নগরোন্নয়নের প্রশ্নে কেন্দ্রীয় অর্থ ঠিক মতো ব্যবহার করতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন বাম সরকার। ফলে উন্নয়নে পিছিয়ে যাওয়ার দায় বহন করতে হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন সরকারকে। তথ্য ও পরিসংখ্যান দিয়ে সম্প্রতি এই অভিযোগ তুলেছে খোদ কেন্দ্র।
বাম সরকারের রেখে যাওয়া ঋণের বোঝার প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধারাবাহিক ভাবে অভিযোগ জানিয়ে আসছেন কেন্দ্রের কাছে। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, কী ভাবে রাজ্যের পাশে দাড়ানো যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছেন তিনি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে, খোদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রকেরই দাবি, তাদের সহায়তার অপব্যবহার করে উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাজ্যকে পিছিয়ে দিয়েছে প্রাক্তন বাম সরকার।
জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আর্বান রিনিউয়াল মিশন (জেএনএনইউআরএম)-এর অধীনে নাগরিক পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে (আরবান ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড গভর্ন্যান্স বা ইউআইজি) বাছা হয়েছিল দেশের বড় ৬৫টি শহর। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে কলকাতা এবং আসানসোল ছাড়াও রয়েছে আরও ছ’টি পৌরসভা এলাকাভুক্ত শহর। ২০০৫ থেকে ২০১২-র ৩১ মার্চ পর্যন্ত মিশন-এর ধার্য সময়ে পশ্চিমবঙ্গের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যয় বরাদ্দ ছিল ৩২১৮ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক সূত্রে জানানো হচ্ছে, এই অর্থের মধ্যে ৫৭৪ কোটি টাকার কোনও প্রকল্পই জমা দিতে পারেনি রাজ্য সরকার। ফলে সেই টাকা থেকে গেল কেন্দ্রীয় সরকারের কাছেই।
কেন্দ্রের বক্তব্য, এই অর্থ বরাদ্দের সময়সীমার মধ্যে বেশির ভাগটাই ছিল (২০০৫ থেকে ২০১১ মার্চ পর্যন্ত) বামফ্রন্টের সময়ের। কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সৌগত রায়ের কথায়, “বিগত বামফ্রন্ট সরকার সময় মতো যথেষ্ট প্রকল্প জমা দিতে পারেনি। দেখা যাচ্ছে যে তাদের সময়কালীন ছ’বছরে মাত্র ৫৮টি প্রকল্প হয়েছে।” তুলনামূলক ভাবে নতুন সরকার আসার পরে পরিস্থিতি অনেকটাই উজ্জ্বল বলে মনে করছেন তিনি। কেননা গত দশ মাসে মোট ১১টি প্রকল্প মঞ্জুর হয়েছে।
নতুন সরকার আসার পরে যে সব প্রকল্প মঞ্জুর হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে মধ্যমগ্রাম, নিউ ব্যারাকপুর এবং বারাসতের ৪৪৫ কোটি টাকার জল-প্রকল্প, টিটাগড় ও খড়দহের জন্য ১৯৪ কোটি টাকার জল-প্রকল্প, জিঞ্জিরাবাজার থেকে বাটানগর পর্যন্ত রাস্তা চওড়া করার জন্য ২৫৫ কোটি টাকার প্রকল্প, কামালগাজিতে নতুন উড়ালপুলের জন্য ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প, উলুবেড়িয়াতে দ্বিতীয় পর্যায়ের জল-প্রকল্পের জন্য ১২৪ কোটি টাকার প্রকল্প। এই মিশনের জন্য গোটা দেশের মোট ৬৫টি শহর বাছা হয়েছিল।
মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, জেএনএনইউআরএম-এর অধীনে রয়েছে দু’টি পৃথক দিক। প্রথমটি বড় শহরগুলির জন্য ‘আর্বান ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড গভর্ন্যান্স’ (ইউআইজি), অন্যটি ছোট এবং মাঝারি শহরের জন্য ‘আর্বান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট স্কিম ফর স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম টাউনস’ (ইউআইডিএসএসএমপি)। প্রথম ক্ষেত্রে অর্থ আদায় করার প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কার্যত ব্যর্থ হলেও ছোট শহরের ক্ষেত্রে গত এক বছরে রাজ্যের ভূমিকা উজ্জ্বল। সৌগতবাবুর কথায়, “এই খাতে পশ্চিমবঙ্গের জন্য নির্ধারিত ছিল ৩১৫ কোটি টাকা। নতুন সরকার আসার পরে সেই বরাদ্দ বাড়িয়ে আরও ১৮৫ কোটি টাকা করা হয়েছে। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের অনেকগুলি ছোট শহরের জল-প্রকল্প মঞ্জুর করা হয়েছে।” এই শহরগুলির মধ্যে রয়েছে কোচবিহার, রায়গঞ্জ, এগরা, চন্দ্রকোনা, বালুরঘাট প্রমুখ।
কেন্দ্রীয় সূত্রে জানানো হয়েছে, জেএনএনইউআরএম-এর দ্বিতীয় দফার কাজ অক্টোবর মাসে শুরু করা হবে। গত দফায় গোটা দেশের জন্য এই মিশনের অধীনে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ ছিল ১ লক্ষ কোটি টাকা। এ বার তা বাড়িয়ে করা হবে ১ লক্ষ ৭৪ হাজার কোটি টাকা। স্বাভাবিক ভাবেই বিভিন্ন রাজ্যের আরও বেশি শহরকে উন্নয়নের আওতায় আনা যাবে বলে মনে করছে কেন্দ্র।
|
চার জেলার পাঁচটি কেন্দ্রে রবিবার স্কুল সার্ভিস কমিশনের দ্বিতীয় দফার পরীক্ষা নির্বিঘ্নেই হয়েছে। প্রশ্ন-বিভ্রাটে ২৯ জুলাই ওই সব কেন্দ্রে পরীক্ষা বাতিল হয়েছিল। |