বন্ধ। খুলে দেখা যায়, ভিতরে চিত হয়ে পড়ে আছে পরিচারিকা অণিমার দেহ। মিনুর দেহ পড়ে ছিল পাশে খাওয়ার ঘরের মেঝেতে। ঘরের চার দিকে চাপ চাপ রক্ত। বাবু দত্ত নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা ছিলেন পুলিশের সঙ্গে। তিনি বলেন, “দোতলায় উঠে দেখা যায়,গৌরীদেবী নিজের ঘরের খাটে গলাকাটা অবস্থায় পড়ে আছেন। পাশে দীপকের ঘরে একই ভাবে খাটে পড়ে ছিল তাঁর দেহ। একটি ঘরে টিভি চলছিল।” গলার কাছে জমাট বাঁধা রক্ত দেখে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, মৃত্যু হয়েছে বিকেলের আগেই। গৌরীদেবীর আত্মীয়দের খোঁজখবর চলছে।
সাউথ সিটিতে দুই মেয়ে ও বৃদ্ধা মায়ের অপমৃত্যুর রহস্যভেদ হয়নি এখনও। তারই মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে ওই চার জনের মৃত্যু পুলিশকে কিছু প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
• এটা খুন না আত্মহত্যা? পুলিশ আত্মহত্যার তত্ত্বকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। কারণ, অন্যের গলা কাটা অসম্ভব না-হলেও নিজের গলা কেটে আত্মহত্যা সম্ভব নয় বলেই মনে করছে তারা।
• খুনের ঘটনা হয়ে থাকলে কে বা কারা খুন করল?
• ডাকাতি করতে এসেই কি খুন?
• ডাকাতি যদি না-হয়, কেন এ ভাবে চার জনকে মারল আততায়ীরা?
• তা হলে কি তারা বিশেষ কিছুর খোঁজে এসেছিল?
• নাকি কোনও আক্রোশে এ ভাবে প্রতিহিংসা নেওয়া হল?
• সে-ক্ষেত্রে রাগ কার উপরে?
• গৌরীদেবী ও দীপকের উপরেই যদি রাগ হয়, তা হলে কেন খুন হলেন বাকি দুই মহিলা?
• খুনের সাক্ষী না-রাখার জন্যই কি তাঁদের খুন করা হয়েছে?
• কী এমন রাগ থাকতে পারে বৃদ্ধা ও তাঁর ছেলের উপরে?
• যারা এসেছিল, তারা কি দীপকদের পরিচিত?
• দীপকের ব্যবসা সংক্রান্ত কোনও কারণে কি খুন হতে হল চার জনকে?
উত্তর খুঁজছে পুলিশ। রাতে পুলিশ-কুকুর ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে ২০০ মিটার দূরে বড় রাস্তা পর্যন্ত গিয়ে ফিরে আসে। পুলিশের সন্দেহ, দুষ্কৃতীরা ওই রাস্তা দিয়েই পালিয়েছে। গোয়েন্দা বিভাগের হাতে তদন্তের ভার তুলে দেওয়া হয়েছে।
বেহালা চৌরাস্তার মোড়ে দীপকের বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের দোকান। আর জনকল্যাণ এলাকায় তাঁর কেব্ল টিভি-র ব্যবসা। এ দিন তিনি কেব্ল অফিসে যাননি বলে জানান সেখানকার কর্মীরা। তাঁর পড়শি বাবু দত্ত জানান, বছর আষ্টেক আগে শখেরবাজার প্যারিসপাড়ায় দোতলা বাড়ি কিনে দুই ছেলে বিপ্লব ও দীপককে নিয়ে থাকতে শুরু করেন গৌরীদেবী। কিছু দিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। একাধিক আয়া রাখা হয়েছিল তাঁর জন্য। ২০০৫ সালে বিপ্লববাবু মারা যান। দীপক বিয়ে করেননি। কলকাতার পুলিশ কমিশনার রঞ্জিত পচনন্দা, যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লববাবু রাতেই ঘটনাস্থলে যান। চলে আসেন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। মনে হচ্ছে, ঠান্ডা মাথায় চার জনকে খুন করা হয়েছে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.