দাবি ইজরায়েলি নথির
মিউনিখ-কাণ্ডে ‘নিষ্ক্রিয়’ ছিল জার্মানি
সালটা ১৯৭২।
জার্মানির মিউনিখে অলিম্পিকের আসর তখন প্রথম সপ্তাহ শেষ করে সদ্য পা দিয়েছে দ্বিতীয় সপ্তাহে। আর ঠিক তখনই ছন্দপতন। খাস অলিম্পিক ভিলেজে প্যালেস্তাইনি জঙ্গিদের হাতে নিহত হলেন ১১ জন ইজরায়েলি অ্যাথলিট। পরে অবশ্য এই ‘মিউনিখ-হত্যাকাণ্ড’ নিয়ে বিস্তর রক্তপাত দেখেছে বিশ্ব। তবে প্রকাশ্যে বিতর্ক বোধ হয় এই প্রথম। সৌজন্যে ইজরায়েলের প্রায় চল্লিশ বছরের পুরনো গোপন নথি। যেখানে পরিষ্কার ভাবে মিউনিখ-হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করা হচ্ছে জার্মানির নিষ্ক্রিয়তাকে।
ঠিক কী হয়েছিল ১৯৭২-এর ৫ সেপ্টেম্বর?
ইজরায়েলের সরকারি সূত্র অনুসারে, মিউনিখের অলিম্পিক ভিলেজের যে অ্যাপার্টমেন্টে থাকছিল ইজরায়েলি দল, সেখানে হানা দেয় প্যালেস্তাইনি জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ব্ল্যাক-সেপ্টেম্বরের’ আট জন সশস্ত্র জঙ্গি। প্রথমেই তারা দু’জন অ্যাথলিটকে গুলি করে মারে। আর বাকি ন’জনকে পণবন্দী করে ফেলে। পরে অবশ্য অ্যাথলিটদের উদ্ধার করতে পুলিশ বাহিনী পাঠিয়েছিল জার্মানি। কিন্তু তাঁরা বাঁচাতে পারেননি ওই ন’জন অ্যাথলিটকে। জঙ্গিদের গুলিতেই ন’জনের মৃত্যু হয়। একই সঙ্গে অবশ্য মৃত্যু হয় এক জার্মান পুলিশকর্মীরও। মারা যায় পাঁচ জঙ্গিও। জীবিত তিন জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছিল জার্মান পুলিশ।
‘ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর’ জঙ্গিদের হাতে নিহত সেই এগারো ইজরায়েলি অ্যাথলিট।
কিন্তু গোটা ঘটনায় অনেক গুলো প্রশ্ন, আপত্তি আর সন্দেহের জায়গা খুঁজে পেয়েছিল ইজরায়েল।
প্রথমত, কড়া নিরাপত্তার ফাঁক গলে কী ভাবে জঙ্গিরা অলিম্পিক ভিলেজে ঢুকতে পারল, সেটা নিয়ে ধন্দে ছিলেন তাঁরা। তাঁদের দ্বিতীয় অভিযোগ অবশ্য সরাসরি তৎকালীন জার্মান সরকারের বিরুদ্ধে। ইজরায়েল মনে করত, তাদের অ্যাথলিটদের প্রাণ বাঁচাতে কার্যত ‘অনীহা’ দেখিয়েছিল জার্মান প্রশাসন। এই উদাসীনতার অভিযোগ এনেছিলেন স্বয়ং ইজরায়েলের গুপ্তচর-সংস্থা ‘মোসাদের’ তৎকালীন প্রধান জাভি জামির। দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী গোল্দা মেয়ার ও বাকি মন্ত্রীদের কাছে তিনি সাফ বলেছিলেন, “আমাদের বা ওদের কোনও পক্ষেরই প্রাণ বাঁচাতে বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেনি জার্মান কতৃর্পক্ষ।” এমনকী একই সঙ্গে তাঁর দাবি, পরেও জঙ্গিদের সম্পর্কে বিশদ তথ্য জানতে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় ছিল জার্মান প্রশাসন। তবে ইজরায়েলের নথিতে কেবলমাত্র জার্মান সেনাকেই দায়ী করা হয়নি পুরো ঘটনাটির জন্য। মিউনিখ হত্যাকাণ্ডের দায় একই সঙ্গে চাপানো হয়েছিল ইজরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর অক্ষমতার উপরও।
এর পরে জার্মানির নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে যখন জার্মানি স্বীকার করে নেয়, আগে থেকে জানলেও ওই হত্যাকাণ্ড হয়তো তাদের পক্ষে থামানো সম্ভব হত না। ইজরায়েলের নথিতে অবশ্য বিষয়টির ব্যাখ্যা অন্য রকম। সেখানে বলা হচ্ছে আগে থেকে জানলেও ওই সন্ত্রাসবাদী হামলা থামাতে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি জার্মানি। এমনকী যে তিন জন জঙ্গিকে ধরা হয়েছিল তাদেরও পরে মুক্তি দিয়ে দেয় র্জামানি।
আগের দিনই জঙ্গি হানায় প্রাণ হারিয়েছিলেন এঁদের সতীর্থরা।
তাঁদের স্মৃতিতে ১৯৭২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মিউনিখ অলিম্পিকের
বিশেষ ‘মার্চপাস্টে’ ইজরায়েলি দল। —ফাইল চিত্র
ইতিহাস বলছে, জঙ্গিরা লুফৎহানসার একটি বিমানকে ছিনতাই করে ওই তিন জন ধৃতের মুক্তি দাবি করেছিল জার্মান সরকারের কাছে। বাধ্য হয়েই জার্মানি মুক্তি দেয় তিন জঙ্গিকে।
তবে একটি সূত্র দাবি করে, মিউনিখ-হত্যাকাণ্ডের পরেও গোপনে জার্মানি যোগাযোগ রেখেছিল ওই জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে। এমনকী তলে তলে মদতও দিচ্ছিল তাদের। তার মধ্যেই লুফৎহানসার এই বিমান ছিনতাই ও তিন জঙ্গির মুক্তি ইজরায়েলের মনে জার্মানির বিরুদ্ধে সন্দেহ আরও জোরালো করে।
পরে বেইরুট আক্রমণ করে ও তিন প্যালেস্তাইনি জঙ্গিকে হত্যা করে ইজরায়েল অবশ্য মিউনিখ-হত্যাকাণ্ডের ‘প্রতিশোধ’ নিয়ে নিয়েছিল। তা সত্ত্বেও জার্মানির বিরুদ্ধে সন্দেহের কাঁটাটা কিন্তু থেকেই গিয়েছিল।
তাঁদের চল্লিশ বছরের পুরনো সেই গোপন নথি তাই ইংরেজিতে অনুবাদ করে জার্মানিতে পাঠিয়ে দিয়েছেন ইজরায়েল কর্তৃপক্ষ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.