এক দিনের মধ্যে সরকারি হিসাবেই রাজ্যে নতুন ৬৮ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের সন্ধান মিলল। তাঁরা যে আক্রান্ত হয়েছেন, ম্যাক-এলাইজা পরীক্ষাতেই তা নিশ্চিত হয়েছে। পাশাপাশি গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গির প্রাথমিক পরীক্ষা এনএস-১ পজিটিভ হয়েছে ৩৪২ জনের। বিশেষ করে কলকাতা ও উত্তর চব্বিশ পরগনায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। স্বাস্থ্যকর্তারা স্বীকার করছেন, রাজ্যে ডেঙ্গির প্রকোপ এখন চরমে উঠেছে।
শনিবারই বিসি রায় শিশু হাসপাতালে ১১ বছরের একটি বালক ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার তমলুকের বাসিন্দা ওই ছেলেটিকে বিসি রায়ে ভর্তি করা হয়েছিল। তখন থেকেই শিশুটি ‘শক’-এ ছিল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এই নিয়ে এ বছর এখনও পর্যন্ত রাজ্যে সরকারি হিসাবে ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল তিন। স্বাস্থ্য দফতরের অবশ্য দাবি, গত দু’বছরে ডেঙ্গিতে রাজ্যে কোনও মৃত্যুর ঘটনাই ঘটেনি।
স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, ৩১ অগস্ট গোটা রাজ্যে এনএস-১ টেস্ট পজিটিভ হয়েছিল ১৩৭৫ জনের। সেখানে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৭১৭। আবার ৩১ অগস্ট ম্যাক এলাইজা পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত ডেঙ্গি-আক্রান্তের সংখ্যা নির্ধারিত হয়েছিল ৫৭০। এক দিনের ভিতর সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩৮। কলকাতায় এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত ডেঙ্গির ৩৯৪টি খবর পাওয়া গিয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনায় সংখ্যাটা ১১৫। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্তারাই স্বীকার করছেন, আক্রান্তের আসল সংখ্যাটা অনেক বেশি। কারণ বার-বার বলা সত্ত্বেও বেসরকারি হাসপাতালগুলি নিয়মিত ডেঙ্গি সংক্রান্ত তথ্য স্বাস্থ্য দফতরে পাঠাচ্ছে না। এ দিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য অবশ্য অভিযোগ করেছেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলি নিজে থেকে তথ্যগোপন করছে না, আসলে সরকারই তাদের এই নির্দেশ দিয়েছে। তাঁর কথায়, “বেসরকারি হাসপাতাল আর নার্সিংহোমে খোঁজ নিন। দেখবেন স্বাস্থ্যকর্তারাই ওদের নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন, যাতে ডেঙ্গি সংক্রান্ত কোনও তথ্য তারা না-জানায়। আমি রাজ্যপালকেও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি।” এ বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে প্রশ্ন করা হলে তাঁর জবাব, “প্রদীপবাবুর বক্তব্যের কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করি না।”
কিন্তু কেন প্রতিদিন ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে? স্বাস্থ্য দফতর ও পুরসভাগুলি কি তা হলে রোগ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ? স্বাস্থ্য দফতরের জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্তা শঙ্কর সাহার বক্তব্য, “তা নয়। আসলে ভাইরাস-ঘটিত সব রোগের ক্ষেত্রেই একটা সময় আসে, যখন রোগের প্রাবল্য চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছয়। তার পরে আপনা থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা কমে যায়। আশা করা যাচ্ছে, পুজোর আগেই এই রোগের প্রাবল্য কমে যাবে।”
আপাতত অবশ্য সেই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। শুধু বিসি রায় হাসপাতালেই এই মুহূর্তে প্রায় ৩০টি শিশু ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত ৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদারের মা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। জ্বরে আক্রান্তদের রক্ত পরীক্ষার জন্য কলকাতা পুরসভা ১২টি মেডিক্যাল ক্যাম্প চালু করেছে।
সরকারি ভাবে সল্টলেকে ২৩ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত বলে ঘোষণা করেছিল বিধাননগর পুরসভা। কিন্তু যে ব্লকে পুরসভার অফিস, সেই এফডি ব্লকেই ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ এর কাছাকাছি বলে জানিয়েছেন ব্লক কমিটির সভাপতি শান্তনু বিশ্বাস। এফডি ব্লকের বাসিন্দা শুক্লা সরকার নামে এক বৃদ্ধাকে বৃহস্পতিবার থেকে হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা চলছিল। কিন্তু ডেঙ্গি-আক্রান্তের ভিড়ে শয্যা মেলেনি। শেষ পর্যন্ত শনিবার দুপুরে কোনও মতে এক বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শয্যা পেয়েছেন। সল্টলেকে এবি, এসি, এডি, বিডি, বিকে, বিজে, একে, বিকে, এএইচ, এফডি, এফই-র মতো ব্লকে প্রায় ৫৫-৬০ জন মানুষ ডেঙ্গি-আক্রান্ত হয়েছেন বলে ব্লক কমিটিগুলি জানিয়েছে। বিধাননগর পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিএমের শাশ্বতী মণ্ডল জানান, তাঁর বাড়িতেই তিন জনের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। তাঁর ওয়ার্ডের অন্তর্গত এএল, বিএল, সিকে, সিএল ব্লকে এনএস-১ পজিটিভ ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। |