খেলনা চুরির অভিযোগে বকাবকি করা হয়েছিল স্কুলে। ডেকে আনতে বলা হয়েছিল অভিভাবককে। আর তাতেই ভয় পেয়ে বাড়ি না ফিরে রাতভর পরিত্যক্ত ঘরে ঘুমিয়ে কাটিয়েছে তারা। শুক্রবার সকালে পূর্বস্থলীর মাধাইপুর গ্রাম থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার করার পরে এমনই দাবি করেছে পঞ্চম শ্রেণির দুই ছাত্র।
জাহান্নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই দুই ছাত্রের নাম কৌশিক বণিক ও রাকেশ দেবনাথ। তাদের বাড়ি সুলুন্টু এলাকায়। বৃহস্পতিবার দু’জনই প্রতি দিনের মতো স্কুলে গিয়েছিল। কিন্তু বাড়ি ফেরেনি। বাড়ির লোকজন খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ ছুটির পরে দু’জনেই স্কুল থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। সন্ধ্যা নেমে গেলেও তারা বাড়ি না ফেরায় অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা বাড়ে। পূর্বস্থলী থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন তাঁরা। শুক্রবার সকালে নানা এলাকায় মাইকে করে দুই ছাত্র নিখোঁজ হওয়ার কথা প্রচারও করা হয়। |
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সকাল ৮টা নাগাদ মাধাইপুর গ্রামে প্রচারের গাড়ি পেরিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই কয়েক জন বাসিন্দা দেখেন, কাঁধে স্কুলের ব্যাগ নিয়ে ঘোরাফেরা করছে দুই ছাত্র। তাঁরা এগিয়ে গেলে দু’জনে ছুটে পালানোর চেষ্টা করে। বাসিন্দারা অবশ্য ধরে ফেলেন। তাদের নিয়ে যাওয়া হয় জাহান্নগর পঞ্চায়েত অফিসে। সেখান থেকেই দুই ছাত্রকে বাড়ির লোকজনের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
পঞ্চায়েত অফিসেই দুই ছাত্র জানায়, কেন তারা বাড়ি ফেরেনি। তারা জানায়, মনসা পুজো উপলক্ষে কয়েক দিন ধরে স্কুলের কাছে একটি মেলা চলছে। বৃহস্পতিবার মেলার এক দোকানদার স্কুলে গিয়ে অভিযোগ জানান, তাঁর দোকান থেকে খেলনা চুরি করেছে ছ’জন ছাত্র। অভিযুক্তদের তালিকায় ছিল কৌশিক ও রাকেশের নামও। তাদের দাবি, এর পরেই স্কুলের এক শিক্ষক তাদের ভর্ৎসনা করে। পরের দিন অভিভাবকদের স্কুলে ডেকে আনতেও বলে। তা শোনার পরেই তারা এ দিন ভয়ে বাড়ি না ফেরার সিদ্ধান্ত নেয় বলে দাবি দুই খুদে পড়ুয়ার।
তারা জানায়, স্কুল থেকে বেরিয়ে মুড়িগঙ্গার পাড় ধরে হেঁটে তারা পৌঁছয় নবপল্লি এলাকায়। সেখানে একটি টিন ও অ্যাসবেস্টসের তৈরি ঘর দেখতে পায় তারা। কৌশিকের কথায়, “অন্ধকার ওই ঘরে ঢুকে আমরা ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুম ভাঙতে দেখি, সকাল হয়ে গিয়েছে। তার পরে ঘর থেকে বেরিয়ে হাঁটা লাগাই।” রাকেশ বলে, “ভেবেছিলাম, স্কুল থেকে ডেকে পাঠিয়েছে জানলে বাবা বকাবকি করবে। তাই পালানোর সিদ্ধান্ত নিই।” তবে দোকান থেকে খেলনা চুরির কথা অস্বীকার করে তারা।
সারা রাত উৎকণ্ঠার পরে ছেলেরা বাড়ি ফেরায় খুশি দুই পরিবারই। রাকেশের বাবা রঞ্জিতবাবু বলেন, “ছেলে খারাপ কাজ কিছু করলে বকাবকি করি। কিন্তু তার ভয়ে এ ভাবে ও পালিয়ে যেতে পারে, কখনও ভাবিনি।” কৌশিকের পিসি দিপালী বণিক বলেন, “রাত যত গড়িয়েছে, আমরা তত ভেঙে পড়েছি। এ ভাবে ওরা নির্জন পরিত্যক্ত ঘরে রাত কাটাল কী করে, সেটা ভেবেই অবাক হচ্ছি।” জাহান্নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ব্রজদুলাল বন্ধু অবশ্য বকাবকি বা অভিভাবককে ডেকে পাঠানোর কথা মানতে চাননি। তিনি বলেন, “দুই ছাত্র নিখোঁজ ছিল শুনেছি। কিন্তু স্কুলে কোনও রকম চাপ সৃষ্টির ঘটনা ঘটেনি।” স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক আসরফ আলি খান অবশ্য বলেন, “এক দোকান মালিকের অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েক জন ছাত্রকে বকাঝকা করা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে এই স্কুলে পড়ুয়ারা খোলামেলা পরিবেশেই পড়াশোনা করে। এ ক্ষেত্রে ঠিক কী ঘটেছে, তা জানতে বৈঠক ডাকা হতে পারে।” |