পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে টানাপোড়েনে জড়িয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই জট কবে এবং কী ভাবে খুলবে, তা এখনও পরিষ্কার নয় বলে মহাকরণ-সূত্রের খবর।
গত ২১ জুলাই তৃণমূলের শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, পুজোর পরে রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট হবে। ঘটনাচক্রে ওই জুলাই মাসেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের চিঠির (মে মাসে লেখা) জবাবে রাজ্য সরকার জানিয়ে দেয়, তারা ডিসেম্বরে পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে আগ্রহী। তার পর থেকেই শুরু হয়েছে টানাপোড়েন। নিয়ম অনুযায়ী, রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচসাপেক্ষে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সূচি ঘোষণা করবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। গত ক’মাস ধরে সেই আলোচনা চললেও কোনও ফয়সালায় পৌঁছানো যায়নি। অবশ্য মহাকরণের আশা, সমাধানের পথ একটা বেরোবে। সে ক্ষেত্রে রাজ্যের পরিবর্তিত দাবি মেনে জানুয়ারিতে চার দফায় রাজ্যে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন হতে পারে বলে মহাকরণ-সূত্রের ইঙ্গিত।
দু’পক্ষে মতানৈক্য কী নিয়ে?
নির্বাচন কমিশন মনে করে, পঞ্চায়েত-এলাকা পুনর্বিন্যাসে অন্তত আড়াই মাস লাগবে। এবং সেই কাজ সেপ্টেম্বরের আগে শুরু করা যাবে না। এর পরে বিধি মোতাবেক নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু করতে অন্তত ৭৫ দিন (স্ট্যাটিউটরি পিরিয়ড) অপেক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ, সেপ্টেম্বরের গোড়ায় পুনর্বিন্যাস শুরু করলেও সব মিলিয়ে পাঁচ মাস (১৫০ দিন) সময় চাই, যা শেষ হবে জানুয়ারিতে। তার পরের দু’মাস রাজ্য জুড়ে যথাক্রমে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা।
ফলে কোনও মতেই এপ্রিল-মে’র আগে পঞ্চায়েত ভোট সম্ভব নয় বলে কমিশনের অভিমত। অন্য দিকে রাজ্যের পাল্টা দাবি, এলাকা পুনর্বিন্যাস সারতে দেড় মাসের বেশি লাগার কথা নয়। সেই হিসেবে প্রস্তুতিতে সব মিলিয়ে চার মাস লাগবে। অর্থাৎ, সেপ্টেম্বরে কাজ শুরু হলে ডিসেম্বরে শেষ হবে। তাই জানুয়ারিতে নির্বাচন হতে কোনও অসুবিধা নেই বলে রাজ্য সরকার মনে করছে।
বিরোধের আরও জায়গা তৈরি হয়েছে। যেমন কমিশনের বক্তব্য: ২০১৩-র জানুয়ারিতে নতুন যে ভোটার তালিকা বার হওয়ার কথা, মে মাসে পঞ্চায়েত নির্বাচন হলে তা সেই তালিকার ভিত্তিতে হতে পারে। রাজ্যের পাল্টা যুক্তি, আগের প্রতিটা পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে পুরনো ভোটার তালিকার ভিত্তিতে। সে ক্ষেত্রে গত জানুয়ারিতে (২০১২) প্রকাশিত ভোটার তালিকার ভিত্তিতে এ বারও নির্বাচন হতে বাধা নেই।
পশ্চিমবঙ্গে শেষ পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছিল ২০০৮-এর মে’তে। তার পরে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের সর্বস্তরে বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া চলেছে জুন পর্যন্ত। কমিশন বলেছে, আগে ভোট হলে মাঝের ক’মাসের জন্য পঞ্চায়েত এলাকায় দু’টো পক্ষ তৈরি হবে। একটা কার্যকরী কমিটি (ফাংশনাল বডি), যেটি আইন অনুযায়ী মে-জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে। অন্যটি সদ্য নির্বাচিত (ইলেকটেড বডি) কমিটি, যাদের পরবর্তী বোর্ড তৈরির কথা। এতে নানা জটিলতা ও সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে মনে করে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। রাজ্য মন্ত্রিসভার একটি অংশেরও সেই আশঙ্কা। যদিও পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আশ্বাস, “এ কোনও সমস্যাই নয়। স্থানীয় স্তরে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা অনায়াসেই ব্যাপারটা সামলে নিতে পারবেন।”
মহাকরণের খবর: এলাকা পুনর্বিন্যাসে আড়াই মাস লাগবে না দেড় মাস, এই প্রশ্নটাই আপাতত সবার উপরে। মহাকরণের এক মুখপাত্র জানান, চার দফায় ভোট করতে হলে দু’সপ্তাহ প্রয়োজন। আগে-পরে আছে নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে আরও কিছু প্রক্রিয়া। সব মিলিয়ে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হলে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট-পর্ব মিটিয়ে ফেলা যাবে।
মহাকরণ আশাবাদী হলেও কমিশন শেষমেশ কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটাই দেখার। |