ইরাকে আমেরিকার ‘আগ্রাসন’। আর তার জন্য প্রতিবাদের মাসুল গুনল কলকাতা।
সিপিএমের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মিছিলের জেরে শনিবার দিনভর কার্যত অচল হয়ে রইল শহর। ভুগতে হল অফিস-যাত্রী থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের। মিছিলে আটকে গেল অ্যাম্বুল্যান্সও। রাস্তাঘাট স্বাভাবিক হতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়।
শনিবার দুপুরে বামফ্রন্টের মহামিছিল শুরু হয় রানি রাসমণি রোড থেকে। যায় উত্তর কলকাতার দেশবন্ধু পার্ক পর্যন্ত। সেখানে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসু সহ বাম নেতারা বক্তৃতাও করেন। সব মিলিয়ে বেলা ১২টার পর থেকেই মধ্য ও উত্তর কলকাতার বড় রাস্তাগুলি মিছিলকারীদের দখলে চলে যায়। এক সময় ধর্মতলার মোড় পেরোতেই প্রায় ঘণ্টাখানেক লাগে। মিছিল যত এগোতে থাকে, ততই ছড়িয়ে পড়ে যানজট। উত্তর ‘অবরুদ্ধ’ হয়ে পড়ায় চাপ বাড়ে দক্ষিণেও। |
সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ হলেও (আগাম ‘ক্ষমা’ চেয়েও রেখেছিলেন বিমানবাবু) বাম নেতারা অবশ্য এ দিনের মিছিলের ‘সাফল্যে’ সন্তুষ্ট। কারণ সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতার নামে মিছিল করা হলেও কলকাতায় বড় জমায়েত করে কর্মীদের ‘চাঙ্গা’ করা ছিল আলিমুদ্দিনের বড় লক্ষ্য। সেই কাজে তাঁরা ‘সফল’ বলে মনে করছেন বাম নেতারা। শুধু সিপিএম নেতারা নন, আরএসপি-র ক্ষিতি গোস্বামী, সিপিআইয়ের স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো শরিক নেতারাও দাবি করেন, “এত বড় মিছিল করতে বামপন্থীরাই পারে। কারণ গরিব মানুষ তাঁদের সঙ্গে আছেন।”
এ দিন দুপুর সওয়া একটা নাগাদ বিমানবাবুর নেতৃত্বে মিছিল শুরু হয়। জওহরলাল নেহরু রোড থেকে লেনিন সরণিতে ঢোকার সময় এসপ্ল্যানেড রো-তে (ইস্ট) সার দিয়ে যানবাহন দাঁড়িয়ে যায়। মিছিল শুরুর সময় এস এন ব্যানার্জি রোডও কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
এনআরএস হাসপাতালের সামনে হাওড়াগামী বাসযাত্রী মধ্যবয়স্ক মৃত্যুঞ্জয় বর্মনের ক্ষোভ, “বাড়িতে মা, স্ত্রী ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত। ভেবেছিলাম তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরব। এক ঘণ্টা ধরে বাসে বসে রয়েছি। গোটা রাস্তা জুড়ে মিছিল যাচ্ছে।” একই সুরে বারাসতের বাসিন্দা অনিল দে বলেন, “মিছিল শুরু হওয়ার দশ মিনিট আগে লেনিন সরণির গাড়ি আটকে দেয় পুলিশ। শিয়ালদহের গাড়ি চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ দিয়ে যাচ্ছে!” কখন মিছিল শেষ হবে সেই দুশ্চিন্তায় এপিসি রোডে দীর্ঘক্ষণ বাসে আটকে থাকা নিত্যযাত্রীরা ছটফট করতে থাকেন। |
দেশবন্ধু পার্কে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। —নিজস্ব চিত্র |
