বিশ্ব জুড়েই ব্যাঙ্কিং পরিচালনায় ঝুঁকি কমাতে বাধ্যতামূলক হয়েছে বাসেল-৩ আইন। তার শর্ত পূরণ করতে হলে ভারতীয় বাঙ্কগুলিকে জোগাতে হবে ৫ লক্ষ কোটি টাকার বাড়তি মূলধন। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ডি সুব্বারাও মঙ্গলবার এই ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে যথেষ্ট মূলধন দিতে না-পারলে কেন্দ্রকে মালিকানা কমিয়ে আনার পথেই হাঁটতে হবে।
বাসেল-৩ আইন কী? ২০১৮ সালের মার্চের মধ্যেই বাসেল-৩ আইনের সব শর্ত ধাপে ধাপে পূরণ করার কথা। এর জন্যই নিয়ম-কানুন পরিবর্তন এবং আরও আঁটোসাঁটো করার কথা বলা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ২০১০ -এ সুইৎজারল্যান্ডের বাসেলে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সংস্কার সংক্রান্ত কমিটি বিশ্ব জুড়ে সব ব্যাঙ্ককে এই আইনের আওতায় আনার ব্যাপারে একমত হয়। তবে আইনটির মূল শর্ত একটি ব্যাঙ্কের ঋণের তুলনায় মূলধনের অনুপাত বা ‘ক্যাপিটাল অ্যাডিকোয়েশি রেশিও’ বাড়ানো। |
এ দিকে ভারতে কেন্দ্রের রাজকোষের যা অবস্থা, তাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে সরকারের হাতে থাকা শেয়ার নিদেনপক্ষে ৫১ শতাংশে নামিয়ে আনা ছাড়া কেন্দ্রের সামনে সম্ভবত অন্য বিকল্প থাকবে না। বণিকসভা ফিকি ও বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সংগঠন ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কস অ্যাসোসিয়েশন (আইবিএ)-এর সম্মেলনে আজ এই ইঙ্গিত দিয়েছেন আরবিআই কর্তা।
সব মিলিয়ে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় যে ৫ লক্ষ কোটি টাকার মূলধন জোগাতে হবে, তার মধ্যে ১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা শেয়ার মূলধন, বাকি ৩.২৫ কোটি টাকা অন্যান্য মূলধন। সারা দেশে ব্যাঙ্কিং শিল্পের ৭০% মালিকানা রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে এই মুহূর্তে সরকারের হাতে যে অনুপাতে শেয়ার মূলধন রয়েছে, তা ধরে রাখতে হলে কেন্দ্রকে ৯০ হাজার কোটি টাকার সংস্থান রাখতে হবে। অন্য দিকে, সুব্বারাও জানান, প্রতিটি ব্যাঙ্কে যদি কেন্দ্রের মালিকানা ন্যূনতম ৫১ শতাংশে নামিয়ে আনা যায়, তা হলে সরকারের বোঝা কমে দাঁড়াবে ৭০ হাজার কোটি টাকা। আর, মালিকানা ৫১ শতাংশেরও নীচে নামিয়ে আনা গেলে সরকারের বোঝা আরও কিছুটা লাঘব করা যাবে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি। তবে সে ক্ষেত্রে সিংহভাগ মালিকানা কেন্দ্রের হাতে না-থাকলে সর্বস্তরেই আপত্তি উঠবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সুব্বারাও বলেন, মালিকানা এ ভাবে আরও কমালে কেন্দ্রকে ভোটাধিকারের সর্বোচ্চ ক্ষমতা বজায় রাখতে আইন সংশোধন করতে হবে।
নগদ জমার অনুপাত তোলার যে-দাবি সম্প্রতি স্টেট ব্যাঙ্ক কর্তা প্রতীপ চৌধুরী করেন, তা নিয়ে নির্দিষ্ট কিছু বলেননি রাও। তবে দু’জনেই হাল্কা মেজাজে মত বিনিময় করেন। |