কিছু দিন আগেও তিনি ছিলেন সরকারের মুশকিল আসান।
শরিকি মানভঞ্জন হোক বা বিরোধীদের ক্ষুরধার যুক্তিতে ঘায়েল করা গত আট বছর ধরে ইউপিএ সরকারের অন্যতম ভরসা ছিলেন কীর্ণহারের ওই ব্রাহ্মণ সন্তান। কিন্তু গত জুনে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে দীর্ঘ সময় বাদে এই প্রথম সংসদে অনুপস্থিত প্রণব মুখোপাধ্যায়। আর তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই অধিবেশনেই কয়লা কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত অভিযোগের জেরে বিজেপি-র চাপে সংসদ চালাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ কংগ্রেস নেতৃত্ব। সরকার এর দায় বিজেপি-র উপর চাপালেও রাজনৈতিক নেতাদের অনেকের মতে, একটি গোটা অধিবেশন এ ভাবে নষ্ট হয়ে গেলে তার দায় কংগ্রেসও এড়াতে পারবে না। এই পরিস্থিতিতে গত কাল রাতে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করলেন সনিয়া গাঁধী।
স্বাভাবিক ভাবেই, ওই সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে জল্পনা শুরু হয়েছে। অনেকের মতে, কোন রণকৌশলে শেষ এক সপ্তাহ (বাদল অধিবেশনের মেয়াদ ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) সংসদ সুষ্ঠু ভাবে চালানো সম্ভব, তা নিয়ে আলোচনা করতেই কাল রাইসিনা হিলসে গিয়েছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী।
শুধু প্রণববাবু নয়, সংসদ চালানোর উদ্দেশে গত কাল বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গেও ফোনে এক প্রস্ত কথা বলেন সনিয়া। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব আজ ফের জানিয়ে দিয়েছেন, কয়লা কেলেঙ্কারি কাণ্ডে প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফা না দিলে বাদল অধিবেশন চলতে দেওয়া হবে না। দলীয় নেতা রাজীবপ্রতাপ রুডি আজ ফের বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী ইস্তফা না দিলে সংসদ চলার প্রশ্নই নেই।”
রাজনীতির কারবারীদের অনেকেরই মতে, এই ধরনের পরিস্থিতিতে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমধান সূত্র খোঁজার পক্ষে আদর্শ লোক ছিলেন প্রণববাবু। শেষ দু’টি অধিবেশনে টু-জি কেলেঙ্কারি ও খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি বিলের প্রশ্নে কার্যত এ ভাবেই সংসদ অচল করে রেখেছিল শরিক ও বিরোধী দলগুলি। শেষ পর্যন্ত টু-জি কেলেঙ্কারির তদন্ত যৌথ সংসদীয় কমিটিকে দিয়ে করানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। খুচরো ব্যবসার প্রশ্নে পিছিয়ে আসে সরকার। যার ফলে শেষ পর্যন্ত অচলাবস্থা কাটে। শুধু কংগ্রেস নয়, বিরোধী দলগুলিও সে সময়েও স্বীকার করেছিল, দু’টি ক্ষেত্রেই অচলাবস্থা কাটানোর মুখ্য কারিগর ছিলে লোকসভার নেতা প্রণববাবুই।
এখন প্রণববাবু রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে লোকসভার নেতার দায়িত্ব পেয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিণ্ডে। কিন্তু কার্য ক্ষেত্রে বিরোধীদের জবাব দেওয়াই হোক কিংবা দলীয় সাংসদের প্রতি আক্রমণে উৎসাহ দেওয়া কার্যত লোকসভার নেতার দায়িত্ব পালন করতে দেখা যাচ্ছে সনিয়াকে।
গত সপ্তাহে বিজেপি-র বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ভাবে পাল্টা আঘাত হানতে দলীয় সাংসদদের সর্বাত্মক আক্রমণে যেতে নির্দেশ দেন সনিয়া। তাই এখন ‘অতি সক্রিয়’ কংগ্রেস সভানেত্রীর সঙ্গে গত কাল প্রণববাবুর বৈঠক বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে কংগ্রেস সূত্রের একাংশের বক্তব্য, সংসদ শেষ হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় রদবদলের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই বিষয়টি নিয়েও কাল এক প্রস্ত আলোচনা হয়ে থাকতে পারে। তেল ও স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মন্ত্রীদের মধ্যে মন্ত্রক অদলবদল করার কথা ভাবছে সরকার।
এ দিকে কয়লা কেলেঙ্কারি কাণ্ডে প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফা চেয়ে আজ দেশের ৪০টি জায়গায় ধর্না দেয় বিজেপি। দলীয় সূত্রে বলা হচ্ছে, গোটা বিষয়টি নিয়ে দল যে ভাবে সর্বাত্মক ভাবে আক্রমণে নেমেছে, সেখান থেকে এখন পিছিয়ে আসার কোনও প্রশ্নই উঠছে না।
কলকাতায় বিজেপি মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেন বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ কয়লা বণ্টন নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে জানান। আর যে সব সংস্থাকে কয়লা বণ্টন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা বাতিল করা হোক।” আগামী দিনে কয়লা কেলেঙ্কারির প্রশ্নে কংগ্রেসের বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে ‘তথ্য-প্রমাণ’ সর্বসমক্ষে নিয়ে আসা হবে বলে বিজেপি সূত্রের দাবি। |