পারিবারিক গয়না হাতানোর জন্য ডাকাতির নাটক সাজিয়েছিলেন দম্পতি, পূর্বস্থলীতে ভরদপুরে একটি বাড়িতে লুঠপাটের ঘটনার তদন্তে নেমে এমনটাই জানা গিয়েছে বলে দাবি পুলিশের। এই ঘটনায় ওই বাড়ির বড় ছেলে পার্থ ঘোষকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পার্থবাবুর স্ত্রী মুনমুনদেবীর খাটের তলা থেকে খোয়া যাওয়া গয়না ও টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। কালনা আদালতে তোলা হলে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে পূর্বস্থলী ১ ব্লকের দোগাছিয়া পঞ্চায়েতের দক্ষিণ মোদাফ্ফর এলাকার একটি বাড়িতে ঘটনাটি ঘটে। ওই বাড়ির কর্তা, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ধীরেন্দ্রনাথ ঘোষ তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে নবদ্বীপে চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন। তাঁর বড় ছেলে পার্থবাবু হাওড়ায় নিজের কাজে গিয়েছিলেন। ছোট ছেলেও সকালে নিজের কাজে বেরিয়ে যান। বাড়িতে ছিলেন পার্থবাবুর স্ত্রী মুনমুনদেবী ও তাঁদের আড়াই বছরের মেয়ে। সন্ধ্যায় ধীরেন্দ্রনাথবাবু বাড়ি ফিরে দেখেন, ঘরের দু’টি আলমারি লণ্ডভণ্ড। মেঝেতে ছড়ানো রয়েছে নানা আসবাব। ঘরের কোনে বসে মুনমুনদেবী। শ্বশুরমশাইকে দেখে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। শ্বশুর-শাশুড়িকে তিনি জানান, ভরদুপুরে বাড়িতে ঢুকেছিল দু’জন দুষ্কৃতী। তারা ভয় দেখিয়ে প্রথমে একটি আলমারির তালা ভাঙে। সেখান থেকে অন্য আলমারির চাবি বের করে সেখান থেকে গয়না ও টাকা নিয়ে চম্পট দেয়। |
ধীরেন্দ্রনাথবাবু এই ঘটনা দেখে পুলিশের কাছে ছোটেন। লিখিত অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে পূর্বস্থলী থানার পুলিশ। এই ঘটনার তদন্তভার পান তমাল দত্ত নামে এক এসআই। পুলিশ জানায়, তদন্তে নেমে প্রথমেই খটকা লাগে অভিযোগপত্রটি দেখে। সেখানে দুষ্কৃতীদের হাতে কোনও অস্ত্র থাকার উল্লেখ ছিল না। দিনের আলোয় অস্ত্র ছাড়া কী ভাবে দুই দুষ্কৃতী একটি বাড়িতে ঢুকে লুঠপাট চালাল, সে নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পুলিশ এলাকায় গিয়ে নানা লোকজনের সঙ্গে কথা বলে। পুলিশের দাবি, যে সময় ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ, তখন এলাকার কোনও বাসিন্দা অচেনা দুই যুবককে দেখেননি বলে জানা যায়। পাশাপাশি, মুনমুনদেবীর প্রতিবেশীরা ঘটনার দুপুরে কোনও চিৎকার-চেঁচামেচিও শোনেননি বলে জানান।
পুলিশের দাবি, বুধবার পার্থবাবুকে টানা কয়েক ঘণ্টা জেরা করা হতেই তিনি ভেঙে পড়েন। ডাকাতির গল্প সাজানোর কথা স্বীকার করেন তিনি। এর পরেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। পার্থবাবুকে জেরা করার পরেই ধীরেন্দ্রনাথবাবুর বাড়িতে যায় পুলিশ। সেখানে মুনমুনদেবীর ঘরে খাটের তলা থেকে সোনার গয়না ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়।
এ দিন চেষ্টা করেও ধীরেন্দ্রনাথবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। নিজেদের বাড়ির সম্পদ সরিয়ে ওই দম্পতিকে লুঠপাটেক গল্প সাজাতে হল কেন, সে প্রশ্নে এসডিপিও (কালনা) ইন্দ্রজিৎ সরকারের দাবি, “পারিবারিক গয়না যাতে ভাগ না হয়, সে জন্যই এমন ছক কষে ওই দম্পতি।” ধৃতকে বৃহস্পতিবার কালনা আদালতে তোলা হলে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। পুলিশ জানায়, মুনমুনদেবী পলাতক। তাঁর খোঁজ চলছে। |