বিনোদন: স্বীকারোক্তি অমিতাভর
তখন কেবিসি থাকলে চাকরিটা পেয়ে যেতাম
মেরুন কোট, কালো ট্রাউজার্স। গলায় স্কার্ফ। চকচকে কালো জুতো, দৃপ্ত পায়ে হেঁটে আসছেন তিনি। জায়ান্ট স্ক্রিনে চলছে একের পর এক প্রোমো। শরীরী ভাষা এবং সংলাপে কখনও তিনি ‘শোলে’র জয়, কখনও ‘শাহেনশাহ’।
মুম্বইয়ে ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি ৬’-এর সাংবাদিক সম্মেলনে প্রতি বারের মতোই যাবতীয় পালের হাওয়া নিজের দিকে টেনে নিলেন অমিতাভ বচ্চন। এই সত্তরেও কেরিয়ারের সায়াহ্নে আর একটি নতুন ইনিংস! এই বয়সেও রাত জেগে কম্পিউটারে ‘ফেসবুক’ চর্চা! মঞ্চে তাঁর উপস্থিতি এক বারও বলছে না, তিনি মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন!
কেবিসি আর অমিতাভ যে সমার্থক! “২০০০-এর শুরুতে দ্বিধা ছিল, সন্দেহও। পারব তো? কী ভাবে কেটে গেল বারোটা বছর আর পাঁচশো পর্ব!” শুধু কেটেই গেল না, কেবিসি-কে নিছক গেম শো-এর পরিচয় ছাড়িয়ে নিয়ে গেল অনেক দূর! চ্যানেলের কর্তা স্নেহা রাজানি দাবি করলেন, “কেবিসি’র সাফল্যে অনুপ্রাণিত এখন ভারতের প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জও।”
কী ভাবে? “বারো বছর ধরে ‘কেবিসি’ দেখতে দেখতে আমজনতার সাধারণ জ্ঞান এমন পর্যায়ে গিয়েছে, যে ঘরে বসেই কঠিন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে কত মানুষ জিতে নিচ্ছেন লাখ টাকা,” জানালেন অমিতাভ। বলার পরেই তিনি নস্টালজিক। সবার আগে গ্র্যাজুয়েট হতে হবে, ১৯৫৮ সালে বাবা বলেছিলেন। “তখনকার সব বাবা-মা এমন কথাই বলতেন।” কিন্তু অমিতাভ মনে করেন, শুধু গ্র্যাজুয়েট হলেই চলবে না। জ্ঞানচর্চাও করতে হবে। কেন? নিজে গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পরেও আইসিআই-সহ অনেক সংস্থায় চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় অনেক প্রশ্নের উত্তর ছিল না তাঁর কাছে। “থাকলে চাকরি পেতাম। তাই বলতে চাই, সির্ফ জ্ঞান হি আপকো আপকা হক দিলাতা হ্যায়।”
কেবিসি-র সঞ্চালক আসনে অমিতাভ বচ্চন। —ফাইল চিত্র
এটাই এ বারের ‘কেবিসি’র নতুন থিম। জীবন গড়তে কর্ম-ভাগ্য সাহায্য করে ঠিকই। সে কথা স্বীকার করেও অমিতাভর বিশ্বাস, “জ্ঞান বাড়ালে কর্ম এবং ভাগ্যও বদলে যায়।” কেবিসি আরও বেশি করে বিশ্বাস করতে শিখিয়েছে এ কথা। “আমি দেখেছি, ছোট ছোট জনপদের প্রতিযোগীরাও তাঁদের গণ্ডি ছাড়িয়ে জ্ঞান, জেদ আর বিশ্বাস নিয়ে সফল হতে চলে এসেছেন হট সিটে।” জেন-এক্স ভারতের চোয়াল-চাপা জেদে অমিতাভ আপ্লুত। শুধু একটা ব্যাপার ছাড়া। স্বাধীনতার ৬৫ বছর পরেও ভারতে সামাজিক ভাবে মেয়েদের যে ভাবে পিছিয়ে রাখা হয়েছে, সেটা মেনে নিতে পারেন না তিনি। ‘‘মেয়েরা দেশের পঞ্চাশ ভাগ শক্তি।” জাতপাত, ভেদাভেদ সামাজিক ব্যাধি দূর করার উপরে জোর দেওয়ার সময়ে তাঁর শরীরী ভাষায় সত্তর দশকের সেই রাগী যুবকের ছায়া।
কেবিসি এ বার সোম-বৃহস্পতির বদলে শুক্র-রবি। শোনা যাচ্ছে, বিশেষজ্ঞের ভূমিকায় আমন্ত্রণ করা হবে বিভিন্ন পেশার সফল তারকাদের। সাংবাদিক সম্মেলনে লটারির মাধ্যমে বেছে নেওয়া হল দুই সাংবাদিককে। তাদের সঙ্গে গেম খেলতে খেলতেই অন্তরঙ্গতার চুড়োয় পৌঁছলেন তিনি। ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে পট করে আলোকচিত্রীরই ছবি তুলে ফেললেন। “আরে, এ তো মিসাইলের মতো চলছে।” ক্যামেরা হাতে শিশুর মতো খুশি অমিতাভ! মিডিয়া আবারও দেখল, মজা-হাসি-ঠাট্টা-কৃত্রিম রাগ আর অভিমান আসর জমাতে তিনি অতুলনীয়! নইলে কেবিসি যে কেবিসি হত না! স্নেহা রাজানি খোলাখুলি বললেন, “এক এবং একমাত্র অমিতাভ বচ্চনের জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে।”
গেম শো-র প্রযোজক সংস্থার সর্বময় কর্তা সিদ্ধার্থ বসুও একমত। কেবিসি-র তৃতীয় পর্বে সঞ্চালকের আসনে শাহরুখ খান এলেও পরের পর্বেই তাই শাহেনশাহ-র প্রত্যাবর্তন ঘটানো হয়েছিল! সঞ্চালক হিসেবে কেন অমিতাভ বচ্চনই চ্যানেলের প্রথম পছন্দ? “হি ইজ ইউনিক”, সিদ্ধার্থের সংক্ষিপ্ত উত্তর। শাহরুখও তো ইউনিকই ছিলেন? “শাহরুখও দুরন্ত। স্মার্ট, চটপটে, প্রতিযোগীদের সঙ্গে সাবলীল ব্যবহার। কিন্তু অমিতাভর ওজন আর ব্যক্তিত্ব কারও নেই,” বললেন দুই সঞ্চালককেই অত্যন্ত কাছ থেকে দেখা কুইজমাস্টার।
কিন্তু অমিতাভকে জিজ্ঞেস করুন, কেবিসি-র পিছনে ওঁর অবদানের কথা! বলবেন, ‘‘কেবিসি’-তে আমিই সব নই। প্রতিযোগীরাই আসল। তাঁরা আমার অতিথির মতো।”
কিন্তু তিনি নিজে ওই অতিথির হটসিটে বসলে কী হবে? “হেরে যাব,” অমিতাভ অকপট।
চাকরির ইন্টারভিউয়ের সময় ভাগ্যিস সব প্রশ্নের উত্তর ছিল না তাঁর কাছে। না-হলে ‘কেবিসি’র মতো রিয়্যালিটি শো-এর সঞ্চালনাকে এমন ঈর্ষণীয় জায়গায় আর কে-ই বা নিয়ে যেতে পারতেন?
বিনয়ী মানুষটি গত বছর বলেছিলেন না, “আরে ভাই, এহি তো মেরা নোকরি হ্যায়”।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.