অবসরের পরেও স্কুলে পড়াতে যান মাস্টারদাদু
শিক্ষাদানই তাঁর জীবনের ব্রত। সেই ব্রত পালনে ৭০ পেরিয়েও তিনি ক্লান্তিহীন। অবসরের পর ৯ বছর ধরে তিনি বিনা বেতনে সমানে স্কুলে গিয়ে ছাত্রদের পড়াচ্ছেন।
তিনি সুবলচন্দ্র নন্দী। কাশীপুর ব্লকের গোপালচক প্রাথমিক স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক। ২০০১-এর নভেম্বরে সরকারি ভাবে স্কুল থেকে তাঁর অবসর হয়। কিন্তু পড়ুয়াদের সঙ্গ ছাড়তে পারেননি তিনি। অবসর জীবনের প্রথম বছরেই হাঁফিয়ে উঠে নিজের গ্রাম নপাড়া প্রাথমিক স্কুলে গিয়ে ছাত্র পড়ানো ফের শুরু করেন তিনি।
নপাড়া প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলোক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “অনেকদিন ধরেই সুবলবাবুকে চিনি। ছাত্র-ছাত্রীরাই তাঁর মনপ্রাণ জুড়ে থাকে। অবসরের পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ২০০৩ সালে আমাদের স্কুলে ৪২৬ জন পড়ুয়া তুলনায় শিক্ষক কম থাকায় গ্রাম শিক্ষা কমিটির পরামর্শে সুবলবাবুকে স্কুলে শিক্ষকতা করার অনুরোধ জানাই। এক কথায় তিনি রাজি হয়ে যান।”
পড়ুয়াদের মাঝে শিক্ষক সুবলচন্দ্র নন্দী। ছবি: সুজিত মাহাতো।
সেই থেকে রোজ সকাল সওয়া দশটার মধ্যে স্কুলে চলে আসা ‘দাদু মাস্টার’-এর রুটিন হয়ে গিয়েছে। তাঁকে এ নামেই ডাকে খুদে পড়ুয়ারা। যদিও স্কুলে তাঁর গরহাজিরা খুবই কম, তবুও তিনি না এলে পড়ুয়াদের মন খারাপ হয়। পঞ্চম শ্রেণির পূরবী চৌধুরী, শেখ সরফরাজ, তাপসী মণ্ডল, অণিমা রানাদের কথায়, “দাদুমাস্টার আমাদের যা পড়ান, সেটা নিয়েই সুন্দর গল্প বলেন।” তিনি তৃতীয় শ্রেণির ‘ক্লাশ-টিচার’। তাই দাদুমাস্টার না এলে ওই ক্লাশের পড়ুয়াদের বেজায় মন খারাপ হয়ে যায়। তৃতীয় শ্রেণির তনুশ্রী রানা, উৎপল মাহাতো, নূপুর রানাদের কথায়, “দাদুমাস্টার ছবি এঁকে, গল্প বলে আমাদের পড়ান।” প্রধান শিক্ষকের কথায়, “পড়ানোর বিষয়ের উপর ছবি এঁকে, গল্প বলে সুবলবাবু পড়ুয়াদের ডুবিয়ে রাখেন। তাই ছাত্রছাত্রীরা তাঁর ক্লাসে অন্যমনস্ক হয় না।” সুবলবাবু বলেন, “পড়ায় মন না বসলে না. তখন গল্প ওদের বলি। গল্পের সূত্র ধরেই ওদের পড়ার বিষয়টি বুঝিয়ে দিই। কখনও কখনও ওদের জন্য গানও গাইতে হয়।”
রেলে চাকরি পেয়েও মায়ের ইচ্ছা রাখতে ৫০ বছর আগের তরুণ সুবলবাবু গ্রাম ছেড়ে যাননি বলেই আজ তাঁকে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছেন এলাকাবাসী। তিনি জানান, সেই সময় বিভিন্ন এলাকায় গ্রামের লোকেদের সংঘবদ্ধ ভাবে স্কুল গড়ে তুলছিলেন। তিনিও বাড়ি থেকে খানিক দূরে রঙিলাডি গ্রামে একটি মহুল গাছের নীচে গড়ে তোলেন একটি প্রাথমিক স্কুল। সেই স্কুলেরই এখন নাম হয়েছে গোপালচক প্রাথমিক স্কুল। তিনি বলেন, “স্কুলের পরিবেশ, কচিমুখের হাসি এগুলো ছেড়ে বেশিদিন থাকতে পারিনি। তাই গ্রামের স্কুলের ডাক পেয়ে পড়াতে চলে এসেছি। আসলে ছোটদের মধ্যেই আমি সারা বিশ্বের আনন্দ পাই।” রঙিলাডির সুবলবাবুর প্রাক্তন ছাত্র সুশীল বাউরি এখন একটি স্কুলের শিক্ষক। তিনি বলেন, “উনি শিক্ষকতা করেন অন্তর থেকে। তাঁর মতো আদর্শ শিক্ষক দেখিনি।’’ নপাড়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “সুবলদাকে সম্মান জানাতে পারিশ্রমিক দেওয়ার কথা তুললেই তিনি মনে কষ্ট পান। উল্টে স্কুলের বাগান তৈরির জন্য নিজেই কিছু দিন আগে চারাগাছ কিনে এনেছিলেন। কাশীপুরের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সমীর করও স্বীকার করেছেন, তিনি সমাজের গর্ব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.