বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলকাতায় বললেন সার্ন-কর্তা
নোবেল পাওয়া উচিত ছিল সত্যেন বসুর
ত্যেন্দ্রনাথ বসুর নোবেল পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল বলেই মনে করেন সার্ন (কনসিল অয়রোপিন পুর লা রেশের্শে নিউক্লিয়্যার)- এর ডিরেক্টর-জেনারেল রলফ্-ডিটার হয়্যার। ‘ঈশ্বর কণা’ খুঁজে বের করা পরীক্ষাগারের কর্তার মতে, পদার্থবিদ্যায় সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অবদান নোবেল-জয়ী কোনও বিজ্ঞানীর থেকে কোনও অংশে কম নয়। সোমবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী হলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে হয়্যার বলেন, “এমন অনেক বিজ্ঞানী রয়েছেন, যাঁদের নোবেল পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু পাননি। সত্যেন্দ্রনাথ তেমনই এক জন।”
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত কণাকে দু’টি জাতে ভাগ করা যায়। তার মধ্যে এক জাতের কণাদের বলা হয় ‘বোসন’। সত্যেন্দ্রনাথ বসুই প্রথম এমন কণার উপস্থিতির কথা বলেছিলেন। তাঁর নামেই এই জাতের কণার নাম হয়েছে ‘বোসন’। সার্ন-এ যে ঈশ্বর কণার খোঁজ মিলেছে, তা-ও একটি বোসন।
রবিবার কলকাতায় এসেছেন হয়্যার। সোমবার আনন্দবাজারকে তিনি জানান, হাজার কোটি ডলার খরচ করে বানানো যন্ত্র লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার (এলএইচসি) তার দায়িত্ব পালন করেছে, খুঁজে পেয়েছে ঈশ্বর কণা। কিন্তু তাতেও গবেষণা শেষ হয়নি। পদার্থ বিজ্ঞানীরা এখন স্বপ্ন দেখছেন আরও ক্ষমতাবান, এবং অবশ্যই আরও ব্যয়বহুল, যন্ত্র বানানোর। সে জন্য দফায় দফায় নানা মহলে দরবার এবং দৌত্য চলছে।
হয়্যারের কথায়, “গবেষকেরা মূলত স্বপ্ন দেখছেন দু’টি যন্ত্র নিয়ে। ইন্টারন্যাশনাল লিনিয়ার কোলাইডার (আইএলসি) এবং কমপ্যাক্ট লিনিয়ার কোলাইডার (‘ক্লিক’)। আইএলসি হবে লম্বায় ৩০ কিলোমিটার এবং ক্লিক ৫০ কিলোমিটার। এই দুইয়ের কোনও এক যন্ত্র হাতে পাওয়ার জন্য বিজ্ঞানীদের আপ্রাণ চেষ্টা। ঠিক এর কোনটি শেষমেশ তৈরি হবে, তা এখন বলা মুশকিল।”
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে সার্ন-এর ডিরেক্টর-জেনারেল রলফ্-ডিটার হয়্যার। —নিজস্ব চিত্র।
কোথায় তৈরি হবে ভবিষ্যতের সেই যন্ত্র, যা ক্ষমতায় ছাপিয়ে যাবে এলএইচসি-কেও? হয়্যার জানালেন, ব্রাজিল ইতিমধ্যেই তাদের দেশে ওই যন্ত্র বানানোর প্রস্তাব দিয়েছে। আগ্রহ দেখিয়েছে জাপানও। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে আলোচনার উপর।
কেন আরও ক্ষমতাবান যন্ত্র বানানোর স্বপ্ন? হয়্যার বলেন, “ঈশ্বর কণা তো মিলেছে, কিন্তু তার চরিত্র এখনও আমরা ভাল করে বুঝিনি। প্রথমত, এই কণাটিকে বিশদে চেনা দরকার, কারণ তা হলে মিলবে এই ব্রহ্মাণ্ডের বেশ কিছু গূঢ় রহস্যের সমাধান। অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বলে গিয়েছেন, পদার্থ (ম্যাটার) আর শক্তি (এনার্জি) একই জিনিস। ব্রহ্মাণ্ডের সেই পদার্থ অথবা এনার্জির ৯৬ শতাংশ বেপাত্তা। তা যে কী, সেটা আমরা জানি না। ঈশ্বর কণার চরিত্র ভাল করে জানলে ওই নিখোঁজ ৯৬ শতাংশ যে আসলে কী, তা আমরা জানতে পারব।”
