সার বিক্রিতে বেনিয়ম ও কালোবাজারি বন্ধ করতে জেলার সারের দোকান ও গুদাম পরিদর্শন শুরু করেছে প্রশাসন এবং জেলা কৃষি দফতর। ইতিমধ্যেই ‘বেআইনি’ ভাবে সার বিক্রির জন্য ৬৩টি সারের দোকানের মালিককে শো-কজ করেছে কৃষি দফতর। এ ছাড়া অভিযান চালিয়ে বরাবজার ও পাড়া থানা এলাকার পুলিশ সার ‘পাচার’ করার সময়ে আটক করেছে ১৯০ বস্তা সার। এ দিকে, পুরুলিয়ার জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ বলেন, “সরকারি নির্ধারিত দামে চাষিদের কাছে সার পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে জেলার সার বিক্রির দোকান ও গুদামগুলিতে পরিদর্শন শুরু করা হয়েছে।”
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েচে, এই বছর বিলম্ববিত বর্ষা হলেও শেষ পর্যন্ত জেলার ৯২ শতাংশ জমিতে চাষ হয়েছে। পুরুলিয়াতে ২ লক্ষ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। চাষ হয়েছে প্রায় আড়াই লক্ষ হেক্টর জমিতে। প্রথম দিকে খরার আশঙ্কা থাকলেও শেষ দিকের বৃষ্টিতে ভালো পরিমাণেই চাষ হয়েছে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই বেড়েছে সারের চাহিদা। কিন্তু সমস্যা হয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ সার না আসায়। |
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আড়াই লক্ষ হেক্টর জমিতে ধান চাষের ফলে সার প্রয়োজন প্রায় আঠারো হাজার মেট্রিক টন। অথচ এখনও পর্যন্ত দুই দফায় পুরুলিয়াতে সার এসেছে মাত্র পাঁচ হাজার মেট্রিক টন। পুরুলিয়ার উপ-কৃষি অধিকর্তা অশ্বিনীকুমার কুণ্ডু বলেন, “আরও কিছু পরিমাণে সার দ্রুত আসার কথা। কিন্তু বর্তমানে পাঁচ হাজার মেট্রিক টন সার এখনই প্রয়োজন।”
ঘটনা হল সারের অপ্রতুলতার জন্যই জেলায় সারের কালোবাজারি শুরু হয়েছে বলে ইতিমধ্যেই কৃষি দফতর ও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ এসেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চাশ কেজির ইউরিয়া সারের বস্তার দাম ২৭৮ টাকা হলেও বস্তা বিক্রি হচ্ছে তিনশো টাকার বেশি দামে। পাশাপাশি পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ডেও সার পাচার করছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বলে অভিযোগ। প্রশাসন সূত্রের খবর, অভিযোগ পাওয়ার পরেই খোদ জেলাশাসক কৃষি দফতরকে সঙ্গে নিয়ে সার বিক্রির দোকান ও গুদামে পরিদর্শন শুরু করেছেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) হৃষিকেশ মুদি বলেন, “সরকারি বিধি অনুযায়ী সার বিক্রির দোকানে সারের মজুতের পরিমাণ ও দাম সংক্রান্ত তথ্য নোটিস বোর্ডে দিয়ে রাখতে হবে। কিন্তু পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গিয়েচে, দোকানের মালিকেরা সেই নিয়ম মানছেন না। এছাড়াও কোনও দোকানে সার এলে কত পরিমাণ সার এসেছে সেই তথ্য দোকানের খাতাতে নথিবদ্ধ করে রাখার নিয়ম। এক্ষেত্রেও সেই নিয়ম মানছেন না সার ব্যবসায়ীরা।”
তিনি আরও বলেন, “সরকারি নিয়ম মেনে স্বচ্ছ পদ্ধতি অনুযায়ী সার বিক্রি করতে হবে দোকানের মালিকদের। পরিদর্শনে গিয়ে এই বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে দোকানের মালিকদের।” তিনি জানান, পাশাপাশি ব্লক এলাকায় পরিদর্শন শুরু করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অন্যান্য ব্লকের সহকারী কৃষি অধিকর্তাদের। |