ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। সোমবার পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্ত ছিলেন ১০ জন। মঙ্গলবার এক ধাক্কায় সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ১৬। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্র বলেন, “জেলায় এখনও পর্যন্ত ১৬ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। জেলা জুড়ে সরকারি ভাবে প্রচার চলছে। জেলার পুরসভা এবং পঞ্চায়েতগুলিকেও প্রচার চালানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”
এ দিকে, জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ফের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে মেদিনীপুরে। মৃত সনৎ চালক (১৪)-এর বাড়ি মেদিনীপুর সদর ব্লকের কনকাবতী গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘোটগেড়্যায়। সোমবার সন্ধ্যায় সে মারা গিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। তবে তার ডেঙ্গি হয়েছিল কিনা জানা যায়নি। ওই কিশোরকে কোনও সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। রবিবার রাতেই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সুদীপ্ত দোলুই নামে ৬ বছরের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি মেদিনীপুর সদর ব্লকের কালগাঙ এলাকায়। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েই ওই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে বলে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। |
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ৮ জন, ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে এক জন, চাঁদড়া হাসপাতালে এক জন, হিজলি হাসপাতালে এক জন, খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ২ জন ও শালবনি গ্রামীণ হাসপাতালে ৩ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত ভর্তি রয়েছেন। অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালগুলিতে ডেঙ্গি নির্ণায়ক পরীক্ষার ‘এলাইজা কিট’ নেই। ফলে বেসরকারি ক্লিনিক থেকেই পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। তবে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘এনএস-ওয়ান এলাইজা’ কেনার জন্য টেন্ডার করা হয়েছিল। আজ, বুধবার টেন্ডার খোলা হবে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিকে দ্রুত কিট সরবরাহের নির্দেশও দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে ডেঙ্গি সম্পর্কে মানুষকে আগাম সচেতন করা হয়নি, কোনও পদক্ষেপও করা হয়নি এই অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্র’র সঙ্গে দেখা করেন মেদিনীপুর শহর কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দল। নেতৃত্বে ছিলেন দলের শহর সভাপতি সৌমেন খান, যুব নেতা নির্মাল্য বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। শহর সভাপতির অভিযোগ, “ডেঙ্গি প্রতিরোধে স্বাস্থ্য দফতরের যা যা করণীয় তা করা হয়নি। মানুষকে আগে থেকে সচেতন করা হয়নি। করলে এই পরিস্থিতি হত না।” মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অবশ্য বলেন, “উদ্বেগের কিছু নেই। যে এলাকা থেকে জ্বরের খবর আসছে, সেখানেই স্বাস্থ্যকর্মীদের পাঠানো হচ্ছে। বিভিন্ন গ্রামে মেডিক্যাল ক্যাম্পও শুরু হয়ে গিয়েছে।”
ডেঙ্গি-আতঙ্ক যাতে না ছড়ায়, সে জন্য বুধবার থেকেই জেলার বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়েছে প্রচার। বিলি করা হচ্ছে লিফলেট। পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতর যৌথ উদ্যোগেও প্রচার চলছে নানা জায়গায়। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন, জেলার ২৩টি গ্রামীণ, ৬টি ব্লক ও দুটি মহকুমা হাসপাতালে প্রচারের জন্য টাকা বরাদ্দ করেছে স্বাস্থ্য দফতর। পুরসভাগুলি নিজেদের উদ্যোগে নিকাশি নালাতে ব্লিচিং, ফিনাইল দেওয়া শুরু করেছে। মশা মারার তেলও স্প্রে করা হচ্ছে। রামজীবনপুরের পুরপ্রধান শিবরাম দাস বলেন, “আমরা ওই তেল স্প্রে ছাড়াও ব্লিচিং-ফিনাইল দিয়ে মশার উপদ্রব কমানোর ব্যবস্থা করেছি।” একই বক্তব্য ক্ষীরপাইয়ের পুরপ্রধান দুর্গাশঙ্কর পানের। ঘাটালের পুরপ্রধান জগন্নাথ গোস্বামী বলেন, “আমরা ওই তেল কিনতে উদ্যোগী হয়েছি। তবে শহরের নালা, নর্দমাগুলিতে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হচ্ছে।” |