|
|
|
|
সামশেরগঞ্জে অ্যাসিড দিয়ে খুন ব্যবসায়ীকে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • জঙ্গিপুর |
বচসার জেরে দুই মদ ব্যবসায়ী অ্যাসিড দিয়ে পুড়িয়ে খুন করল এক মাংস ব্যবসায়ীকে। রঘুনাথগঞ্জ থানার ত্রিমোহিনী গ্রামে রবিবার দুপুরে এই ঘটনার পরে উত্তেজিত গ্রামবাসীরা ওই মদ ব্যবসায়ীদের দোকানে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালায়। পরে পুলিশ এসে দোকান থেকে তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর মদ, বোমা তৈরির সুতলির দড়ি, অ্যাসিড ভর্তি বোতল সহ অনেক মালপত্র আটক করেছে। তত ক্ষণে অবশ্য গ্রামবাসীদের তাড়া খেয়ে হাবু মণ্ডল ও মাধাই মণ্ডল নামে সহোদর দুই মদ কারবারি গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম সেনাবুল শেখ (৪০)। পেশা মাংস বিক্রি করা। বাড়ি শ্রীধরপুর গ্রামে। ওই গ্রামের শতাধিক মানুষ মাংস বিক্রির ব্যবসা করেন। রোজ সকালে মাংস নিয়ে তাঁরা বেরিয়ে পড়েন আশপাশের গ্রামে। রবিবারও সেই মতো তাঁরা বেরিয়ে পড়েছিলেন। দুপুরে সাইকেল করে বাড়ি ফেরার সময় বকেয়া টাকার খোঁজ করতে সেনাবুল ত্রিমোহিনীতে হাবু মণ্ডলের দোকানের সামনে দাঁড়ান। তারপরেই দু’পক্ষের মধ্যে বচসা শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হাবু দাবি করতে থাকেন সেনাবুলের মাংস খারাপ। হাবু জানিয়ে দেন, তিনি আর ওই খারাপ মাংস সেনাবুলের কাছ থেকে কিনবে না। এই নিয়েই তর্ক চলতে থাকে। হাবুর ভাই মাধাইও তাতে যোগ দেন। এর মধ্যেই সেনাবুলকে মাটিতে ফেলে মারধর করা হয়। তারপরে হাবু দোকান থেকে অ্যাসিড নিয়ে এসে সেনাবুলের গায়ে ঢেলে দেন। গোটা শরীর ঝলসে যায় সেনাবুলের।
সেনাবুলের দুই স্ত্রী। এক স্ত্রী সানোয়ারা বলেন, “আমি বাড়িতেই ছিলাম। হঠাৎ একটি ছেলে এসে খবর দেয়, আমার স্বামীকে অ্যাসিড ঢেলে খুন করা হয়েছে। আমি গিয়ে দেখি স্বামী যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। আমার কাছ থেকে জস চাইল। জলটুকু মুখে পড়তেই সাড় চলে গেল। সঙ্গে সঙ্গে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। ডাক্তারবাবুরা তখন তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।”
সেনাবুলের আর এক স্ত্রী জানেরা বিবি বলেন, “১০টি ছেলেমেয়ে। মাংস বিক্রি করে কত টাকাই বা আয় হত। তাই বিড়ি বাঁধতাম আমরা মাঝে মধ্যে। তবে দারিদ্র্য থাকলেও আমাদের সংসার সুখের ছিল। আমার স্বামীর কোনও বদ নেশা ছিল না। কারও সাতে পাঁচে থাকত না। সবার সঙ্গেই সদ্ভাব রেখে চলত। শুধু কথাকাটাকাটির জেরে কেউ কী কাউকে খুন করে?”
শ্রীধরপুরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, হাবু ও তাঁর ভাই অনেকদিন ধরেই কুকর্ম করতেন। মদের দোকান থেকে তাঁদের ভালই আয় ছিল।
এই ঘটনার পরে শুরু হয়েছে রাজনীতির চাপানউতোরও। কংগ্রেসের ব্লক সম্পাদক প্রকাশ সাহা বলেন, “সেনাবুল আমাদের সমর্থক ছিলেন। তার মতো ভাল লোককে এই ভাবে খুন করায় গ্রামবাসীরা ক্ষুব্ধ। অভিযুক্তেরা সিপিএমের সমর্থক।” সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সোমনাথ সিংহ রায়ের কথায়, “হাবুর সঙ্গে আমাদের দলের কোনও সম্পর্কই নেই। তাকে মদত দেওয়ারও কোনও প্রশ্ন নেই।” মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “অ্যাসিড দিয়ে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। তদন্ত চলছে।” |
|
|
|
|
|