বইয়ের তাক পরিষ্কার করছিলেন কটস্ওল্ডসের বাসিন্দা জ্যাকি শিহান। হঠাৎই ঝুপ করে একটা কাগজ পড়ল পায়ের সামনে। পুরনো হলদেটে কাগজের একটা চিঠি। কিন্তু চিঠি খুলতেই চক্ষু চড়কগাছ তাঁর। সাল যে বলছে ১৮৫৮। এ-ও আবার হতে পারে নাকি! সত্যি দেখছেন তো? নিজের চোখকেই প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেননি জ্যাকি। কোনও রকমে প্রায় এক নিশ্বাসে শেষ করলেন চিঠিটা। ভিক্টোরীয় যুগের ইতিহাস এখন তাঁর হাতে। চিঠির প্রেরক চার্লস ডিকেন্স। পাঠিয়েছিলেন তাঁরই আইনজীবীকে।
সালটা ১৮৫৮। মে মাস। নিজের বিবাহিত জীবনের একঘেয়েমিতে ক্লান্ত ডিকেন্স। বিরক্তির পারদ চড়ছে প্রত্যেক দিন। স্ত্রী ক্যাথরিন ইতিমধ্যেই জন্ম দিয়েছেন তাঁর দশ ছেলে-মেয়ের। এই জীবন থেকে কিছুতেই আর নতুন আনন্দ খুঁজে পাচ্ছেন না চার্লস।
এর মধ্যে আচমকাই এক দিন খোঁজ পেলেন নিজের স্বপ্নের রাজকন্যের। অভিনেত্রী এলেন টারনান। বয়সটা অবশ্য তাঁর একটু কমই। এলেন তখন নেহাতই এক অষ্টাদশী তরুণী। কিন্তু প্রেম আর বয়সের খেয়াল কবেই বা রেখেছে! স্ত্রী-সন্তান-সংসারের টান ভুলে মাঝ বয়সী লেখক পড়লেন তরুণীর প্রেমে। এলেনও তত দিনে হাবুডুবু খাচ্ছেন ডিকেন্সের প্রেমে। |
বিখ্যাত লেখকের প্রেম-কাহিনিও চাপা থাকেনি বেশি দিন। কানাঘুষোয় ছড়াচ্ছিলই খবরটা। এক দিন হাতেনাতে পাকড়াও করলেন স্ত্রী ক্যাথরিন। এলেনের জন্য ব্রেসলেট বানাতে দিয়েছিলেন চার্লস। কিন্তু এলেনের ঠিকানাটা খেয়াল করেননি দোকানি। চার্লস ডিকেন্সের সই দেখামাত্র গয়নাটা সোজা পাঠিয়ে দিয়েছেন
তাঁর বাড়িতে।
এক দিকে চূড়ান্ত একঘেয়েমি। অন্য দিকে তরুণী প্রেমিকার মোহময়ী হাতছানি। সিদ্ধান্ত নিতে আর দেরি করেননি চার্লস। ঠিক করলেন, বিচ্ছেদ দেবেন স্ত্রীকে। সেই মতো কথা বললেন আইনজীবী ফ্রেডরিক ওভ্রি’র সঙ্গে।
পরের দিনই আবার চিঠি লিখলেন ওভ্রিকে। বিচ্ছেদ নিয়ে তো মনস্থির করেই নিয়েছেন। বাকি খালি খোরপোষের পরিমাণ ঠিক করা। জানিয়ে দিলেন, বছরে ৬০০ পাউন্ডই যথেষ্ট ক্যাথরিনের জন্য। তিনি তো কেবল ব্রউগহ্যাম (শৌখিন চার চাকার গাড়ি) চালিয়ে ঘুরবেন। ৬০০ পাউন্ডে আগের মতোই দিব্যি কুলিয়ে যাবে তা।
এই চিঠি লেখার কিছু দিনের মধ্যেই বিচ্ছেদ হয়ে যায় চার্লস-ক্যাথরিনের। তার পর থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সঙ্গী ছিলেন এলেন।
পাওয়া গিয়েছে ওভ্রিকে লেখা ডিকেন্সের এই দেড়শো বছরের পুরনো চিঠিটাই। জাল নয়, চিঠিটা আসলই, জানিয়েছেন এক ডিকেন্স গবেষকও। কিন্তু ডিকেন্সের সঙ্গে দূর-দূরান্তেও যোগ নেই কটস্ওল্ডেসের। তাই সেখানে কী করে চিঠিটা এল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েই গিয়েছে।
চিঠি-রহস্যের কোনও হদিস দিতে পারেননি জ্যাকি শিহানও। তিনি জানান, তাঁর বোনের শাশুড়িকে এক বাইবেল দেন তাঁর এক প্রতিবেশী। ওই ঝুরঝুরে বইয়ের মধ্যেও যে এ রকম বিস্ময় তাঁদের জন্য অপেক্ষা করতে পারে, তা ভাবতেই পারেননি তিনি। ইতিহাসের ওই সাক্ষীটিকে লন্ডনের ফ্রাসার্স অটোগ্রাফের নিলামে তুলে দিতে চলেছেন জ্যাকি। নিলাম হবে ২৭ সেপ্টেম্বর। কম করে হাজার-দেড় হাজার পাউন্ড যে উঠবে, তা নিয়ে আশাবাদী সকলেই। |