বাবার মৃতদেহ সৎকার করা নিয়েও আপত্তি তুলেছিলেন মুকুতা মুখোপাধ্যায়। কিন্তু ঘনিষ্ঠদের জোরাজুরিতে বৃহস্পতিবার শেষ পর্যন্ত কেওড়াতলা শ্মশানে বাবার শেষকৃত্য করেন তিনি। তদন্তকারীদের দাবি, মৃতদের পরিচিতরা এমনই জানিয়েছেন তাঁদের।
বৃহস্পতিবার রাতে সাউথ সিটি আবাসনের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন অমিতা মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর দুই মেয়ে, মুকুতা এবং খেয়া। আবাসনের সিঁড়ির কাছে মেলা কাগজপত্র ঘেঁটে পুলিশের দাবি, অমিতাদেবীর স্বামী নীহার মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যেরা। তদন্তকারীদের অনুমান তা থেকেই এই ঘটনা।
পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার বাবার মৃত্যুর পরে হাসপাতালেই এক দিনের জন্য দেহ রাখতে বলেন মুকুতা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি দেহ ছাড়িয়ে নেন। তখন মুকুতার ঘনিষ্ঠ কয়েক জন সঙ্গে ছিলেন। তাঁদের জেরা করে পুলিশ জেনেছে, বাবার দেহ ছাড়িয়ে তা শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার বদলে বাড়িতেই রাখতে চেয়েছিলেন মুকুতা। পরিচিতরাই তাঁকে নিরস্ত করেন।
তদন্তকারীরা বলছেন, বাবার দেহ সৎকার না করে তা বাড়িতে রেখে দেওয়াটা গভীর মানসিক অবসাদের লক্ষণ। পরিচিতরাও জানান, ডানপিটে স্বভাবের মুকুতা ওই সন্ধ্যায় ‘অস্বাভাবিক’ চঞ্চল হয়ে উঠেছিলেন। তার পরিণাম যে এমন হবে, সেটা বুঝতে পারেননি তাঁরা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান ছিল, এই ঘটনার পিছনে মানসিক অবসাদ-ই দায়ী। মুকুতা-খেয়াদের পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলে সেই অনুমানই আরও জোরালো হয়েছে বলে দাবি করছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টা নাগাদ সাউথ সিটি পৌঁছন মুকুতা। কিন্তু এর পরে কোথায় যান মুকুতা এবং তাঁর মা-বোন, তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় পুলিশ। মেলেনি খেয়া ও মুকুতার মোবাইলও।
ঘটনার পিছনে অন্য কোনও কারণ আছে কি না, তা জানতে মুকুতাদের পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলেছেন গোয়েন্দারা। খতিয়ে দেখা হয় তাঁদের একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও। এমনকী, বাইপাসের কাছে ওই পরিবারের যে জমি আছে, তা নিয়ে কোনও বিবাদ ছিল কি না, সে খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ। মুকুতাদের গল্ফগ্রিনের ফ্ল্যাটেও তল্লাশি চালানো হয়েছে। গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ রবিবার বলেন, “এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত সন্দেহজনক কিছু মেলেনি। তবে তদন্তে সব কিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” |