মিছিল শুরুর সময় মেয়ো রোড, রেড রোডেও বন্ধ রাখা হয়েছিল যান চলাচল। ট্রাফিক পুলিশের এক কর্তা বলেন, মিছিল ‘লাইন’ করে যায়নি। স্রোতের মতো রাস্তা জুড়ে এগিয়েছে। তার ফলে এমন যানজট হয়েছে। পুলিশ জানায়, মিছিলের নির্দিষ্ট রুট ছিল লেনিন সরণি, মৌলালি, এজেসি বোস রোড, এপিসি রোড, রাজাবাজার, গ্যাস স্ট্রিট, রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিট হয়ে দেশবন্ধু পার্ক। মিছিল যে সময় লেনিন সরণি পেরিয়েছে, সেই সময় ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী যানগুলিকে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। আবার এপিসি রোড দিয়ে মিছিল যাওয়ার সময় উত্তর থেকে দক্ষিণমুখী গাড়িগুলি ঘুরিয়ে দেওয়া হয় মানিকতলা বা কাঁকুড়গাছি দিয়ে। মিছিল মৌলালির মোড় পেরনোর সময় এজেসি বোস রোড থেকে ধর্মতলা গামী গাড়িগুলি ঘোরানো হয় সুরাবর্দি অ্যাভিনিউ, থিয়েটার রোড দিয়ে। এই ভাবে যানবাহন আটকানো বা ঘুরিয়ে দেওয়ার ফলেই বেশি নাকাল হতে হয় মানুষকে। |
মিছিলে স্তব্ধ শহর। শনিবার এসপ্ল্যানেড এলাকায় প্রদীপ আদকের তোলা ছবি। |
প্রতি বছরই ১ সেপ্টেম্বর বামেরা ‘সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী’ দিবস পালন করে। সেই সূত্রেই এ দিনের এই কর্মসূচি। দেশবন্ধু পার্কের সমাবেশে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেন, “ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়ার উপর আমেরিকা আক্রমণ হানছে। এ বার তাদের নজর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে। এর বিরুদ্ধেই আমাদের মিছিল।” মিছিলের শেষে বিমানবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আগামী ১২ জানুয়ারি বিবেকানন্দের জন্মদিনে যুব উৎসবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে কলকাতায় আমন্ত্রণ জানাতে চান। এত মানুষ আমাদের সঙ্গে। কোনও ভাবেই ওবামাকে আমরা কলকাতায় নামতে দেব না।”
তৃণমূল নেতৃত্ব বামেদের মিছিলকে গুরুত্ব দিতে আদৌ রাজি নন। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা রেলমন্ত্রী মুকুল রায় বলেন, “ওদের মিছিলের থেকেও বেশি লোক প্রত্যেকটা জেলায় এসেছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা শুনতে। জনসমর্থন মাপার মাপকাঠি হচ্ছে নির্বাচন। ভোটের ফলই বলবে জনসমর্থন কোন দিকে বেশি।”
|
বামেদের মহামিছিলে এক নজর |
|
ক্ষিতির মোবাইল |
বামেদের মহামিছিলে পাঞ্জাবির পকেট থেকে মোবাইল চুরি গেল আরএসপি নেতা ক্ষিতি গোস্বামীর। মিছিল ধর্মতলায় পৌঁছতেই ক্ষিতিবাবু দেখেন মোবাইল গায়েব!
|
পড়ে জখম |
মিছিল শুরুর পরেই ঠেলাঠেলিতে পড়ে গেলেন সিপিআইয়ের দুই নেতা স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রবীর দেব। পড়ে গিয়ে প্রবীরবাবুর কপাল কেটে রক্তারক্তি।
|
আলোকচিত্রী রবীন |
নতুন ভূমিকায় দেখা গেল সিপিএম নেতা রবীন দেবকে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বক্তৃতা করার সময় আইপ্যাডে ছবি তোলায় মগ্ন ছিলেন রবীনবাবু।
|
তড়িতের পরামর্শ |
সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মিছিল সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে দেশবন্ধু পার্ক পর্যন্ত করা উচিত। পরামর্শ সিপিএম নেতা তড়িৎ তোপদারের।
|
বিমানের গতি |
যে গতিতে সিপিএম নেতা বিমান বসু গোটা মিছিলে হাঁটলেন তাতে সবাই অবাক! সত্তরোর্ধ্ব বিমানবাবুর ‘ফিটনেসে’র রহস্য কী? আলোচনা বাম-মহলে। |
|
|