পশ্চিমে প্রমাণ দলীয় তদন্তে
সিপিএম প্রধানদের তৃণমূল ‘ঘনিষ্ঠতা’
লের একাংশ পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গে তৃণমূলের ‘ঘনিষ্ঠতা’ বেড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল জেলা সিপিএমের অন্দরে। তার তদন্তে নেমে চক্ষু চড়কগাছ নেতৃত্বের! প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিম মেদিনীপুরে সিপিএমের দখলে রয়েছে, এমন ৫০ শতাংশের বেশি পঞ্চায়েতই তৃণমূলের ‘কথা মতো’ চলছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারও মানছেন, “বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। তা খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপই করা হবে।” পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে তৃণমূল ‘ঘনিষ্ঠ’ দলীয় প্রধান ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সতর্ক করেছে সিপিএম। প্রয়োজনে অভিযুক্ত প্রধানদের বহিষ্কার করা হতে পারে বলেও দলীয় সূত্রে খবর। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে তদন্তে উঠে আসা তথ্য রীতিমতো ভাবাচ্ছে সিপিএম নেতৃত্বকে। পশ্চিম মেদিনীপুরে মোট ২৯টি পঞ্চায়েত সমিতি রয়েছে। ইতিমধ্যে ২৫টি পঞ্চায়েত সমিতির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হয়েছে। এই ২৫টি পঞ্চায়েত সমিতি এলাকায় গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে ২২৬টি। এর মধ্যে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জিতে ১৯১টি পঞ্চায়েতের ক্ষমতায় এসেছিল বামফ্রন্ট। বিরোধীদের দখলে ছিল ৩৫টি। দলীয় তদন্তে দেখা যাচ্ছে, ফ্রন্টের দখলে থাকা ১৯১টি পঞ্চায়েতের ৯৭টিই চলছে তৃণমূলের ‘নির্দেশে’। ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আবার ‘হাতবদল’ হয়েছে। সিপিএমের মতে, এগুলো জোর করে দখল করেছে তৃণমূল। জোর করে পঞ্চায়েত দখলের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “দখলের রাজনীতি ওরাই (সিপিএম) ভাল বোঝে।” তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষের বক্তব্য, “গত দেড় বছরে কোনও পঞ্চায়েতই জোর করে দখল করা হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে সিপিএমের দুর্নীতিগ্রস্ত প্রধানরা ভয়ে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়েছে!” তবে সিপিএমের একাংশ প্রধানের সঙ্গে যে দলের স্থানীয় কিছু নেতার ‘ঘনিষ্ঠতা’ বেড়েছে, তা পরোক্ষে মানছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। এ নিয়ে কার্যকরী সভাপতির মন্তব্য, “কেউ কেউ কাজ করতে গিয়ে আমাদের দলের স্থানীয় নেতাদের পরামর্শ চাইছেন। সহযোগিতা চাইছেন। আলোচনার মাধ্যমে কাজ হলে তো ভালই।”
পশ্চিমের ৯৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের ‘কথা মতো’ চলছে
দেড় বছরে ১৪টি পঞ্চায়েত ‘দখল’ করা হয়েছে
২২ জন পঞ্চায়েত সদস্যকে দলত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে
গত দেড় বছরে বামেদের দখলে থাকা ২৫টি পঞ্চায়েত সমিতির ২২ জন সদস্য দলত্যাগ করেছেন। তদন্ত অনুযায়ী, চন্দ্রকোনা ২ পঞ্চায়েত সমিতির ৬টি বাম পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েত এখন তৃণমূলের ‘কথায়’ চলছে। দাসপুর ১-এর ৭টি বামফ্রন্ট পরিচালিত পঞ্চায়েতের মধ্যে ৩টির একই হাল। নয়াগ্রামের ১২টি বাম পরিচালিত পঞ্চায়েতের মধ্যে ১০টি, নারায়ণগড়ের ১৫টি বাম পরিচালিত পঞ্চায়েতের মধ্যে ৪টি, মেদিনীপুরের (সদর) ২টি গ্রাম পঞ্চায়েত বর্তমান শাসকদলের ‘অঙ্গুলিহেলনে’ চলছে বলে তদন্তে জানা গিয়েছে। কেশপুরের ৩ কর্মাধ্যক্ষ, গড়বেতা ১ পঞ্চায়েত সমিতির ৩ জন, দাঁতন ১ পঞ্চায়েত সমিতির ২ জন, সাঁকরাইলের ২ জন, মোহনপুরের ১ জন, ডেবরার ১ জন, শালবনির ৩ জন, জামবনির ৩ জন কর্মাধ্যক্ষ কাজ করতে পারছেন না। নয়াগ্রামের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ আবার পদত্যাগ করেছেন।
রাজ্যপাট হারানোর পরেও পশ্চিম মেদিনীপুরে ২৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ২৯টি পঞ্চায়েত সমিতি ও ৬২টি জেলা পরিষদের আসনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠই সিপিএমের দখলে রয়েছে। তবে তদন্তে পাওয়া তথ্য পঞ্চায়েত ভোটের আগে সিপিএম নেতৃত্বের কপালে ভাঁজ ফেলছে। কারণ ভোটের আগে অভিযুক্ত প্রধানদের সরানো সম্ভব নয়। তাহলে উপায়? জেলা সিপিএমের এক নেতা বলেন, “বেশ কয়েকজন প্রধানকে সতর্ক করা হয়েছে। প্রয়োজনে ছুটি নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।” মাস কয়েক আগে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের নির্বাচনী এলাকা নারায়ণগড়ের পাকুড়সিনি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান-সহ নির্বাচিত সব গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য পদত্যাগ করেছেন। দল সূত্রে খবর, প্রধান-উপপ্রধান সহ পঞ্চায়েত সদস্যদের ‘অনৈতিক’ কাজ করতে বাধ্য করছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। পরিস্থিতি দেখেই তাঁদের এই সিদ্ধান্ত। সব মিলিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের আগে জেলায় দলের ‘পুনর্গঠন’ সিপিএমের কাছে এখন ‘মস্ত চ্যালেঞ্জ’।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.