হয়্যার ব্যাখ্যা করে বললেন, “ব্রহ্মাণ্ডের আরও এক বড় রহস্যের সমাধান মেলেনি। বিশ্ব জুড়ে গ্রহ-নক্ষত্র, এবং একটি গ্রহে, অর্থাৎ পৃথিবীতে, রয়েছে পাহাড়-পর্বত, গাছপালা, জীব-জন্তু, মানুষ। এ সব হল ম্যাটার বা পদার্থ। কিন্তু বিগ-ব্যাং বা মহা বিস্ফোরণে ১৩৭০ কোটি বছর আগে বিশ্বের সৃষ্টির পর ম্যাটারের সঙ্গেই জন্মেছিল অ্যান্টি-ম্যাটার। তার পর হারিয়ে গেছে অ্যান্টি-ম্যাটার, রয়েছে শুধু ম্যাটার। কেন হারিয়ে গেল অ্যান্টি-ম্যাটার, সে রহস্যের সমাধান মিলবে ঈশ্বর কণার চরিত্র ভাল করে বুঝলে।” ঈশ্বর কণার চরিত্র বুঝতে এলএইচসি-এর চেয়ে ক্ষমতাবান যন্ত্রের প্রয়োজন রয়েছে বলে দাবি করলেন হয়্যার।
‘ফ্রন্টিয়ারস অফ সায়েন্স’ সংস্থা আয়োজিত এক আলোচনাচক্রে হয়্যার ব্যাখ্যা করেন, কণা-পদার্থ বিজ্ঞানের গবেষণা ক্রমশ কী ভাবে দেশ বা মহাদেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে প্রকৃত অর্থে বিশ্বমানবের মিলন তীর্থ হয়ে উঠেছে। ঠাট্টা করে তিনি বললেন, “সার্ন নামের মধ্যে ‘ই’ অক্ষরটি অর্থহীন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সার্ন এখন আর শুধু ইউরোপের সংস্থা হিসেবে চিহ্নিত নয়। এর পূর্ণ সদস্যের সংখ্যা ২০ থেকে ২৬ হতে চলেছে। সার্ন-এ এখন ইজরায়েল ও প্যালেস্তিনীয় গবেষকেরা এক সঙ্গে কাজ করেন। আমাদের ল্যাবেরেটরি যেন ‘সায়েন্স ফর পিস’-এর চমৎকার উদাহরণ।”
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়্যার সাংবাদিকদের জানান, সার্ন-এর ‘অ্যাসোসিয়েট মেম্বারশিপ’ পাওয়ার লক্ষ্যে ভারতের উদ্যোগ অনেকটা এগিয়েছে। গত বছর সার্ন পরিদর্শনে গিয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল এ ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। ভারতের বিজ্ঞান প্রযুক্তি দফতরও এ ব্যাপারে তৎপর। বলতে গেলে, ব্যাপারটা হয়তো এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
সার্নের তরফে হয়্যার ছাড়াও ‘ফ্রন্টিয়ারস অফ সায়েন্স’ আয়োজিত আলোচনাচক্রে ভাষণ দেন রুডিগার ভস, সুদেষ্ণা দত্ত-ককেরিল। আলোচনাচক্রের উদ্বোধন করেন বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ। বক্তৃতা দেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত। আলোচনাচক্রের আরও এক গুরুত্বপূর্ণ অংশে বিভিন্ন বক্তা জার্মানিতে নির্মীয়মাণ প্রকল্প ‘ফেসিলিটি ফর অ্যান্টি-প্রোটন অ্যান্ড হেভি আয়ন রিসার্চ’(ফেয়ার) সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেন। যাতে ভারত এক বড়সড় অংশীদার সদস্য। ফেয়ারের ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ড ব্যখ্যা করেন বসু বিজ্ঞান মন্দিরের প্রধান শিবাজি রাহা, ভেরিয়েবল এনার্জি সাইক্লোট্রন সেন্টারর দীনেশ শ্রীবাস্তব এবং শুভাশিস চট্টোপাধ্যায়।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.